দীর্ঘদিন পর্যটকহীন ঝিমিয়ে থাকা কক্সবাজার আবারও সরব হয়ে উঠেছে। বড়দিনসহ টানা তিন দিনের ছুটিতে পর্যটকের পদভারে মুখরিত কক্সবাজার নগরী। সাগর তীরে আনন্দে মেতেছেন ভ্রমণপিপাসুরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে সকাল থেকে পর্যটকরা ভিড় করছেন। ভিড় রয়েছে হোটেল-মোটেলের অলিগলিতেও। বাস টার্মিনাল বাইপাস সড়ক, কলাতলী ডলফিন মোড়, হোটেল-মোটেল জোন, লাবণী, শৈবাল সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে আবাসিক হোটেলগুলোতে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও পরিবহনে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে দ্বিগুণ। এতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা।
পুলিশ ও জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, পর্যটকদের অভিযোগ প্রমাণিত হলে হোটেল, মোটেল ও রেস্টুরেন্ট মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, কক্সবাজারে সাধারণ হোটেল, গেস্ট হাউসগুলোতে রুম প্রতি ভাড়া নেওয়া হয় ১ থেকে ২ হাজার টাকা। এখন সেই রুমগুলোর ভাড়া ৪ থেকে ১০ হাজার টাকা নিচ্ছেন হোটেল মালিকরা।
কলাতলী মোড় থেকে ইজিবাইক (টমটম) করে শহরে প্রবেশ কিংবা সৈকতের যে কোনো পয়েন্টে যেতে স্বাভাবিক ভাড়া ১৫ টাকা। কিন্তু এখন সেই ভাড়া ১০০ থেকে ২০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। ঠিক একইভাবে অটোরিকশা, সিনএজি চালিত রিকশাগুলো ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করছে। খাবারের দোকান ও রেস্টুরেন্টগুলোতেও অস্বাভাবিক দাম নিচ্ছে বলে জানা যায়।
ভোলা থেকে বেড়াতে আসা রায়হান রাফি বলেন, পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে তদারকি নেই বললেই চলে। একটু রাস্তা যেতে ইজিবাইকে দিতে হয় ১০০ টাকা। দলবদ্ধ হলে পুরো গাড়ি নেওয়া যায়, কিন্তু দুজন বা সিঙ্গেল হলেও রিজার্ভ ছাড়া যাত্রী তুলেই না।
সিরাজগঞ্জ থেকে সপরিবারে আগত নাছির উদ্দিন বলেন, প্রতি বছর কক্সবাজারে আসি। তবে করোনার কারণে গত দুই বছর আসা হয়নি। এখন এসে দেখছি রুম, পরিবহন এবং খাবারের দাম আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। এটা এক প্রকার হয়রাণির মতোও মনে হয়েছে আমার কাছে।
ঢাকার মিরপুর থেকে কয়েকজন বন্ধু মিলে কক্সবাজারে ঘুরতে এসেছেন। তাদের একজন অনিক। তিনি বলেন, রুম ভাড়া বেশি হতে পারে। কিন্তু এখানে পরিবহন এবং খাবারের দামও বেশি নেওয়া হচ্ছে। টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় আমাদের ফিরে যেতে হচ্ছে। আমাদের এখানে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকার কথা ছিল। কিন্তু ২৫ ডিসেম্বর ফিরে যেতে হচ্ছে।
ঢাকা থেকে পাহাড় ও সাগর দেখতে বেরিয়েছেন পর্যটক ফরহাদ। তিনি বান্দরবান ঘুরে এসেছেন কক্সবাজারে। রবিবার তার সঙ্গে কথা হয় কক্সবাজারের সুগন্ধা পয়েন্টে। তিনি বলেন, চার দিন আগে বান্দরবান থাকতে কক্সবাজারের কয়েকটা হোটেলে অনলাইনে বুকিংয়ের জন্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনো হোটেলই পাইনি। শেষ পর্যন্ত কক্সবাজার হিলটনে রুম পেয়েছি, তবে এক রুম এক রাতের জন্য ছয় হাজার টাকা দিতে হয়েছে।
সুগন্ধা পয়েন্টে কথা হয় ঢাকা থেকে আসা নন্দিতা ইয়াছমিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখানে প্রচণ্ড ঠান্ডা। তারপরও টানা ছুটিতে কক্সবাজার আসলাম বাচ্চাদের নিয়ে একটু ঘুরে বেড়ানোর জন্য। খুব ভালো লাগছে। সমুদ্র যেন মন ও মনন জুড়িয়ে দিচ্ছে।
খাবারের দাম বেশি রাখা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে সুগন্ধা পয়েন্টের একাধিক রেস্টুরেন্টের ম্যানাজার বলেন, আমরা অতিরিক্ত দাম রাখি না। আমাদের ব্যাপারে কেউ দাম বেশি রাখার অভিযোগ তুলতে পারবে না। বড় রেস্টুরেন্ট যেগুলো আছে সেগুলোতে বেশি দাম রাখতে পারে। কিন্তু আমাদের এখানে সীমিত।
ঝাউবন রেস্টুরেন্টের মালিক মোহাম্মদ আলী বলেন, বাড়তি দাম রাখার সুযোগ নেই। আমরা মেন্যুর বাইরে দাম রাখি না। ৩/৪ জন এসেও ৮০০ টাকার মধ্যে খেয়ে যেতে পারেন আমাদের রেস্টুরেন্ট থেকে।
ইজিবাইক (টমটম), অটোরিকশা ও সিএনজির বেশ কয়েকজন চালক বলেন, পর্যটকের ভিড়ে দীর্ঘক্ষণ গাড়ির লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সেজন্য আগের ভাড়ার মূল্য থেকে কিছু টাকা বেশি চেয়ে নিচ্ছি।
হোটেল-মোটেল মালিক সমিতি সংগঠনের সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ভরা মৌসুমে হোটেলের রুম ভাড়া একটু বেশি। তবে যে হোটেল মালিকরা মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন তাদের বিরুদ্ধে আমরা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করবো।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের এসপি জিল্লুর রহমান বলেন, আগত পর্যটকদের হয়রানি করা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। যেখানেই অভিযোগ পাওয়া যাবে, সেখানে গিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কক্সবাজার পর্যটন সেলের ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ বলেন, পর্যটকরা যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য হোটেল ও রেস্টুরেন্টে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে পর্যটকদের কোনো ধরনের অভিযোগ থাকলে জেলা প্রশাসনের তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্রে জানানোর জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
নয়া শতাব্দী/আরআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ