ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ঘুরে আসুন রঙের স্বর্গ নদী!

প্রকাশনার সময়: ২৩ ডিসেম্বর ২০২২, ১৬:৩৭

কানো ক্রিসটালস কলম্বিয়ার একটি নদীর নাম। নদীটিকে ইংরেজিতে Crystal Spout বলা হয়। কলম্বিয়ায় এই নদীকে ‘River of Five Colors’ অর্থাৎ পাঁচ রঙের নদী বলা হয়। এ যেন ‘স্বর্গ থেকে নেমে আসা নদী।’ এটাকে তরল রংধনুর নদী ও পৃথিবীর সবচেয়ে রঙিন নদীও বলা হয়।

এটা শুধু একটি নদী নয়, এ যেন রংধনুর রঙের বাহার। মনে হয়, নানা রঙের মেলা বসেছে।

এ নদীকে অনেকে রঙের স্বর্গ বলে থাকেন। নদীটি পাঁচ দর্শনীয় রঙে রঙিন। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর আর সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ। মনে হয় যেন, সৃষ্টিকর্তা তার নিপুণ হাতে পৃথিবীর এক কোণে রং ঢেলে নদীটিকে সাজিয়েছেন। এই রেইনবো নদীর বৈশিষ্ট্য হলো, বছরের একেক সময় একেক রকম জীব ও উদ্ভিদের জন্মের ফলে নদীটিও একেক রং ধারণ করে। শুধু তাই নয়, একই সঙ্গে একটি নয়, কয়েকটি রং নিয়ে চলে নদীটির পানিতে রঙের খেলা। এর আকর্ষণীয় রঙের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর নদীও বলা হয়।

জুলাই মাসের শেষ থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত নদীর তলায় বিছানো থাকে সবুজ, হলুদ, নীল, কালো এবং বিশেষ করে লাল রঙের ম্যাকারেনিয়া ক্লাভিগেরা নামের উদ্ভিদ। বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর নদী ‘ক্যানো ক্রিসটালস’ প্রাণিজগৎ এবং উদ্ভিদকুল; সেরানিয়াডি লা মেকারেনিয়া তিনটি বড় বাস্তুতন্ত্র সীমান্তে অবস্থিত, এখানে ৪২০ প্রজাতির পাখি, ১০ প্রজাতির উভচর, ৪৩ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী আছে। এখানে যখন পানির লেভেল ও স্রোত উভয়ই কমে যায় তখন পানিতে স্থানীয় একপ্রকার জলজ উদ্ভিদ জন্মে। স্থানীয়ভাবে এর নাম ম্যাকারেনিয়া ক্লাভিগেরা। গাঢ় গোলাপি রঙের এই উদ্ভিদটি নদীর অন্যান্য উদ্ভিদকে সূর্যরশ্মি থেকে রক্ষা করে। এই উদ্ভিদই এই নদীর প্রধান আকর্ষণ। উদ্ভিদ আবার বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। নদীতে যে পাঁচটি রং দেখা যায় তা এই উদ্ভিদের কারণেই। আর এই উদ্ভিদের কারণেই ক্যানো ক্রিসটালসকে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর নদী বলা হয়।

ক্যানো ক্রিসটালস নামক নদীটি পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে ১০০ কিলোমিটার বয়ে গেছে। বছরের বেশির ভাগ সময় পাহাড়ি নদীর মতো ধূসর পাথরের তলদেশ, শান্ত পানি ও পরিষ্কার স্রোত থাকে। বছরের অন্য সময় নদীটি স্বাভাবিক থাকলেও শুষ্ক মৌসুম শেষে বর্ষা মৌসুমে (জুলাই-নভেম্বর) পাঁচটি রঙে রঙিন হয়ে ওঠে।

এ সময় নদীর তলদেশে লাল লতা-গুল্মের মতো তরল পদার্থ, স্রোতের সঙ্গে দুলতে থাকে। কিছু পাথরের গায়ে জমে থাকা সবুজ শ্যাওলার আবরণ, কালচে পাথরের রং, হলুদ বালু ও ঝিলমিল স্বচ্ছ পানির নীলাভ আভা (নীল রং) নদীর সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়। যেখানে স্রোত বেশি সেখানে লাল রঙের গুল্ম জাতীয় পদার্থটি পাথরের গায়ে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

তরল রংধনুর এই নদীটি প্রকৃতির গুপ্তধনে সমৃদ্ধ। তার সঙ্গে কিছু পাথরের গায়ে জমে থাকা সবুজ শ্যাওলার আভরণ, কালচে পাথরের রং, হলুদ বালু ও ঝিলমিল স্বচ্ছ পানির নীলাভ আভা- যা স্বর্গীয় সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে।

নদীর যেখানে স্রোত বেশি সেখানে লাল রঙের গুল্ম জাতীয় পদার্থ পাথরের গায়ে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। নদীর তলদেশে ও পাথরের গায়ে জন্মে সবুজ গুল্ম ও শ্যাওলা।

এখানকার পানি এতো বেশি স্বচ্ছ যে তার রং নীলচে মনে হয়। বালুগুলো হলুদ রঙের আর ১২০০ মিলিয়ন বছরের পুরনো পাথরগুলো ধূসর রং ছেড়ে কালচে রং ধারণ করেছে। যা স্বচ্ছ পানির ঝিলমিল স্রোতের নিচে দেখতে অসাধারণ লাগে। যেন নদীর বুকে স্বর্গীয় সৌন্দর্য এসে ধরা দিয়েছে।

ক্যানো ক্রিসটালস কিংবা স্বর্গের নদী যে শুধু পাঁচটি রঙের কারণেই সুন্দর, তা কিন্তু নয়। এ ছাড়াও এখানে রয়েছে ঝরনাধারা, সুইমিং পুলের মতো দেখতে জলাশয় ও গুহা। যা নদীটির সৌন্দর্যে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। পাশাপাশি নদীটিকে করেছে রহস্যময়ী। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো—এই নদীতে মাছ কিংবা অন্য কোনো জলজ প্রাণী নেই। আর এটাই এখানে আসা দর্শনার্থীদের নির্বিঘ্নে সাঁতার কাটা ও নিশ্চিন্ত মনে গোসল করার পরিবেশ দেয়।

আরও একটি অদ্ভুত ব্যাপার হলো—নদীটি কলম্বিয়ার এমন একটি দুর্গম স্থানে, যেখানে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। এক সময় এটি সহজগম্যও ছিল না। তবে এখন আর যাতায়াতে কোনো সমস্যা নেই। টুরিস্ট গাইডও রয়েছে। যারা পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে স্বর্গ থেকে নেমে আসা সেই নদীর কাছে।

তবে বিমান থেকে নেমে নদীর পার্শ্ববর্তী রাস্তা ধরে হেঁটে কিংবা ঘোড়ায় চড়ে পৌঁছাতে হয় ক্যানো ক্রিসটালসের কাছে।

বর্তমানে ক্যানো ক্রিসটালসের পাশে রয়েছে রাতে থাকার ব্যবস্থা। এ ছাড়াও পরিবার-পরিজন নিয়ে বন-বাদাড়ে রান্না-বান্না করে খাওয়ার সুব্যবস্থাও আছে।

ক্যানো ক্রিস্টালস পরিদর্শন করার সবচেয়ে জনপ্রিয় সময় হচ্ছে জুলাইয়ের শেষ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে আর দেরি কেন? বেরিয়ে পড়ুন সৌন্দর্যের তৃষ্ণা মেটাতে। ঘুরে আসুন কলম্বিয়ার সেই স্বর্গীয় নদী কানো ক্রিসটালস থেকে। পৃথিবীর এই অদ্ভুত রঙের নদী দেখে চোখ জুড়িয়ে নিন।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ