ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মার্কিন ডলারের বিপরীতে মিশরীয় পাউন্ড ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে। কয়েকবছর আগেও যেখানে ১ ডলারের বিপরীতে ৮ পাউন্ড পাওয়া যেতো, ২০১৫ সালে তা ১৫ পাউন্ডে চলে যায়। গত কয়েক মাস আগে পাউন্ডের দরপতন হলে ১ ডলারের বিপরীতে ১৮ পাউন্ড আর গত সপ্তাহে আবারও ১৮ শতাংশ বাড়ার ফলে ১ ইউএস ডলারের বিনিময়ে এখন ২৫ পাউন্ড পাওয়া যায়।
যুদ্ধ শুরুর পর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলার শেষ হয়ে যায়৷ সে কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মিশরীয় পাউন্ডের মান অবমূল্যায়ন করতে হয়। এরপর থেকে ক্রমান্বয়ে পাউন্ড দুর্বল হচ্ছে।
মিশরে বিভিন্ন শহরে পোশাক শিল্প কারখানায় কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের দরপতন হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন পোশাক শিল্পে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকসহ স্থানীয়ভাবে ছোট-খাট ব্যবসায় জড়িত ব্যবসায়ীরা।
আশরা রমদান শহরে পোশাক শিল্প কারখানায় কর্মরত জহিরুল ইসলাম বলেন, গত ১২ বছর যাবত এ দেশে কাজ করছি। কিছুদিন আগেও মিশরের স্থানীয় শ্রমিক ও আমাদের বেতনের খুব একটা পার্থক্য ছিল না। ফলে কারখানার মালিকরা বিদেশি শ্রমিক দিয়েই কাজ করতে সাচ্ছন্দ বোধ করতেন।
তিনি বলেন, ডলারের দাম আকাশ চুম্বি হারে বেড়ে যাওয়ার ফলে একজন বিদেশি শ্রমিকের বেতন দিয়ে তিন জন মিশরীয় শ্রমিক রাখতে পারে কারখানার মালিকরা। তা ছাড়াও ১ জন বিদেশি শ্রমিকের ওয়ার্ক পারমিটের জন্য গুণতে হয় বছরে বাড়তি ১ থেকে দেড় হাজার ইউএস ডলার। সঙ্গে আবাসন ও দুপুরের খাবারও। কিন্তু মিশরীয় শ্রমিকদের বেলায় তার প্রয়োজন হয় না।
জানা যায়, মিশরের বিভিন্ন শহরের পোশাক শিল্পে কর্মরত আছে বৈধ অবৈধ মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ হাজার শ্রমিক। কঠোর পরিশ্রম, সময়মতো কাজে যোগদান ও বাড়তি সময় নিয়ে কাজ করার ফলে বাংলাদেশি শ্রমিকদের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে দেশটিতে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে- অন্য জায়গায়। বিভিন্ন কারখানায় একজন বাংলাদেশি শ্রমিক কাজের প্রকার বেধে বেতন পায় মাসে ৩০০ থেকে ৩৫০ মার্কিন ডলার। মিশরীয় মুদ্রায় ৮ থেকে সাড়ে ৮ হাজার পাউন্ড।
অথচ এই বেতনে অনায়াসে দুই থেকে তিনজন মিশরীয় শ্রমিক রাখা যায় বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন কারখানায় কর্মরত বাংলাদেশিরা। তাই বিভিন্ন কারখানা থেকে ডলার সংকট দেখিয়ে বাংলাদেশি শ্রমিক ছাঁটাই করা হচ্ছে। ফলে বেকার হওয়ার আশঙ্কা নিয়ে দিন কাটাচ্ছে হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক।
নয়াশতাব্দী/এফআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ