অভিন্ন মূল্যবোধ ও পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে বাংলাদেশের সঙ্গে মিশরের বন্ধুত্বের দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে বলে উল্লেখ করেন মিশরে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মিস সামিনা নাজ।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) কায়রোর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত অভিজাত পাঁচ তারকা হোটেল সেমিরআমিস ইন্টারকন্টিনেন্টাল-এ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৪ উদযাপন উপলক্ষ্যে একটি বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে মিশর সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন দেশটির পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ড. ইয়াসমিন সালাহ-আল- দীন ফুয়াদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী রাষ্ট্রদূত আহমেদ শাহীন এবং রাষ্ট্রাচার বিষয়ক সহকারী পরররাষ্ট্র মন্ত্রী রাষ্ট্রদূত নাবিল হাবাশি।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- বিভিন্ন দূতাসের রাষ্ট্রদূতবৃন্দ, জাতিসংঘ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানগণ, কূটনীতিকবৃন্দ, মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ, মিসরের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর ঊর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সদস্যবৃন্দ, মিশরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বাংলাদেশী শিক্ষকবৃন্দ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত বাংলাদেশী কর্মকর্তাবৃন্দ, মিশরে প্রসিদ্ধ বাংলাদেশী ব্যবসায়ী, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশী শিক্ষার্থীবৃন্দ ও বাংলাদেশী কমিউনিটির সম্মানিত সদস্যবৃন্দ।
সন্ধ্যা ৬ টা ৩০মিনিটে হোটেলটির ক্লিওপেট্রা হল রুমে প্রায় আড়াইশত অতিথির উপস্থিতিতে দুই দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মিস সামিনা নাজ ও প্রধান অতিথি পরিবশে মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ড. ইয়াসমিন সালাহ-আল- দীন ফুয়াদ।
রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে তার বক্তব্যের শুরুতেই সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। রাষ্ট্রদূত শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন জাতীয় চার নেতা সহ মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সম্ভ্রম হারানো মা-বোনদের; যাদের চরম আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের স্বাধীনতা।
রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ আমাদের স্বাধীনতা লাভে অবদান রাখার জন্য কূটনৈতিক কোরের সম্মানিত সদস্যবৃন্দের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তার বক্তব্যে মিশর এবং বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি অন্যতম প্রথম আরব দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি এবং পরবর্তীতে ওআইসি, জাতিসংঘ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশের সদস্যপদ প্রাপ্তিতে মিশরের ভূমিকার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সামিনা নাজ বাংলাদেশ এবং মিশরের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এবং এই সম্পর্ক জোরদারকরণের জন্য একযোগে কাজ করার বাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক বানিজ্য বৃদ্ধি, পর্যটন সহযোগিতা জোরদারকরণ, মুক্ত বানিজ্যচুক্তি বাস্তবায়ন, শিক্ষা, সংস্কৃতি, কৃষি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্ক উন্নয়েন আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
রাষ্ট্রদূত ১৫ তম ওআইসি সম্মেলনের সাইডলাইনে অনুষ্ঠিত দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের ব্যাপারে আলোকপাত করেন এবং উক্ত বৈঠকে আলোচিত বিষয় সমূহ বাস্তবায়নে কাজ করার আহ্বান জানান।
বক্তব্যের শেষে রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন- আমাদের জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা, দারিদ্র মুক্ত একটি সোনার বাংলাদেশ গড়ার। বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে গত ১৫ বছরে টেকসই উচ্চপ্রবৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ৩৫ তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে স্বীকৃত। আগামী ২০৩৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫ তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিচু আয় ২,৮২৪ মার্কিন ডলার। রাষ্ট্রদূত দেশের তৈরি পোশাক, ওষুধ, সিরামিক ও জাহাজ নির্মাণ শিল্পে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির ব্যাপারে আলোচনা করেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মিশরের পরিবশে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ড. ইয়াসমিন সালাহ আল দীন ফুয়াদ মিসরের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ড. মোস্তফা মাধবৌলির পক্ষে বক্তব্য প্রদান করেন। মন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের এই আয়োজনে শুভেচ্ছা জানিয়ে তার বক্তব্যে, বাংলাদেশের সাথে মিশরের দীর্ঘদিনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। একইসঙ্গে তিনি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দুই দেশের চ্যালেঞ্জ সমূহের কথা তুলে ধরেন। এক্ষেত্রে তিনি পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ এর কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করেন।
প্রধান অথিতির বক্তব্য শেষে রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ প্রধান অথিতি, বিশেষ অথিতি এবং অন্যান্য রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে গ্রুপ ফটো তোলেন ও কেক কাটেন।
অনুষ্ঠানের নেপথ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং পর্যটনের উপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠান শেষে আগত অতিথিবৃন্দ ব্যুফে ডিনার এ অংশগ্রহণ করেন।
গত ২৬ মার্চ দূতাবাস প্রাঙ্গণে বাংলাদেশী কমিউনিটির সম্মানিত সদস্যবৃন্দের উপস্থিতিতে যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সহিত মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২৪ উদযাপন করা হয়।
নয়াশতাব্দী/টিএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ