নীলনদ আর পিরামিডের দেশ মিশরে যথাযোগ্য মর্যাদায় ও উৎসবমুখর পরিবেশে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করলো প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) প্রত্যুষে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনে মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচি সূচিত হয়।
রাষ্ট্রদূত মিস সামিনা নাজ দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে দূতাবাস প্রাঙ্গণে জাতীয় সঙ্গীত সহকারে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে মিসরের রাষ্ট্রপতির শুভেচ্ছা নিয়ে রাষ্ট্রপতির দপ্তরের ‘‘চেম্বার লেইন’’ বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দূতাবাসে সাক্ষাৎ করেন। রাষ্ট্রদূত এসময় উল্লেখ করেন, এটি একটি বিরল সম্মানের বিষয় যে, মিসরের রাষ্ট্রপতি তার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই শুভেচ্ছা পৌঁছে দেবেন বলেও জানান।
পরে দুপুরে দূতাবাসের হল রুমে শিশির কুমারের সঞ্চালনায় পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত এবং স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি ও অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের শহিদ সদস্য, মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদ ও আহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, নির্যাতিতা মা-বোন, জাতীয় চার নেতার রুহের মাগফেরাত এবং দেশের সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষ্যে ঢাকা থেকে পাঠানো রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনান যথাক্রমে দুতাবাসের কাউন্সিলর (শ্রম) মো. ইসমাইল হুসাইন, দূতালয় প্রধান আতাউল হক ও ২য় সচিব শিশির কুমার প্রমুখ।
রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার পর মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আলোচনার শুরুতে অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে নিজের বক্তব্য শুরু করেন। এসময় তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে মহান স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য এবং বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বের কথা তিনি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ও অপরিসীম ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজ স্বাধীন দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারছি।
সামিনা নাজ এসময় কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন জাতীয় চার নেতাসহ মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক-সমর্থক, মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহিদদের। যাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা, যারা দেশ মাতৃকার জন্য জীবন এবং যে সকল মা-বোন সম্ভ্রমহানি ও নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগের কথা।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল ক্ষুধামুক্ত, সুখী, সমৃদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশ- ‘‘সোনার বাংলা’’ গড়ার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যাচ্ছি।
এসময় বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথ ধরে, তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদশের গত ১৫ বছরের অভূতপূর্ব সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি এবং একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে এগিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
সামিনা নাজ বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। আগামী ২০৩৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫তম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে বলে বিশেষজ্ঞ মহল মত প্রকাশ করেন। বর্তমানে আমাদের মাথাপিচু আয় ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার। অর্থনেতিক সমৃদ্ধি ছাড়াও দারিদ্র বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সমস্যা মোকাবিলা, শিশু মৃত্যুর হার কমানোসহ নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন মিসরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বাংলাদেশী শিক্ষক, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত বাংলাদেশী কর্মকর্তা, মিসরে প্রসিদ্ধ বাংলাদেশী ব্যবসায়ী, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা, পেশাজীবী, শ্রমজীবীসহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং দূতাবাসের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা।
অনুষ্ঠান শেষে আমন্ত্রিত অথিতিদের রমজানের পবিত্রতা বজায় রেখে বাঙ্গালি ঐতিহ্যে ইফতার ও ডিনারের ব্যবস্থা করা হয়।
এবার পবিত্র রমজান মাসে স্বাধীনতা দিবস হওয়ায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী মিসরের কায়রোস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান পবিত্র রমজান এবং ঈদ পরবর্তী সময়ে জমকালোভাবে উদযাপন করবে।
নয়াশতাব্দী/এএইচ/এনএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ