মিশরের রাজধানীর নিউ কায়রোস্থ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী কেন্দ্রে ১৫ দিনব্যাপী ৫৫ তম ‘কায়রো আন্তর্জাতিক বইমেলা’ ২০২৪ শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জানুয়ারি) দেশটির প্রধানমন্ত্রী ড. মোস্তফা মাদবউলি আনুষ্ঠানিকভাবে এ মেলার উদ্বোধন করেন।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রী ড. নেভিন কিলানি, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যরা ছাড়াও কায়রো সিটি গভর্নর, সন্মানীত অতিথি নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হিলডা ক্লিমটসডাল, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, লেখক, প্রকাশক ও গণমাধ্যমকর্মীরা।
৮০,০০০ বর্গমিটারেরও বেশি আয়তনের দৃষ্টিনন্দন এই প্রদর্শনী কেন্দ্রে রয়েছে সুউচ্চ চিত্তাকর্ষক পাঁচটি হল। বাইরে রয়েছে বিশাল চত্বর, মনোমুগ্ধকর নানান সাজের পুষ্পোদ্যান ও নানা রঙের আলোয় সজ্জিত পানির ফোয়ারা। যেখানে ৭০টি দেশের ১২০০ এর বেশি প্রকাশনী সংস্থা ও ৫,২৫০ টি প্রদর্শক অংশগ্রহণ করছে।
এবছর প্রাচীন মিসরবিদ সেলিম হাসান এবং শিশু সাহিত্যের অগ্রদূত ইয়াকুব আল-শারুনিকে কায়রো বইমেলার বর্ষসেরা ব্যক্তিত্ব হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বই প্রদর্শনীর পাশাপাশি মেলায় সাড়ে পাঁচশ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে।
মিশরের সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী, এবার সন্মানীত অতিথি দেশ নরওয়ে নিজেদের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি আরব পাঠকদের কাছে তুলে ধরছে ‘জ্ঞান বিনির্মাণের মাধ্যমে আমরা শব্দের সুরক্ষা করব’ প্রতিপাদ্যে।
এই বই মেলার সুবিন্যস্ত স্টলের পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন দেশ, সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরকাড়া প্যাভিলিয়ন। বই বিক্রি ছাড়া ও প্রতিদিন এসব প্যাভিলিয়নে দেশ-বিদেশের প্রখ্যাত ও বরেণ্য ব্যক্তিদের নিয়ে সভা-সেমিনার, শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির নানান বর্ণাঢ্য আয়োজন।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) বই মেলায় গিয়ে দেখা হয় বিখ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সাথে। বিভিন্ন দেশের প্যাভিলিয়নে ঘুরতে ঘুরতে তাদের সঙ্গে কথা হয়।
মেলায় বই কিনতে আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সাইমুম আল-মাহদী বলেন, আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ থেকে ৬ হাজার কিলোমিটার দূরে, নীলনদ, পিড়ামিডের দেশ, মিশরের সাহারা মরুভূমির মাঝে এক অনবদ্য আয়োজন কায়রো আন্তর্জাতিক বই মেলা। প্রতিবছর এ সময়টির অপেক্ষায় আমরা পথ চেয়ে থাকি, অত্যন্ত সুলভ মূল্যে এখান থেকে গ্রন্থ সংগ্রহ করার জন্য। মেলায় বিভিন্ন দেশের স্টল থাকলেও দুঃখের বিষয় বাংলাদেশের কোনো স্টল নেই। বাংলাদেশ সরকার ও মিশরে বাংলাদেশ দূতাবাসকে অনুরোধ আগামীতে বিশ্বের এই বৃহত্তম মেলায় একটি বাংলাদেশি স্টল রাখার জন্য। যেখানে থাকবে লাল সবুজের একটি পতাকা।
আরেক শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেন আজাদ বলেন, আমি মনে করি, বইমেলা শুধুমাত্র বই ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য নয় বরং এটি একটি সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষামূলক মিলন মেলা।
বই কিনতে আসা শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, জ্ঞান পিপাসু জামে আল আযহারের ছাত্ররা এই মূহুর্তগুলোর জন্য চাতক পাখির মতো তাকিয়ে থাকে। কবে শুরু হবে, ঐতিহাসিক সেই আন্তর্জাতিক বই মেলা। ছাত্ররা এখান থেকে সূলভ মূল্যে কিতাব কিনতে পারে। যা তাদেরকে একজন হক্কানী আলেম হয়ে গড়ে উঠার ব্যাপারে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। এবছর আমার ডিপার্টমেন্টের তাফফির, হাদিস রিলেটেড কিছু গ্রন্থ ক্রয় করবো ইনশাল্লাহ।
আরব বিশ্বের প্রাচীন ও বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তর কায়রো আন্তর্জাতিক বই মেলাটি ১৯৬৯ সালে কায়রো শহর প্রতিষ্ঠার ১০০০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে তৎকালীন সংস্কৃতিমন্ত্রী প্রথম উদ্বোধন করেন। কালক্রমে এর পরিধি ও সমৃদ্ধি এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে, বর্তমানে কোনো কোনো সমীক্ষায় একে ফ্রাঙ্কফুট বই মেলার পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বই মেলার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
ইসলামি সাহিত্যের সবচেয়ে বড় বইমেলাটি প্রতি বছর জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ শুরু হয়ে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চলে।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ