বাহরাইনে প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকেরা কর্মক্ষেত্রে নির্যাতন, নিয়ম অনুযায়ী বেতন না পাওয়া, নিয়োগকর্তা কতৃক আইনি হয়রানিসহ এতদিন নানা ধরনের আইনি জটিলতায় ভুগতেন। বাংলাদেশি আইনজীবী না থাকা, স্থানীয় ভাষায় কথা বলতে ও বুঝতে অসুবিধাসহ এ বিষয়ে প্রবাসীদের তেমন কোনো ধারণা না থাকায় অনেকেই এতদিন কোনো আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেননি। এবার প্রবাসীদের এসব সমস্যা সমাধানে বিশেষ পদক্ষেপসহ দারুণ এক সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাহরাইন দূতাবাস।
দূতাবাসের উদ্যোগে ও ওয়েজ আর্নার্স কল্যান বোর্ডের সহযোগিতায় বাহরাইন প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ‘বিনামূল্যে আইনি পরামর্শ প্রদান’ ও বিশেষ হটলাইন সেবা ২৪/৭ কার্যক্রম গেলো বছরের ৫ সেপ্টেম্বরে থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত প্রায় ৩৯০ জন প্রবাসীকে আইনি সেবাপ্রধান করে দূতাবাস।
সেবা পাওয়াদের মধ্যে একজন কুমিল্লার আজিজুল হক। দীর্ঘদিন যাবত বাহরাইনে শ্রমিক হিসাবে বসবাস করছেন তিনি। অভিযোগের ভিত্তিতে কিছুদিন আগে তাকে বাহরাইনে গোয়েন্দা পুলিশ (সিআইডি) আটক করে। পরবর্তীতে তাকে ছেড়ে দিলেও তার অভিযোগ বহাল থাকে। এমন পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী আইনি সেবার জন্য আসলে দূতাবাস কর্তৃক নির্ধারিত আইনজীবীকে দিয়ে কোর্টের মাধ্যমে তার বিষয়টি সমাধান করে দেওয়া হয়।
আজিজুল হক বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, দূতাবাসের সার্বিক সহযোগিতা ও তাদের নিয়োগকৃত আইনজীবীর মাধ্যমে আমার সমস্যাটি সমাধান হয়েছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমি বাংলাদেশ দূতাবাসের এই সেবাকে সাধুবাদ জানাই। ধন্যবাদ বাংলাদেশ দূতাবাস ও সংশ্লিষ্ট সকল কমকর্তা-কর্মচারীকে।
আরেক প্রবাসী রুবেল ইমান। তার বিরুদ্ধে নিয়োগকর্তা কতৃক রানওয়ে অভিযোগ ছিল। তিনি তার বিষয়টি সমাধানের জন্য অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে দূতাবাসে আসেন আইনি সেবার জন্য। পরে দূতাবাসের আইনজীবী কোর্টের মাধ্যমে তার বিষয়টি সমাধান করে।
রুবেল ইমান বলেন, বিষয়টি সমাধান করে দেওয়ায় আমি দূতাবাসের সকলের জন্য দোয়া করি। বর্তমানে আমি ভিসা নবায়ন করতে পেরেছি। ধন্যবাদ বাংলাদেশ দূতাবাসকে। দূতাবাস যেন এই সেবা সকল প্রবাসীর জন্য সর্বদা অব্যাহত রাখেন।
কমিউনিটি নেতা ও বাহরাইন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা বলেন, দীর্ঘদিন কিছু রক্তপিপাসু প্রবাসী বাংলাদেশিদের অজ্ঞাতার সুযোগ নিয়ে নানাভাবে হয়রানি করে তাদেরকে আইনি পরামর্শের নামে লুটে নিয়েছে। রেমিট্যান্স প্রেরণে সর্বোচ্চ ১০ এ থাকলেও দীর্ঘদিন যাবত বঞ্চিত প্রবাসীরা পরিশেষে দূতাবাসের এমন পদক্ষেপে আশার আলো পেয়েছে। যার ফলে এখন বিনামূল্যে আইনি পরামর্শ সেবা পাচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীরা। সে সকল প্রবাসীদের ও কমিউনিটির পক্ষ থেকে আমি দূতাবাসের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।
দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মাহফুজুর রহমান বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের আইনি সেবা এবং সঠিক আইনগত পরামর্শ প্রদানের উদ্দেশে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে মঙ্গলবার সকাল ১১ থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দূতাবাস প্রাঙ্গনে অভিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে বিনামূল্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্ন আইনগত সমস্যার পরামর্শ দেওয়া হয়। চাহিদার প্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে এই সেবার আওতা বাড়ানো হবে।
এ ছাড়া সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে অফিস চলাকালীন সময়ে দূতাবাসের কর্মকর্তা দ্বারা আইনি পরামর্শ প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আইনি সেবার জন্য বিশেষ হটলাইন চালু রয়েছে।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ