ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

গাজায় সহায়তা পৌঁছে দিতে মিশরে বাংলাদেশি যুবক

প্রকাশনার সময়: ২৬ নভেম্বর ২০২৩, ২০:১০

ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য গাজায় সহায়তা পাঠাতে বাংলাদেশ থেকে মিশরে ছুটে এসেছেন এক যুবক। প্রকৌশলী মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন নামের এ যুবক আমেরিকাভিত্তিক বাংলাদেশি এনজিও ‘আশ’ ফাউন্ডেশনের সভাপতি। মিশরের অন্যতম বৃহৎ এনজিও সংস্থা ‘ইজিপশিয়ান ফুড ব্যাংক’ ও ‘ইজিপশিয়ান ইয়ুথ কাউন্সিল’ এর সঙ্গে যৌথভাবে গাজায় মানবিক সাহায্য পাঠাচ্ছেন তিনি।

মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন জানান, বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে অসহায় দেশটির ছোট ছোট বাচ্চা, শিশুদের ছিন্নভিন্ন নিথর দেহ, অপ্রতুল চিকিৎসা নিয়ে হসপিটালের বেডে রক্তাক্ত শরীর নিয়ে চিৎকার আমাকে বাংলাদেশে থাকতে দেয়নি। শুনেছি, গাজার সাথে একমাত্র সীমান্ত রাফা ক্রসিংয়ের মাধ্যমেই গাজাতে সহযোগিতা পাঠানো যায়। তাই, নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে গত ৫ নভেম্বর ছুটেছি কায়রোতে।

তিনি বলেন, সম্পূর্ণ অপরিচিত এই কায়রোতে এসে প্রথমেই ছুটে গিয়েছিলাম বাংলাদেশ দূতাবাসে। সেখান থেকে কোনো সহযোগিতা না পেয়ে মিশর সরকার অনুমোদিত ইজিপশিয়ান ফুড ব্যাংকের সাথে আমেরিকায় রেজিস্ট্রার্ড আশ ফাউন্ডেশন ইউএসএ ইনক-এর সাথে MoU করে তাদের মাধ্যমে দু'হাজার পরিবারের জন্য খাবার এবং পানি পাঠালাম।

এর আগে, মিশর সরকার অনুমোদিত সংস্থাটির সাথে গাজায় জরুরি সহযোগিতা পাঠাতে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা, যাচাই-বাছাই এরপর দুই দেশের দুই সংস্থার মধ্যে সম্পাদিত করি মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং (MoU)।

ASH Foundation এর সাথে MoU সম্পাদন করা ইজিপশিয়ান ইজিপশিয়ান ফুড ব্যাংক রাফা সীমান্ত ও গাজায় সহযোগিতা পাঠাতে মিশর সরকার অনুমোদিত ৫টি সংস্থার মধ্যে অন্যতম একটি সংস্থা। এর ফলে আমরা ASH Foundation এর ভালোবাসার উপহার (জরুরি খাবার সামগ্রী) রেড ক্রিসেন্ট হয়ে গাজায় অবস্থিত জাতিসংঘের (UNRWA) এর সুনির্দিষ্ট বিতরণ কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি। দু'দেশের অনুমোদন সাপেক্ষে ফিল্ডে সরাসরি স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে আমরা জরুরি ত্রাণগুলো গাজায় পৌঁছে দিচ্ছি।

নাছির উদ্দিন আরও জানান, ইতোমধ্যে ইজিপশিয়ান ইয়ুথ কাউন্সিল নামে আরেকটি মানবিক সংস্থার সাথে কথা বলে তাদের সাথেও MoU করলাম।‌ গাজায় ত্রাণ পাঠাতে মিশর সরকার অনুমোদিত সংস্থার মাধ্যমে অ্যালায়েন্সের লোগো সম্বলিত ট্রাকে করে ত্রাণ পাঠাতে হয়। এর আগে ত্রাণগুলো কায়রোতে ইন্সপেকশন হয়ে সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়। অতঃপর রাফা ক্রসিং এ রেড ক্রিসেন্ট-এর মাধ্যমে গাজাস্থ UNRWA এর বিতরণ পয়েন্টগুলোতে পৌঁছাতে হয়। অবশ্য সীমান্তে ইসরাইলি সেনাবাহিনী ত্রাণগুলো পর্যবেক্ষণ করে অনুমতি দিলেই গাজায় প্রবেশ করানো সম্ভব হয়।‌

তিনি জানান, আমরা ইচ্ছে করলেই যে কোনো সামগ্রী পাঠাতে পারি না। রেড ক্রিসেন্ট-এর চাহিদা পত্র যা ইসরাইল অনুমোদন দিয়েছে শুধুমাত্র এমন সামগ্রীই পাঠাতে পারি।

তিনি আরও জানান, খবর পেলাম গাজায় কাফনের কাপড় সংকট। সকলে খাবার দাবার দিলেও কেউ কাফনের কাপড় দিচ্ছে না। সাথে সাথে বাচ্চাদের মুখছ্ববি নিথর দেহ আবার চোখের সামনে ভেসে উঠলো। সিদ্ধান্ত দিলাম, কাফনের কাপড় পাঠাবো। স্থানীয় সাপ্লাইয়ারের সাথে আমাদের একজন যোগাযোগ করলেন। স্টক সংকট, তিনি দিতে পারছেন না, ছুটলাম বাজারে। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত ছুটাছুটি করে ৫০ জন নারী, ৫০ জন পুরুষ ও ১১০ জন শিশুর জন্য আঁতর, সাবান ইত্যাদি নিয়ে পুরো কাফনের কাপড়ের সেট তৈরি করে এই কাফনের কাপড়সহ দুই হাজার পরিবারের জন্য পানি লরিতে লোড দেওয়া হলো। সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স নিয়ে এসব গাড়ি ছুটছে প্রিয় গাজার উদ্দেশ্যে।

এই কনভয়ের সাথে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ান এক সংস্থার ট্রাক, ইন্দোনেশিয়া ও সিংগাপুরের সহযোগিতা। দেখলাম উনাদের দেশের নিজ নিজ রাষ্ট্রদূতরা ফিল্ডে এসে ত্রাণকর্মীদের উৎসাহিত করতে।

আমরাও চেষ্টা করেছি, লাল সবুজের পতাকাখচিত গেঞ্জি পরে উপহার পাঠানো ট্রাকের সামনে দাঁড়ানো জন্য। কেউ করুক বা না করুক প্রিয় দেশকে আমরাই বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দেখাব, ইনশাআল্লাহ।

নয়াশতাব্দী/এফআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ