নাটোরের গুরুদাসপুরে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে ১৬ শহীদের গণকবর। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল। গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরের ১৮ জন যুবক গাছের ছায়ায় বসে গল্প করছিলেন। এমন সময় হঠাৎ চলে আসে পাকসেনাদের গাড়ি। একসঙ্গে কিছু মানুষের জটলা দেখে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকে।
এতে ঘটনাস্থলেই ১৬ জন যুবক নিহত হন। এরপর তাদের লাশ মাটি চাপা দেওয়া হয়। পরে তাদের বাড়িঘর আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনাটি গুরুদাসপুর পৌরসদরের নাড়ীবাড়ি এলাকায়। ১৬ শহীদের গণকবর জীর্ণশীর্ণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শহীদ পরিবারের উদ্যোগে নির্মিত দুটি স্মৃতিসৌধ। সরকারিভাবে মেলেনি তাদের স্বীকৃতি।
প্রত্যক্ষদর্শী সুনীল কুমার গুহ সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে জানান, একাত্তরের ১৭ এপ্রিল দুপুরে উত্তর নাড়ীবাড়ি এলাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন যুবক। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ ও সুনীল কুমার গুহ। সেদিন যারা শহীদ হয়েছিলেন, তারা হলেন- শীতানাথ হালদার, বলরাম হালদার, নীল রতন সরকার, নবরাম মজুমদার, ডা. মনীন্দ্র নাথ সরকার, দীলিপ কুমার সরকার, সুরেশ চন্দ্র মালাকার, মানিক চন্দ্র মালাকার, বিষ্ণুপদ ঘোষ, সুধীর চন্দ্র হালদার, সুবোধ চন্দ্র হালদার, যদুনাথ কর্মকার, দুখুরাম হালদার, দুলাল মালাকার, গেদু মালাকার ও বাদল চৌধুরী।
পরে শহীদ দিলীপ কুমার সরকারের বাবা সুধীর চন্দ্র সরকার নিজ খরচে তার বীর সন্তানসহ শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেন।
শহীদ বিষ্ণুপদ ঘোষের স্ত্রী সুনীতি ঘোষ জানান, পাকিস্তানি সেনারা তার স্বামীকে হত্যার পর বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। সে সময় তার ছেলে কৃষ্ণপদ ঘোষ ও বলরাম ঘোষ ছোট ছিল। তাদের মুখে খাবার তুলে দিতে অন্যের বাড়িতে কাজ শুরু করেন সুনীতি। বড় ছেলে কৃষ্ণপদ ঘোষ প্রতিবন্ধী। আর ছোট ছেলে বলরাম ঘোষ সাইকেল মেকার। বয়স বেশি হলেও একমুঠো অন্নের জন্য এখনো ক্ষেত-খামারে কাজ করেন তিনি।
১৬ শহীদ পরিবারের একাধিক সদস্যরা জানান, পাকিস্তানি হানাদাররা তাদের স্বজনদের হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি। ঘটনার পর বাড়িঘর আগুনে জ্বালিয়ে দেয়। ওই পরিবারগুলো এখন পথে বসেছে। ওই দিনের ঘটনায় নিহতদের শহীদদের মর্যাদা ও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি স্বজনদের। পরিবারগুলোর সদস্যরা বছরের পর বছর মানবেতর জীবনযাপন করছে।
গুরুদাসপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ফারুক আহম্মেদ জানান, গুরুদাসপুরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নারকীয় হত্যাযজ্ঞে নিহতদের তথ্য নিশ্চিত করে তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করার দাবি করেন।
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শ্রাবনী রায় জানান, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে নিহতদের নামের তালিকা ও গণকবরের বিষয়টি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে অবগত করা হয়েছে। সম্পূর্ণ বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আশা করছি, অল্প সময়ের মধ্যেই বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ সম্ভব হবে।
নয়াশতাব্দী/এফআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ