ডলার সংকটে রিজার্ভে নেতিবাচক প্রভাব। আমদানি ব্যয় রফতানি আয় দিয়ে মেটাতে চেষ্টা করছে সরকার। তবে এতে বড় বাধা বাণিজ্য ঘাটতি। ফলে আমদানি কমিয়ে রিজার্ভ শক্তিশালী করতে সরকারের চেষ্টার কমতি নেই। কিন্তু প্রতিনিয়ত কমছে রফতানি আয়। তাই আমদানি কমিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। এদিকে, ২০২৬ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। তবে এই মর্যাদাপ্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে নতুন কিছু চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়তে হচ্ছে। সব দিক বিবেচনা করে সরকার রফতানি আয় বাড়ানোর প্রাণপণ চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে রোডম্যাপ ফর ওভারকামিং দ্য চ্যালেঞ্জ—বিষয়ক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট (বিএফটিআই)। এই প্রকল্পের আওতায় ১২টি খাত নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। রফতানিতে নানা বৈচিত্র্য আনতে এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে সরকার।
এলডিসিভুক্ত দেশ হিসেবে বিশ্ববাজারে পণ্য প্রবেশের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্তসহ বেশ কিছু সুবিধা পেয়ে আসছে বাংলাদেশ। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়ার পর সেসব সুবিধা আর মিলবে না। এ অবস্থায় বিশেষ করে রফতানি বাণিজ্যে কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই টিকে থাকতে হবে। এমন বাস্তবতায় এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে সরকার। এর অংশ হিসেবে রফতানি খাতে সক্ষমতা বাড়াতে সম্ভাবনাময় ১২ খাত নিয়ে গবেষণার উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট (বিএফটিআই)।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএফটিআইয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘রফতানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে আমরা খাতভিত্তিক গবেষণার কাজ করছি। এসব খাতে কীভাবে রফতানি আয় বাড়ানো যায় সে লক্ষ্যে রোডম্যাপ তৈরি করে সরকারের কাছে জমা দেয়া হবে। এতে বিভিন্ন ধরনের সুপারিশ থাকবে এবং সেই সুপারিশ পর্যাক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।’
জানা যায়, রোডম্যাপ ফর ওভারকামিং দ্য চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বিএফটিআই। এই প্রকল্পের আওতায় ১২টি খাত নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে।
খাতগুলো হলো পোশাক, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, কৃষিপণ্য, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, মৎস্য ও পশুসম্পদ, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, প্লাস্টিক পণ্য, লেদার ও লেদার পণ্য, নন-লেদার ফুটওয়্যার আইটি, পর্যটন, সফটওয়্যার, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি।
এসব খাতে রফতানি কীভাবে আরও বাড়ানো যায় এবং বাধাগুলো কী, তা পর্যালোচনা করতে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিএফটিআই সম্মেলনকক্ষে একটি বৈঠকও হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মাহফুজা আখতার বলেন, ‘এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে সরকারি ও বেসরকারি খাতকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সরকারের পক্ষে একা কোনো কিছু করা সম্ভব নয়। বেসরকারি খাতকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ বেসরকারি খাতই অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। রফতানিমুখী উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে এবং এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পণ্য বহুমুখীকরণ ও বাজার সম্প্রসারণের বিকল্প নেই।’
সম্ভাবনাময় সব খাতের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার পরামর্শ দেন তিনি। মাহফুজা আখতার বলেন, ‘এলডিসি-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সেবা খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সেবা খাত সম্ভাবনাময় হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের অর্থনীতিতে এই খাতের অবদান ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি বলেন, বিশেষ করে পর্যটন, সফটওয়্যার, আইটি এবং নার্সিং-মিডওয়াইফারি খাত থেকে সেবা রফতানির মাধ্যমে বৈশ্বিক মুদ্রা অর্জনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। দরকার হলে এসব খাতকে বেশি সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।’
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি কিছুদিন আগে একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘অর্থনীতি গতিশীল রাখতে রফতানি বৃদ্ধির বিকল্প নেই। সেজন্য আগামী চার বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ১০ হাজার কোটি টাকার পণ্য রফতানি করতে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছি। সেজন্য যেসব চ্যালেঞ্জ আছে, সেগুলো মোকাবিলার জন্য কাজ শুরু করেছি। পাশাপাশি আইসিটি, লেদার, পাট, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংসহ অন্তত ১০টি পণ্য রফতানি বাড়াতে আমরা আলাদা করে উদ্যোগ নিয়েছি।
তিনি জানান, কয়েকটি দেশের সঙ্গে পিটিএ বা এফটিএ অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে। আর যেসব দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি আছে, সেই ব্যবধান কমাতেও আলোচনা চলছে। অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম রায়হান বলেন, রফতানি আয় বাড়ানোর জন্য বিকল্প ব্যবস্থা হতে পারে বাজার বহুমুখী করা এবং রফতানি পণ্যও বহুমুখী করে তোলা। কিন্তু সমস্যা হলো, পণ্যের বহুমুখীকরণ বা বিকল্প বাজার খুঁজে বের করা, এটা তো রাতারাতি করা সম্ভব নয়। এতদিনে এ ক্ষেত্রে সাফল্য খুব বেশি পাওয়া যায়নি। কিন্তু ভিয়েতনামের মতো দেশ এই নীতিতে ভালো সাফল্য পেয়েছে।
নয়াশতাব্দী/এমএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ