ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

রিজার্ভ আরও কমবে

প্রকাশনার সময়: ০৪ নভেম্বর ২০২২, ১১:১৪

ডলার সংকট নিয়ে বেকায়দায় বাংলাদেশ ব্যাংক। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে গিয়ে ডলার বিক্রি এখন বড় সমস্যা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই বিক্রিতে বড় চাপ পড়েছে রিজার্ভে। এ ছাড়া ব্যয় সংকোচনের পরও রিজার্ভের ওপর চাপ বেড়েছে। রিজার্ভ থেকে আগামী সপ্তাহে আরও কমবে ১.৩২ বিলিয়ন ডলার। আগামী ৭ নভেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) পেমেন্ট পরিশোধ করলে দেশের রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়নের কিছুটা বেশি থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আকুর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের আমদানির বিল এসেছে ১.৩২ বিলিয়ন ডলার। যা আগামী ৭ নভেম্বর সোমবার পরিশোধ করা হবে।

বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পরপর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।

বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে ১৭ মিলিয়ন ডলার বিক্রির পর রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫.৭২ বিলিয়ন ডলার। যদিও চলতি অর্থবছরের শুরুতে এর পরিমাণ ছিল ৪১.৮২ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ এর আগস্টে রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার। আর তা আগামী সপ্তাহে কমে ৩৪ বিলিয়নে দাঁড়াবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আমদানিতে নানা শর্তের কারণে আমদানি কমছে। গত জুলাই-আগস্ট মেয়াদে আকুর আমদানির বিল এসেছে ১.৭৫ বিলিয়ন ডলার। যার আগের মে-জুন মেয়াদে ছিল ১.৯৬ বিলিয়ন ডলার।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমরা মনে করছি রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়বে। গত দুই মাসে রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় যেভাবে কমছে যে খুবই শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, গত চার মাসে পাঁচ বিলিয়নের বেশি ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এভাবে আর কত বিক্রি করবে? রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়াতে রেট ছেড়ে দিতে হবে। কঠোরভাবে হুন্ডি বন্ধ করতে হবে। সরকারের যেভাবে হোক আইএমএফের সঙ্গে সমন্বয় করে ঋণটা নেয়া উচিত। তা না হলে আগামী কয়েকমাস এভাবে ডলার বিক্রি করতে করতে রিজার্ভ দাঁড়াবে ২২ বিলিয়ন ডলারে। যা দিয়ে একটি দেশ কোনোভাবেই চলতে পারে না। দেশের ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতির মধ্যে চলতি অর্থবছরের শুরুতে কিছুটা স্বস্তি এনেছে রেমিট্যান্সের প্রবাহ। অর্থবছরের প্রথম দুই মাস (জুলাই-আগস্টে) রেমিট্যান্সের পরিমাণ ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এ দুই মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৪ বিলিয়নের বেশি। তবে গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) কর্তৃক একক রেট আসার পর রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমতির দিকে আছে। সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছে ১.৫৩ বিলিয়ন ডলার। অক্টোবরে রেমিট্যান্স এসেছে ১.৫২ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করবে না। সরকারি আমদানি বাবদ যেগুলো খুবই প্রয়োজন সে দায় মেটাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করবে।

এদিক চলমান ডলার সংকটের মধ্যে গত দুই মাস দেশের রফতানির পরিমাণও কমছে। অক্টোবরে গত বছরের তুলনায় রফতানি আয় কমেছে ৭.৮৫ শতাংশ।

চলতি বছরের অক্টোবরে রফতানি থেকে বাংলাদেশ আয় করেছে ৪.৩৫ বিলিয়ন ডলার, গত বছরের অক্টোবরে দেশের রফতানি আয় ছিল ৪.৭২ বিলিয়ন ডলার। ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সব মিলিয়ে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) রিজার্ভ থেকে ৫.১৪ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ৭.৬৭ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই রিজার্ভ থেকে এক অর্থবছরে এত ডলার বিক্রি করা হয়নি। অন্যদিকে দেশের ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলোর আমদানি এলসি খোলা নিষ্পত্তি কমিয়ে দিয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ব্যবসায়ীদের এলসি ওপেনিং কমেছে ৩১.১৬ শতাংশ। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা এলসি খুলেছে ৫.৭০ বিলিয়ন ডলারের। যা আগের অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ৮.২৮ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এলসি কম খুলেছে ২.৫৮ বিলিয়ন ডলার। জুনে ব্যবসায়ীরা আমদানির জন্য এলসি খুলেছে ৮.৪৪ বিলিয়ন ডলার, সেপ্টেম্বরে এসে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫.৭০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্টে বলছে, চলতি বছরের জুন থেকে টানা এলসি ওপেনিং ও এলসি সেটেলমেন্ট কমছে। এ ছাড়া চলতি বছরের জুনে এলসি সেটেলমেন্টের পরিমাণ ছিল ৭.৭৫ বিলিয়ন ডলার। টানা তিন মাস কমতির ধারা সেপ্টেম্বরেও অব্যাহত রয়েছে। সেপ্টেম্বরে এসে এলসি সেটেলমেন্ট দাঁড়িয়েছে ৬ বিলিয়ন ডলারে। আগস্টের তুলনায় সেটেলমেন্ট কমেছে ১.৩১ বিলিয়ন বা ১৮ শতাংশ।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ