ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সুশীলরা নজরদারিতে

প্রকাশনার সময়: ০১ নভেম্বর ২০২২, ০৮:২৩

রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ দৃশ্যত সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। টিআইবি, সিপিডিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি এখন লাগাতার সরকারের অর্থনৈতিক নীতি কৌশলের তীব্র সমালোচনা করে বক্তব্য দিচ্ছেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস চুপচাপ থাকলেও সরব তার অনুসারীরা। এ কারণে বিএনপিও অনেকটা সুশীলনির্ভর। তারা সরকারবিরোধী আন্দোলনের কৌশল, সরকারকে কতটুকু সমালোচনা করবে, কীভাবে সমালোচনা করবে— সেসব বিষয়ে সুশীলদের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছে। বিশেষ করে সুশীল সমাজের একাংশের সঙ্গে বিএনপির নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠতা সম্প্রতি বেড়েছে।

এরই মধ্যে সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও ব্র্যাকের চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। সম্প্রতি সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা এ ধরনের প্রতিবেদন তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন দফতরে পাঠিয়েছে। ওই প্রতিবেদনের একটি কপি রয়েছে নয়া শতাব্দীর হাতে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেদিন থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হতে শুরু করেছে তখন থেকেই সুশীল সমাজের সঙ্গে বিএনপির ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। সুশীল সমাজ অর্থনৈতিক সংকটের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিএনপি নেতাদের নিয়মিত সরবরাহ করছেন। কোন ভাষায় কীভাবে কথা বলতে হবে ইত্যাদি বিষয়ে তারা পরামর্শ দিচ্ছেন এবং সেই পরামর্শ অনুযায়ী বিএনপি কাজ করছে।

বিএনপি নেতারা মনে করছেন এবারের নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর নজরদারি অনেক বাড়বে। একতরফা নির্বাচন করলে সরকার বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়বে। যার ফলে সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। এ জন্য বিএনপি সুশীল সমাজের মাধ্যমে বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের কঠোর সমালোচনা করাসহ তাদের পরামর্শে ও পশ্চিমা দেশগুলোর সহযোগিতায় নিরপেক্ষ ইসি ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে দলটি সরকারবিরোধী বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে চায়।

এরই অংশ হিসাবে ইতোমধ্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও ব্র্যাকের চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে তারা কী আলাপ করছেন সে বিষয়টি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। তবে ওই বৈঠকের পর থেকে বিএনপির প্রথম ও মধ্যম সারির নেতারাও সরকারবিরোধী নানা ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। এবং আন্দোলনের ওপর জোর দিয়ে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের জন্য ৯ দফা রূপরেখা দিয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের জন্য ৯ দফা খসড়া রূপরেখা চূড়ান্ত করেছে। তারা সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর রূপরেখা পুনরায় চূড়ান্ত করবে এবং যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকারবিরোধী যে বৃহৎ রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার চেষ্টা চলছে এর মূলভিত্তি হচ্ছে এই রূপরেখা। বিএনপি সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম দফা বৈঠকে আওয়ামী লীগের অধীনে জাতীয় নির্বাচন নয়, এ ব্যাপারে নীতিগতভাবে সবাই একমত হয়েছেন। এই ঐকমত্যের ভিত্তিতে এখন আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত করার কাজ শুরু হয়েছে। এ মাসেই সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবার আলোচনা শুরু হবে বলে জানা যায়।

খসড়া রূপরেখায় ৯ দফায় বলা হয়েছে, প্রথমত সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকার, সংসদ বাতিল, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, দুর্নীতি রোধে কমিশন গঠন, গুম হওয়া নেতাকর্মী এবং সাধারণ নাগরিককে ফেরত দিতে হবে ও খালেদা জিয়াসহ রাজনৈতিক নেতাদের মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএনপির বৃহত্তর ঐক্য গড়ার লক্ষ্যে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট এবং ডান ও বামপন্থি ৩৫টি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন। সব দলই এ সরকারের পতন ঘটিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে একমত হয়েছে।

বিএনপি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৃহৎ ঐক্য গড়ে তোলার ব্যাপারে কাজ কাজ করছে। দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পরিপ্রেক্ষিতে যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত করবে বলে জানা যায়। এর মধ্যে বিভিন্ন জেলায় নতুন কমিটি গঠন, সিরিজ বৈঠক, সরকারবিরোধী পেশাজীবীদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক, চলতি বছরের ২৪ মে থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত ১৮টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা, ১০ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন, ২ অক্টোবর থেকে দ্বিতীয় দফায় পুনরায় ২২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা এবং ১২ অক্টোবর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন বিভাগে গণসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

বিএনপির মূল টার্গেট নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ কারণে তারা বিভিন্ন সমাবেশে বিশৃঙ্খলা ঘটিয়ে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত করে দাবি আদায়ের চেষ্টা চালাবে। তারা ইতোমধ্যে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এবং নানা ধরনের কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানে তাদের নেতাকর্মীদের মারমুখী ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে।

এতে দলের নেতাকর্মীদের মনোভাব চাঙ্গা হচ্ছে। বিএনপির চূড়ান্ত আন্দোলনের লক্ষ্যে দল গোছানো, রাজনৈতিক ঐক্য, মানবাধিকার ইস্যুকে সরকারের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর কৌশল হিসেবে কাজে লাগানো হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারকে চাপে রাখতে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বিদেশি দূতাবাসগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও আনুষ্ঠানিক বৈঠক করছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকার টানা ৩ মেয়াদে দেশে অনেক উন্নয়ন করেছেন। এ সময় বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। সম্প্রতি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি কারণে জনমনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। বিএনপি এই ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে ধারাবাহিক কর্মসূচির মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। নানা ধরনের বক্তব্য দিয়ে জনগণকে সরকারের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলছে। তারা ক্ষমতায় আসছে বলে কর্মীদের আশ্বস্ত করছেন।

একই সঙ্গে বিদেশে অবস্থানরত দলের নেতাকর্মীরাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের সরকারবিরোধী অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাতে ইন্ধন দিচ্ছেন দেশে অবস্থানরত কিছু লোকজন। তাদেরও শনাক্ত করা প্রয়োজন। এছাড়া কিছু ফেক আইডি খুলে সেখানে রাষ্ট্রবিরোধী কথাবার্তাও লেখা হচ্ছে। এ ধরনের আইডি শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি বলে গোয়েন্দা সংস্থা মনে করছে।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ