ড. মফিজ চৌধুরী, বাংলাদেশের প্রথম বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদমন্ত্রী তার ‘বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায়’ শীর্ষক বইয়ে বলেছেন, ‘মানি ইজ নো প্রবলেম’- প্রবাদটা সে আমলে কল্পনারও অতীত ছিল। জয়পুরহাটে ১৩০০ ফুট মাটির গভীরে চুনাপাথর এবং জামালগঞ্জে ২০০০ ফুট মাটির গভীরে কয়লা স্তরের সন্ধান জানা ছিল। এইসব প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ আমার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের মধ্যে ছিল। আমি বঙ্গবন্ধুকে এ জন্যে ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি জানিয়েছিলাম, বলেছিলাম, না হলে আমাকে ছুটি দিন।... উত্তরে বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত আবেগপ্রবণ ও বিচলিত হয়েছিলেন।
বলেছিলেন, ডাক্তার সাহেব আপনি ৮০ কোটি টাকা চাচ্ছেন, কোথা থেকে পাব, খাবার কেনার পয়সা নেই, ওষুধ কেনার পয়সা নেই, কোথা থেকে ওই টাকা জোগাড় করব। বঙ্গবন্ধুকে সেদিন অত্যন্ত ভারাক্রান্ত বোধ হয়েছিল। আমি কি তার চোখে অশ্রুকণা দেখেছিলাম।
স্বাধীনতার উষালগ্নে দেশ চরম জ্বালানি তথা তেল সংকটে পড়ে। তেলের জাহাজ কূলে ভিড়েছে। অথচ তেলের মূল্য পরিশোধের অর্থ নেই। এমন বিপদগ্রস্ত জাতিকে উৎসাহ ও উদ্দীপনায় ধরে রাখেন বঙ্গবন্ধু। সাগর সম্পদ তথা তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে গুরুত্ব দেন। কাঁচা তেল আমদানি নীতি ও তরল জ্বালানির সাশ্রয়ী ব্যবহারের বিধিবিধান প্রণয়ন ও অনুসরণ করা হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্পকারখানায় তেলের বদলে গ্যাসের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। সর্বোপরি তেল সাশ্রয়, গ্যাসের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং সাগরের তেল-গ্যাস অনুসন্ধান করা সরকারের কাছে প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে ওঠে।
জ্বালানি তথা খনিজসম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণের ব্যাপারে তখন দেশবাসীর মধ্যে যথেষ্ট উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা দেয়। কোথাও কোনো খনিজসম্পদ পাওয়ার আলামত দেখামাত্রই জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সরকারের নজরে আনে। সংবাদপত্র গুরুত্ব সহকারে সে সংবাদ প্রচার করে। ১৯৭৩ সালের ২২ জুলাই দৈনিক বাংলা পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ‘...একথা সত্য অতীতে বিদেশি বঞ্চনা নীতির দরুন আমরা ব্যর্থ হয়েছি নিজেদের সম্পদ আহরণে। ব্যর্থ হয়েছি তার উৎস আবিষ্কারে। অথচ কেবল আমাদের মাটির ওপরেই সোনা নেই তা তার তলায়ও রয়েছে, সোনার চেয়েও দামি খনিজের অফুরন্ত ভান্ডার। ১৯৫০ দশকে সিলেট-কুমিল্লায় আবিষ্কার হয় গ্যাসের সুবিশাল সঞ্চয়। ওই একই সময়ে জামালগঞ্জে আবিষ্কার হয় কয়লার সুবিস্তীর্ণ খনি। এছাড়া জয়পুরহাট ও সেন্টমার্টিন দ্বীপে চুনাপাথর, চট্টগ্রাম ও ফরিদপুরে পীট কয়লা এবং আরো লিগনাইট, চীনামাটি ও নানা ধরনের মূল্যবান খনিজের সন্ধান পাওয়া যায়। ব্যাপক অনুসন্ধান চালালে দেশের উত্তরাঞ্চল ও সিলেট-ময়মনসিংহে নিচু এলাকায় এবং সমুদ্র উপকূলে আকরিক লোহা আর তেলেরও সন্ধান পাওয়া যেতে পারে।’ভূ-তত্ত্ব বিভাগ বঙ্গবন্ধুর আমলে যেসব খনিজসম্পদ অনুসন্ধান বা আবিষ্কার করে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য : ক. মুন্সীগঞ্জের মানিকচকে পিট, খ. বরিশালের স্বরূপকাঠিতে মিথেন গ্যাস, গ. দিনাজপুরের বীরগঞ্জ ও খানাসামা থানায় কয়লা ও তেল, ঘ. চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে কয়লা এবং চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের উখিয়া অঞ্চলে লোহার আকর। এসব অনুসন্ধানের কোনো কোনো ক্ষেত্রে সম্পদ পাওয়া যায়নি, আবার কোনো ক্ষেত্রে পাওয়া গেলেও উত্তোলন লাভজনক ছিল না। তবে এসব কার্যক্রমে খনিজসম্পদ অনুসন্ধানে জাতীয় সক্ষমতা উন্নয়ন ও সমৃদ্ধ হয়। এ ক্ষেত্রেও বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতার প্রতিফলন স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়।
১৯৬২ সালে উত্তরবঙ্গে তেল অনুসন্ধান করা হয়। তেল পাওয়া না গেলেও উৎকৃষ্ট মানের কয়লা ও অঢেল চুনাপাথর পাওয়া যায়। এই খনিজসম্পদ জয়পুরহাট-জামালগঞ্জ-ফুলবাড়ী এলাকা থেকে পশ্চিম দিকে বিস্তৃৃত। ভারতের লোহার আকর আমদানি করে জাপান ইস্পাত তৈরি করে। আমাদের দেশে পিগ আয়রন তৈরি হলে দেশে নানা শিল্প বিকশিত হবে। উত্তরবঙ্গ শিল্পে সমৃদ্ধ হয়ে একটি উন্নত শিল্পপ্রধান অঞ্চলে পরিণত হবে। তেমনি চুনাপাথর আহরণে সিমেন্ট কারখানা হবে। পরিপূরক হিসেবে পাটকল হবে। সিমেন্ট প্যাকেজিংয়ের জন্য বস্তা বানানো হবে। ফলে ভারতের রানীগঞ্জ থেকে লোহার আকর এনে জয়পুরহাটের কয়লা দ্বারা শোধন করে পিগ-আয়রন তৈরি হবে- এমন সব বিবেচনায় ১৯৭২-৭৩ সালেই একটি পরিকল্পনা তৈরি হয়। কিন্তু তার পরিণতি কারো জানা নেই।
বাখরাগঞ্জ থেকে গ্যাস নিয়ে তখন চট্টগ্রামে ইউরিয়া সার প্রস্তুত করার উদ্যোগ নেয়া হয়। বিদেশি সংস্থার সাহায্য পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চলে। উৎপাদিত সার ভারত, ইন্দোনেশিয়া, বার্মাসহ নানা দেশে রফতানির কথা ছিল। কিন্তু মাত্র ১২০ কোটি টাকার অভাবে সে উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি। অথচ আমদানির তালিকায় ভোগ্য পণ্য ও প্রসাধনী দ্রব্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অন্তর্ভুক্ত হয়। তামাক ও পাইপ ওই তালিকায় স্থান পায়। পাট প্রতিমন্ত্রীর চাপের মুখে পাট রফতানির এখতিয়ার এককভাবে বিজেইসির কাছে রাখা হয়। ফলে অঙ্গ করপোরেশনগুলো যথা জেএমসি, জেটিসি প্রভৃতিকে পাট রফতানির ক্ষমতা দেয়ার প্রস্তাব নাকচ করা হয়। আমদানিকারকের কাছ থেকে নির্ধারিত রফতানি মূল্য অপেক্ষা ২ পাউন্ড স্টার্লিং হারে ২০ হাজার টন পাট বিক্রির মূল্য এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে কম নেয়া হয়। ১৯৭৩ সালে জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় মধ্যপ্রাচ্য থেকে সরকার সরাসরি তেল ক্রয় করে। সেই ক্রয় প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে দু’জন বিশিষ্ট কর্মকর্তা তেল ক্রয়মূল্য থেকে ব্যারেলপ্রতি ৩ ডলার আত্মসাৎ করেন। এ অভিযোগ বঙ্গবন্ধু নিজে তার আস্থাভাজন কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত করান এবং ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটন করেন। এসব ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ছিল নির্মোহ ও দৃঢ়। ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪ ‘দ্য পিপল’ পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়, তেল অনুসন্ধান অপেক্ষা তেল ক্রয় ব্যাপারটাই মন্ত্রণালয়ের নিকটে বেশি ‘গ্ল্যামারাস’।
বঙ্গোপসাগরের তেল অনুসন্ধানের কাজ রাশিয়া পায়নি। অভিযোগ গেল ব্রেজনেভ অবধি। ঘুরে এলো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কাছে। বঙ্গবন্ধু জ্বালানিমন্ত্রীর কাছ থেকে সব শুনলেন এবং বললেন, ‘যা করলে তেল পাওয়া যাবে, তাই করেন, বাদবাকি আমি সামাল দেব।’ তাতে বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতার প্রতিফলন দেখা যায়। যেদিন সাগরে প্রথম কূপ খনন শুরু হয়, সেদিন ঘটনাক্রমে বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর বাড়িতে ড. মফিজ চৌধুরী ছিলেন। তিনি তখন আর তেল অনুসন্ধানের দায়িত্বে নেই। তবুও তার হাত ধরে বঙ্গবন্ধু এ কৃতিত্বের জন্য তাকেই অভিনন্দন জানান। শত দুঃখ-কষ্টের মধ্যে সেদিন সাগর জয়ের আনন্দ সবার অলক্ষ্যে এই উভয়েই উভয়ের মধ্যে আপন মনে ভাগাভাগি করে নেন।
স্বাধীনতার পরপরই মজুদ গ্যাসের পরিমাণ দ্বিগুণ করে প্রচার করা হয়। তখন বলা হতো গ্যাস কূপ আরো হবে। মজুদ বাড়বে। ফলে অর্থসংকট নিরসনে গ্যাস রফতানির চাপ সৃষ্টি হয়। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নকালে বলা হয়, আগামী ২০০০ সাল অবধি দেশে গ্যাসের সর্বমোট চাহিদা ১৩.৫ টিসিএফ। উদ্বৃত্ত থাকবে ৬.৫ টিসিএফ। তাই গ্যাস রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যাবে। বাস্তবে স্বাধীনতার পর বঙ্গোপসাগরে ১টি এবং সীতাকু-ে ১টি কূপে সীমিত গ্যাস পাওয়া যায়। স্বাধীনতার আগে মজুদ ছিল ১০ টিসিএফ গ্যাস। ১০-২০ টিসিএফ গ্যাস এমন বেশি কিছু নয়।
বিশ্ব তখন জ্বালানি সংকটে। তেলের দাম বেড়েছে। ফলে তেল রফতানিকারক দেশগুলো প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। তেলের সংকট মোকাবিলায় গ্যাস বিকল্প হিসেবে গুরুত্ব পায়। তাই গ্যাস না গ্যাসজাত পণ্য সার ও পেট্রো কেমিক্যালস রফতানি হবে- তা নিয়ে বিতর্ক ওঠে। অবশ্য গ্যাসজাত পণ্য রফতানি হলে বৈদেশিক মুদ্রা বেশি আয় হয়। সরকার গ্যাস রফতানি থেকে সরে আসে। তারপরও দীর্ঘ প্রায় তিন দশক ধরে জনগণকে গ্যাস রফতানির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয় এবং কয়লা রফতানির বিরুদ্ধেও লড়াই করে জীবন দিতে হয়।
সরকার শুরুতেই বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। স্বাধীনতার আগে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৩টি ৬০ মেগাওয়াট জেনারেটর ছিল। ২টি চালু ছিল। অপরটি স্বাধীনতার পর চালু হয় এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন অক্ষুণ্ণ রেখে কাপ্তাই বাঁধের পানি ৬-৯ ইঞ্চি ছেড়ে দেয়া হয়। তাতে লেকে ডুবে যাওয়া বহু এলাকা ভেসে ওঠে এবং আদিবাসীরা অভাবনীয় উপকার পায়। এ জন্য তাদের প্রতিনিধিরা বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাতে ঢাকা আসেন। সরকার সমগ্র পার্বত্য এলাকা বিদ্যুতায়িত করার ঘোষণা দেয়। খাগড়াছড়িতে বিদ্যুৎ লাইন টানা শুরু হয়। পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যুতের অভাব তীব্র ছিল। ফলে ‘ইস্ট-ওয়েস্ট ইন্টারকানেকটর’ নির্মাণে সরকার নজর দেয়। খুলনায় ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে।
আশুগঞ্জে ১২০ মেগাওয়াট, সিদ্ধিরগঞ্জে সম্প্রসারিত ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ দ্রুতগতিতে চলে। ডিজেলের পরিবর্তে সেচে বিদ্যুৎ ব্যবহারের লক্ষ্যে নদীর ধার দিয়ে বৈদ্যুতিক পাম্প বসানোর একটি স্কিম তৈরি হয়। অর্থের অভাবে উদ্যোগটি থেমে যায়। গ্রামে গ্রামে তখনই বিদ্যুতের যাত্রা শুরু হয়। বগুড়ার পাঁচবিবি, জয়পুরহাট, জামালগঞ্জ, আক্কেলপুর, তিলকপুর, মঙ্গলবাড়ী, ধামুরহাট প্রভৃতি প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যৎ যায়। পর্যটন শিল্পের স্বার্থে দুর্গাদহ হয়ে পাহাড়পুরে বিদ্যুৎ লাইন টানা শুরু হয়। অথচ অর্থাভাবে চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তখন বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়নি।
তেল-গ্যাস অনুসন্ধান তখন সর্বাধিক গুরুত্ব পায়। এ ব্যাপারে ভূ-তত্ত্ব জরিপ বিভাগের প্রধান মেসবাহউদ্দিন আহমদ ও খনিজ উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান ড. ফৈয়াজ হুসেন খান এই দুই ভূ-বিজ্ঞানী বিশেষ অবদান রাখেন। মন্ত্রণালয় বঙ্গোপসাগরে তেল অনুসন্ধানের জন্য উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করে। তাতে সাড়া দিয়ে ৪০টি আইওসি দরপ্রস্তাব পেশ করে। এ সময়ে সংবাদপত্রে প্রকাশ পায়, সরকার সাগরের তেল অনুসন্ধানের কাজ এককভাবে জাপানকে দিয়েছে। বিষয়টি বঙ্গবন্ধুর গোচরে আনা হলে তিনি এসব জানেন না বলে জানান। তবে এ ব্যাপারে তিনি সরকারের দু’জন বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেন। ক্যাবিনেট মিটিংয়ে বিষয়টি ওঠে। পক্ষে-বিপক্ষে অভিমত আসে। জ্বালানিমন্ত্রীর অভিমত ছিল, বঙ্গোপসাগরকে ৭-৮টি এলাকায় ভাগ করে একেকটি এলাকা দরপ্রস্তাব যাচাই-বাছাইক্রমে এক এক দেশের আইওসিকে অনুসন্ধানের জন্য বিশেষ শর্তসাপেক্ষে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ইজারা দেয়া যায়। তাতে তেল কোনো এক এলাকায় পাওয়া না গেলেও, অন্য এলাকায় পাওয়া যেতেও পারে। সমগ্র সাগরের তেল প্রাপ্তির ব্যাপারে রায় দেয়ার একক ক্ষমতার অধিকারী কেউ হবে না। বঙ্গবন্ধু এ অভিমতের সঙ্গে একমত হন। অনুসন্ধান কার্যক্রম আগের পরিকল্পনামাফিক চলতে থাকে।
বঙ্গোপসাগরকে ৭ এলাকায় বিভক্ত করা হয়। দরপ্রস্তাবের ভিত্তিতে ৪০টি আইওসির মধ্যে ৬টি আইওসিকে বাছাই করে ৬টি এলাকা পিএসসির আওতায় ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পিএসসির দলিলপত্র তৈরির কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। ফলে পিএসসির খসড়া তৈরিতে অভিজ্ঞ দেশের সহায়তা নেয়া হয়। দরকষাকষিতে মন্ত্রণালয় যথেষ্ট দক্ষতা ও সক্ষমতার পরিচয় দেয়। ফলে উত্তোলিত তেলের ভাগাভাগি ৭৬ : ২৪ (বাংলাদেশ ৭৬% এবং আইওসি ২৪%) অনুপাতে নিশ্চিত হয় এবং দস্তখতী বোনাস পায় প্রতি বর্গমাইলে ১ হাজার ডলার হিসাবে ৩০ মিলিয়ন ডলার। ১৯৭২-৭৩ সালের বাজেটে এ অর্থ অন্তর্ভুক্ত হয়। তেল অনুসন্ধানের কাজ সফলভাবে শুরু হয়।
পরবর্তীকালে জ্বালানি ও খনিজ তথা প্রাকৃতিক সম্পদ বিভাগকে অকস্মাৎ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। যদিও এমন ঘটনা বিরল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তেল অনুসন্ধান কার্যক্রম মূল্যায়নের জন্য ৩ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করে। আইওসিরা বিব্রত হয় এবং কেউ কেউ বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যায়। কেউ তেল আবিষ্কারে ব্যর্থ হয়। একমাত্র আইওসি য়ুনিয়ন কুতুবদিয়া দ্বীপে ছোট একটি গ্যাসফিল্ড আবিষ্কার করে। অনুসন্ধানের শুরুটা ভালো ছিল। শেষটা নয়।
পরিশেষে বলব, যে আদর্শের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধু সরকার জ্বালানি খাত উন্নয়ন, পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করে; আজকের জ্বালানি খাত উন্নয়নে সেই আদর্শ অনুপস্থিত। এই উন্নয়ন অসাধু ব্যবসাবান্ধব এবং জনস্বার্থ তথা জনগণের জ্বালানি অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক। এই নীতি সামঞ্জস্যহীন। বর্তমান সরকারের কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা। আমরা প্রকৃতপক্ষে তাদের কার্যক্রমে সেই উদ্যোগ বা দৃষ্টান্তই দেখতে চাই।
লেখক: শিক্ষাবিদ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ