স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে ‘আরও বেশি খাদ্য ফলান’ শ্লোগানে জনগণকে উৎসাহিত করতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত সবুজ বিপ্লব আন্দোলন ছিল উদ্বৃত্ত খাদ্য উৎপাদনে আজকের সাফল্যের ‘টার্নিং পয়েন্ট’, যা দেশকে প্রধান খাদ্য শস্য উৎপাদনে স্বনির্ভর করে তোলে। এর ফলে বিশ্বে বাংলাদেশ সবজি উৎপাদনে তৃতীয় এবং মাছ উৎপাদনে চতুর্থ স্থানে রয়েছে।
বিশিষ্ট কৃষিবীদগণ মনে করেন, বঙ্গবন্ধুর নীতির কারণেই এই চমকপ্রদ উন্নয়ন লাভ করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কৃষি খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিগত বছরগুলোতে এই নীতি অনুসরণ করেছেন।
স্বাধীনতার পর গত ৪৫ বছরে ধান উৎপাদনসহ দেশের খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ কোটি মেট্রিক টন (এমটি) যা ১৯৭২ সালে ছিল ১.১০ কোটি মেট্রিক টন (এমটি)। এই সময়ে দেশে চাষযোগ্য জমি প্রায় ৩০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের কৃষি ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু যে অবদান রেখেছেন তা অভূতপূর্ব। জাতির পিতা কৃষি খাতের আধুনিকীকরণের জন্য কার্যকর নীতিগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। একই সঙ্গে তিনি কৃষকদের পণ্যের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করার জন্য কিছু দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যাতে তারা সুন্দর জীবন যাপন করতে পারে। তিনি কৃষি ক্ষেত্রে নিয়োজিত সরকারী কর্মকর্তাদের মর্যাদাও উন্নীত করেছিলেন।
১৯৭৫ সালের ২৫ মার্চ অনুষ্ঠিত সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর দেয়া ভাষণের কথা উল্লেখ করে অ্যাডভোকেট এম রহমত আলী ‘বঙ্গবন্ধুর কৃষিভাবনা’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, সমাবেশ থেকে বঙ্গবন্ধু শিক্ষিত লোকদেরকে কৃষিকাজ করার জন্য তাদের গ্রামে যেতে এবং আরও ফসল উৎপাদনে ১৯৭২ সালে ১.১০ কোটি মেট্রিক টন (এমটি) সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদের (বিএআরসি) সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. ওয়াইস কবির উল্লেখ করেছেন যে, বঙ্গবন্ধু তার সবুজ বিপ্লব বাস্তবায়নের আহ্বানে বলেছিলেন, একই জমিতে দ্বিগুণ ফসল উৎপাদন করতে পারলে দেশে কোন খাদ্য সংকট হবে না।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু কৃষকদের উন্নয়ন ও খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কিছু বড় উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
ড. কবির বলেন, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য বঙ্গবন্ধু উন্নত ও স্বল্পসময়ের চাষ পদ্ধতি, মানসম্পন্ন বীজ সরবরাহ, সেচ ও অন্যান্য কৃষি সামগ্রী গ্রহণ করেছেন এবং প্রান্তিক কৃষকদের কৃষি ঋণ অব্যাহতি দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে সার্ফিকেট মামলা প্রত্যাহার করেছেন এবং ভূমিহীন মানুষের মধ্যে ‘খাস’ জমি বিতরণ করেছেন।
শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামালউদ্দিন আহেমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু কৃষি ডিপ্লোমাধারীদের মর্যাদা প্রথম শ্রেণি গেজেটেড কর্মকর্তা হিসেবে উন্নীত করে কৃষিজীবীদের জন্য একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদ (বিএআরসি) গঠন করে কৃষি খাতকেও পুনরুজ্জীবিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন কার্যকর ব্যবস্থা এবং কৃষি খাতে পর্যাপ্ত রাজস্ব বরাদ্দসহ কৃষি খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বিআরআরআই) সাবেক মহাপরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কৃষি ডিপ্লোমাধারীদের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের গ্রেডে উন্নিত করার ফলে কৃষিবিদরা দেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে আরও কাজ করতে অনুপ্রাণিত হয়েছেন।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদের (বিএআরসি) সাবেক সদস্য পরিচালক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বঙ্গবন্ধু যদি দেশে উচ্চ ফলনশীল ধানের জাতের প্রচলন না করতেন, তাহলে বাংলাদেশ কখনোই খাদ্যে স্বনির্ভর হত না।
আলম বলেন, বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০টি নতুন উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে এবং সবজি ও মাছসহ বিভিন্ন কৃষি উৎপাদনে টেকসই অবস্থান নিশ্চিত করেছে। কারণ বঙ্গবন্ধু কৃষি গবেষণা ব্যবস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন এবং দেশে প্রযুক্তি ভিত্তিক আধুনিক কৃষি চালু করেছেন।- বাসস
নয়া শতাব্দী/এসইউ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ