সরকার শিল্পকে লক্ষ্য করে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করছে আর উদ্যোক্তারা শিল্প চালু করার আগেই ক্যাপটিভ বসাচ্ছেন। এতে বিদ্যুৎ খাত সংকটে পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, চাহিদা না থাকায় এখনই অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসে থাকছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র চলুক আর নাই চলুক মাসে ১৮শ’ কোটি টাকার মতো ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। উৎপাদন ক্ষমতা যত বৃদ্ধি পাবে ক্যাপাসিটি চার্জের অঙ্কও সমানতালে বড় হবে। এদিকে সরকারের নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করছে সেগুলোর ভাগ্য কী হবে!

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) সূত্র জানিয়েছে, প্রতি মাসে গড়ে ১২০ থেকে ১৫০ মেগাওয়াট ক্যাপটিভের আবেদন (লাইসেন্সের) জমা পড়ছে। চলতি মাসে শুধু গ্যাসভিত্তিক ২৭টি প্রস্তাবে (নতুন ১৩টি ৩৯ মেগাওয়ার্ট এবং ১৪টির লোডবৃদ্ধি ৬৯ মেগাওয়াট) ১০৮ মেগাওয়াট ক্যাপটিভের আবেদন জমা পড়েছে। আগের মাসে (২২ আগস্ট) কমিশনের সভায় ৫৫টি ক্যাপটিভের লাইসেন্সের আবেদন তোলা হয়। যার মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১৪৯.০৮ মেগাওয়াট।

নতুন ১০৫.৮ মেগাওয়াট, লোড বৃদ্ধি ১০টি ৪৩.১৭ মেগাওয়াট, ৪টির লাইসেন্স নবায়নের আবেদন। বেশকিছু ফেলে রাখা হয়েছে কাগজে ঘাটতি থাকায়। বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, সংকটে হবে কী, অলরেডি শুরু হয়ে গেছে। চাহিদা না থাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে থাকছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসে থাকলেও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে।

শতভাগ বিদ্যুতায়ন হয়েছে এখন বিদ্যুতের ব্যবহার বৃদ্ধির একটি মাত্র পথ খোলা রয়েছে শিল্প। শিল্পায়ন হচ্ছেও, কিন্তু প্রকৃত অর্থে বিদ্যুতের চাহিদায় তারতম্য দেখা যাচ্ছে না। শিল্পে বিদ্যুতের ব্যবহার আশানুরূপ না হওয়ায় অনেকদিন ধরেই শঙ্কার কথা বলা হচ্ছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে গণহারে ক্যাপটিভ বসানো।

বিইআরসির সদস্য (অর্থ, প্রশাসন ও আইন) আবু ফারুক বলেছেন, অনেকেই ক্যাপটিভের জন্য আবেদন নিয়ে আসছে। বিতরণ কোম্পানির সঙ্গে গ্যাস সরবরাহের চুক্তি থাকলে আমরা লাইসেন্স দিচ্ছি। তবে ক্যাপটিভ থেকে বের হয়ে আসা উচিত। ক্যাপটিভের কারণে অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হচ্ছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের মাস্টারপ্ল্যানে বলা হয়েছে, প্রতি বছর ১০ থেকে ১২ শতাংশ হারে চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। করোনা, বিশ্বমন্দাসহ নানা কারণে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন মিলছে না। ২০২২ সালে বিদ্যুতের চাহিদা হওয়ার কথা ছিল ২০ হাজার ৪৪০ মেগাওয়াট।

গত ১৭ এপ্রিল পিক আওয়ারে বাংলাদেশ ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের রেকর্ড করেছে। ওই দিন ২৪ ঘণ্টায় ২৯ কোটি ৯৪ লাখ ৭৬ হাজার ৪৮২ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। অর্থাৎ গড়ে ১২ হাজার ৪৭৮ মেগাওয়াট লোডে চলেছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো।

অর্থাৎ প্রকৃতপক্ষে বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা ১০ থেকে ১৪ হাজারের ঘরে উঠানামা করছে। শীতের সময় এই চাহিদা ৮ থেকে ১০ হাজারে ওঠা-নামা করে। শিল্পায়নের কথা চিন্তা করে ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট ও ২০৪০ সালে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিপিডিবির প্রাক্কলন অনুযায়ী বছরে চাহিদা বাড়ছে ১৫০০ থেকে ১৮০০ মেগাওয়াট। অর্থাৎ মাসে চাহিদা বৃদ্ধির যে প্রাক্কলন করা হয়েছে সেই জায়গা প্রায় পুরোটাই দখল করে নিচ্ছে ক্যাপটিভ। বসে থাকছে বেজড লোড বিদ্যুৎকেন্দ্র, ভবিষ্যতে আরও বেশি বসে থাকার প্রেক্ষাপট তৈরি হচ্ছে।

ভবিষ্যতে ক্যাপাসিটি চার্জের রেশ কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা নিয়ে শঙ্কায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডও। একে অর্থনীতির ভাষায় ‘দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্র’র সঙ্গে তুলনা করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

ক্যাপটিভ প্রশ্নে উদ্যোক্তাদের বক্তব্য হচ্ছে, তারা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না, তাই বাড়তি বিনিয়োগ করে ক্যাপটিভ বসাতে হচ্ছে। কয়েক সেকেন্ডের জন্য লোডশেডিং হলেও বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল নষ্ট হয়ে যায়।

বিপিডিবির বক্তব্য হচ্ছে, ব্যবসায়ীরা আংশিক সত্য বলছেন। ২০১২ সালে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের গ্যারান্টি দিয়ে কিউ শ্রেণি চালু করা হয়েছিল। বিশেষ লাইন দিয়ে তাদের বিদ্যুৎ দেয়ার কথা। একজন উদ্যোক্তাও আবেদন নিয়ে আসেননি। প্রকৃত সত্য হচ্ছে ক্যাপটিভের সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ।

ক্যাপটিভে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের খরচ পড়ছে ৮.৮২ টাকা। শিল্পের জন্য একই পরিমাণ বিদ্যুৎ কিনতে হলে (পিক আওয়ারে) গুনতে হচ্ছে ১০.৬৯ টাকা। অর্থাৎ ইউনিটপ্রতি দরে প্রায় ১.৮৭ টাকার মতো হেরফের হচ্ছে। একটি ৮ মেগাওয়াট ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্র ২৪ ঘণ্টায় ১ লাখ ৯২ হাজার ইউনিট উৎপাদন করছে।

ইউনিটপ্রতি ১.৮৭ টাকা হারে সাশ্রয় হলে দিনে দাঁড়াচ্ছে ৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকার মতো। এভাবে যদি মাস ও বছর হিসেব করা যায় তাহলে সহজেই অনুমান করা যায় ক্যাপটিভের অঙ্ক। এর বাইরে লাইনের বিদ্যুতে রয়েছে ডিমান্ড চার্জ ও অন্যান্য মাশুল। যা ক্যাপটিভে নেই।

ক্যাপটিভের কারণে আরেক দিক দিয়েও লোকসানের শিকার হচ্ছে রাষ্ট্র। ১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দিয়ে ক্যাপটিভে কমবেশি ৪ মেগাওয়াট (৪ হাজার ইউনিট) বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। ওই পরিমাণ গ্যাস দিয়ে কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র কমপক্ষে ৬ মেগাওয়াট ইউনিট বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। থামরুল অনুযায়ী বিদ্যমান ২৮০০ মেগাওয়াট ক্যাপটিভে ৭০০ মিলিয়ন গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। ওই গ্যাস কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা গেলে ৪২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন পাওয়া যেত।

বিইআরসিতে দাখিলকরা পিডিবির এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ক্যাপটিভ পাওয়ারে গ্যাস সরবরাহ করতে গিয়ে বিতরণ কোম্পানির অবহেলার শিকার হচ্ছে দক্ষ কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে একদিকে বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসে থাকছে, অপরদিকে সরকারের ভর্তুকির গ্যাস ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টে অপচয় হচ্ছে।

গ্যাসের অভাবে যখন অর্ধেকের বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ, তখন দেদার ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। ক্যাপটিভে গ্যাস সংযোগকে বিদ্যুৎ খাতের কবর খোঁড়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

এই প্রক্রিয়ার গোর খোদকের ভূমিকায় রয়েছে রাষ্ট্রীয় দুই প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (টিজিটিডিসিএল) ও কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। কঠোরভাবে বিধি নিষেধ আরোপ করা থাকলেও শত শত ক্যাপটিভ গ্যাস সংযোগ দিয়ে যাচ্ছে কোম্পানি দু’টি। কখনও বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে, কখনও বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই। দীর্ঘদিন ধরেই কোম্পানি দু’টির বোর্ড চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিবগণ। যে কারণে অন্যরা মুখ খোলার সাহস দেখান না।

সবচেয়ে বেশি সংযোগ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লাহ ও কর্ণফুলী গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ মাজেদের বিরুদ্ধে। কোনো রকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেই ক্যাপটিভে সংযোগ দিয়ে যাচ্ছেন।

ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টে (শিল্প কারখানায় স্থাপিত বিদ্যুৎ উৎপাদন জেনারেটর) নতুন করে আর গ্যাস সংযোগ না দেয়ার আদেশ দেয়া হয় ২০১৫ সালে আগস্টে। ওই আদেশ বলা হয় ‘ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টের জন্য পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত গ্যাস সংযোগ প্রদান না করার বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

অন্যদিকে ১০ মেগাওয়াটের বেশি ক্যাপটিভে গ্যাস সংযোগ দিতে বিদ্যুৎ বিভাগের পুর্বানুমতি নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই বাধ্যবাধকতা এড়াতে একই শিল্প কারখানায় পৃথক আইডি দিয়ে সংযোগ প্রদানের তথ্য পাওয়া গেছে।

ভালুকা উপজেলার জামিরদিয়ায় অবস্থিত এনআর গ্রুপকে ভিন্ন তিনটি গ্রাহক সংকেত দিয়ে ২৪.৯২ মেগাওয়াট ক্যাপটিভ দেয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে এনআরজি স্পিনিং মিলস ১৬.২৫ মেগাওয়াট, এনআরজি কম্পোজিট ইয়ার্ন ডাইন ৩.৮৭ মেগাওয়াট, এনআরজি নিট কম্পোজিট ৪.৮০ মেগাওয়াট। এনআরজি কম্পোজিট ইয়ার্ন ডাইন ৩.৮৭ মেগাওয়াট থেকে বৃদ্ধি করে ১১.৯০ মেগাওয়াট, এনআরজি নিট কম্পোজিট ৪.৮০ মেগাওয়াট থেকে বর্ধিত করে ৬.২০ মেগাওয়াটের অনুমোদন দিয়েছে তিতাস। এছাড়া একই কম্পাউন্ডে এনআরজি হোমটেক্স নামে আরেকটি নতুন (৭.৭৮ মেগাওয়াট) সংযোগ অনুমোদন দিয়েছে।

আবার কেউ কেউ গোপনে লেনদেনের মাধ্যমে তিতাসের অনুমোদন পেয়ে গেছেন। নারায়ণগঞ্জের চৈতি কম্পোজিট টেক্সটাইল ১২.৯৩ মেগাওয়াট, টঙ্গীতে অবস্থিত স্কাই বিডি লিমিটেড ১২.২৫ মেগাওয়াট, মুন্সীগঞ্জের প্রিমিয়ার সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে ১২.৫১ মেগা ওয়াটের নতুন ক্যাপটিভের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মতিন স্পিনিং মিলের লোড বাড়িয়ে ২২.০৪ মেগাওয়াট করা হয়েছে। পিছিয়ে নেই জালালাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিও। তারা আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানিতে ৯.৫৮ মেগাওয়াটের ক্যাপটিভের অনুমোদন দিয়েছেন।

২০১০-২০১১ সালের দিকে ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকটের কারণে শিল্প কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে ক্যাপটিভ (শিল্প কারখানায় স্থাপিত বিদ্যুৎ উৎপাদন জেনারেটর) বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন দেয়া হয়। এখন সেই চিত্র অনেকটাই বদলে গেছে, সরকার চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছে। বর্তমানে কমবেশি ১৫ হাজার মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তারপরও নতুন নতুন ক্যাপটিভ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র জানিয়েছে প্রায় ২৮০০ মেগাওয়াটের মতো ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ রয়েছে। পেট্রোবাংলার ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২ হাজার ২৫২ এমএমসিএফডি চাহিদার বিপরীতে গত ২৩ সেপ্টেম্বর গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে মাত্র ৯৭৩.৭ এমএমসিএফডি। সরবরাহ ঘাটতি থাকায় বেশিরভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থেকেছে। কোথাও কোথাও আংশিক উৎপাদন হয়েছে।

অন্যদিকে ক্যাপটিভে ৭৩.৭ এমএমসিএফডিগ্যাস সরবরাহ করার তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই হিসাবেও শুভঙ্করের ফাঁকি বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। তারা বলেছেন, থামরুল অনুযায়ী ২৮শ’ মেগাওয়াটে ৭০০এমএমসিএফ গ্যাস ব্যবহার হওয়ার কথা।

হয়তো সব একসঙ্গে চলছে না, এতে কিছুটা তারতম্য হতে পারে, তবে পেট্রোবাংলার ৭৩.৭ এমএমসিএফডি তথ্য বিশ্বাসযোগ্য নয়। লাইনে গ্যাসের চাপ কমে গেলে প্রথম ধাক্কাই বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়, তখনও ক্যাপটিভ সচল থাকে। অর্থাৎ ক্যাপটিভ যত বাড়বে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বসে থাকার হার বৃদ্ধি পাবে।

বিদ্যুৎ বিভাগের উন্নয়ন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেল’র মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসাইন বলেছেন, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো এখনই বন্ধ করা দরকার এগুলোতে গ্যাসের অপচয় হচ্ছে। ক্যাপটিভের গ্যাস বিদ্যুৎকেন্দ্রে দিলে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে প্রস্তুত আছি। আমরা এমনও বলেছি, চুক্তি থাকবে বিতরণ কোম্পানি যদি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে ব্যর্থ হয় তাহলে তারা জরিমানা হবে। তারপরও তারা আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ক্যাপটিভের কারণে দ্বৈত বিনিয়োগ হচ্ছে। ক্যাপটিভ থেকে বের করে আনতে শিল্পে বিদ্যুতের দাম কমানোর চিন্তাভাবনাও চলছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সদস্য (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ধূর্যতী প্রসাদ সেন বলেন, ওরা যদি ওদের মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তাহলে অবশ্যই সমস্যা। আমরা (বিপিডিবি) শুধু জেনারেশন না, এর সঙ্গে সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন তৈরি করছি। এগুলো যদি অব্যবহূত পড়ে থাকে তাহলে তো সমস্যাই। আমি মনে করে ক্যাপটিভ কোনো সমাধান নয়।

তিনি বলেন, এভাবে যদি ক্যাপটিভ দেয়া হয়, তারা যে গ্যাস ব্যবহার করবে। একই গ্যাস দিয়ে দেড়গুণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। আমাদের বিদ্যুতে কোনো সংকট নেই, জ্বালানি পেলে চাহিদার তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। সমস্যা রয়েছে জ্বালানিতে। গ্যাসের অভাবে আমাদের বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখলে সেখানও ক্ষতি। ক্যাপটিভকে আমি সলিউশন মনে করি না। বিদ্যুৎ সেক্টরের জন্য না, কারও জন্যই না। শিল্প মালিকরা যদি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের প্রস্তাব নিয়ে আসেন, তাহলে সেভাবে সিস্টেম গড়ে উঠবে। বিতরণ কোম্পানিরও সক্ষমতা বাড়বে, তখন জনগণও নিরবচ্ছিন্ন পাবে।

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল ক্যাপটিভের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, শিল্প মালিকদের দাবি হচ্ছে তারা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছে না, তাই ক্যাপটিভ নিচ্ছে। ক্যাপটিভের জন্য সময় বেঁধে দিতে হবে। ধীরে ধীরে ক্যাপটিভ ফেজ আউট করতে হবে। না হলে সমস্যা জটিল হবে।