নগরজুড়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলায় সৃষ্টি হচ্ছে নিয়মিত যানজটের। সড়কে যানবাহনের প্রচণ্ড চাপ ও বিভিন্ন সড়কের সংস্কার কাজের কারণে সৃষ্টি হওয়া যানজটে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। রাজধানীতে যানজট নতুন নয়। তবে গত সপ্তাহ থেকে অসহনীয় যানজটে নাখাল নগরবাসী। এতে অফিসগামী মানুষ পড়ছেন বিপাকে।
বুয়েটের এক হিসেবে মতে, যানজটের কারণে ঢাকায় দৈনিক ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ১৩৯ কোটি টাকা। এ হিসেবে বছর শেষে যানজটে ক্ষতির পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এছাড়া শুধু কর্মঘণ্টার ক্ষতি নয়, যানজটের কারণে ক্ষতির অনেক দিক রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় ওই গবেষণায়। তীব্র গরম, বিপুল শব্দ ও বায়ুদূষণের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে যাত্রীদের স্বাস্থ্যগত ক্ষতি ও মানসিক চাপ তৈরি হয়। সেখান থেকে শরীরে নানা রোগও বাসা বাঁধে। এসব রোগের চিকিৎসায় বাড়তি অর্থ ব্যয় হয়।
শারমিন আক্তার। চাকরি করেন মহাখালীর ডিওএইচএস এলাকার একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে। স্বামী সন্তানকে নিয়ে বসবাস করেন সাভার ব্যাংক কলোনিতে। শারমিন আক্তার নয়া শতাব্দীকে বলেন, অফিস সকাল ১০টায়। বাসা থেকে বের হতে হয় সকাল ৬টার দিকে। ৪ ঘণ্টা হাতে নিয়ে বের হয়েও সময় মত অফিসে আসতে পারেন না তিনি।
তিনি আরও বলেন, আমিন বাজারের জ্যাম, গাবতলীর জ্যাম ও বিজয় সরণির সিগন্যালে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। এভাবে চলতে থাকলে বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়বে রাজধানী। ধীর গতিতে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলার কারণে সৃষ্টি হয়েছে যানজটের।
সরেজমিন রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবস হওয়াতে সকাল থেকেই অফিসগামী যাত্রী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের শেষ ভরসা গণপরিবহন। সেজন্য সকাল থেকেই সড়কে গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত যানবাহনের চাপ চোখে পড়ে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড এলাকা ঘুরে দেখা মিলে এমন চিত্র।
এদিকে ট্রাফিক পুলিশরা বলছেন, নগরজুড়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের জন্য যান চলাচলের রাস্তা সংকট হয়ে পড়েছে। এজন্য যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রাজধানীবাসীর যাত্রা নির্ভিগ্নে করতে কাজ করে যাচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশ। গণপরিবহনের তুলনায় ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রাইভেট গাড়ি রাস্তায় বেড়ে গেছে। সংকট থেকে বাঁচতে হলে গণপরিবহণের ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শ দেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে রয়েছে যানজট। এর মধ্যে গুলিস্তান, বাড্ডা, মিরপুর, উত্তরা, বনানী, বিজয় সরণি মোড়, মহাখালী, এয়ারপোর্ট রোড ছিল অন্যতম। এছাড়া সকাল থেকেই ফার্মগেট-শাহবাগ পর্যন্ত সড়কে যানবাহনের চাপ দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তেজগাঁও থেকে মহাখালী পর্যন্ত সড়কেও যানবাহনের প্রচুর চাপ ছিল। মহাখালীতে সাততলা বস্তিবাসী অবস্থান নেয়াতে যানজট বেড়ে যায়। এ যানজট লেগে থাকে সকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত।
রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর থেকে বিমানবন্দরের দূরত্ব সর্বোচ্চ ১ থেকে দেড় কিলোমিটারের বেশি না। যেখানে বাসে যেতে সময় লাগে ১০ থেকে ১৫ মিনিট। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। এই রাস্তা পার হতে সময় লাগে প্রায় ১ থেকে দেড় ঘণ্টা। কোনো কেনো সময় জমিসউদ্দিন থেকে বিমানবন্দর পার হতে সময় লাগে ৪৫-৫০ মিনিট। যেখানে লাগার কথা ৫ মিনিট। এর প্রধান কারণ হিসেবে দেখা যায় বিআরটিএ প্রকল্পের কাজ।
বিজয় সরণির সিগন্যালের জ্যামে থাকা রাকিব নামের এক শিক্ষার্থী নয়া শতাব্দীকে বলেন, রাজধানীতে অনেক জায়গায় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, নির্মাণসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজের কারণে রাস্তা দিয়ে ঠিকমতো গাড়ি চলাচল করতে না পারা, রাস্তার পাশে অবৈধ পার্কিং করে রাখার কারণেও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
দিদারুল ইসলাম নয়া শতাব্দীকে বলেন, তিনি বসবাস করেন আব্দুল্লাহপুর এলাকায়। চাকরি করেন পল্টন এলাকায়। ভরসা একমাত্র গণপরিবহন। বিআরটিএ প্রকল্পের কাজ শুরুর পর থেকে ১ ঘণ্টার আগে কোনো দিনও আব্দুল্লাহপুর—বিমানবন্দর পার হতে পারেননি। এই যানজটে অসহনীয় হয়ে পড়েছে। ৩-৪ ঘণ্টা হাতে নিয়ে বের হয়েও সময় মতো অফিস করতে পারছে না অনেকেই।
রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় গণপরিবহন, সিএনজিচালিত অটোরিকশায়, ব্যক্তিগত যানবাহন ও রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেল। সবার উদ্দেশ্য সময়মতো যেতে হবে কর্মস্থলে। সড়কে যানবাহনের প্রচণ্ড চাপ ও বিভিন্ন সড়কের সংস্কার কাজের কারণে সৃষ্টি হওয়া যানজটে ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজধানীবাসী।
রাজধানীর নতুন বাজার এলাকায় বাসের অপেক্ষায় থাকা কবির হোসেন নামে এক যাত্রী নয়া শতাব্দীকে বলেন, প্রতিদিন ঢাকায় যেভাবে যানজট বাড়ছে তাতে দেখা যায় অল্পদিনে বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়বে রাজধানী।
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ