ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতিতে কমছে চাপ

প্রকাশনার সময়: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:৫৫

সংকট বিশ্বব্যাপী। গ্লোবাল ভিলেজ হিসেবে এর প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও লেগেছে। ডলার সংকট, বাণিজ্য ঘাটতি ও রিজার্ভ অপ্রত্যাশিতভাবে কমে যাওয়াসহ অর্থনৈতিক নানা সংকটে দেশ। তবে এই সংকট থেকে আপাতত কিছুটা মুক্তি মিলল। রেমিট্যান্সের মতো রফতানি আয়েও সুবাতাস বইছে।

সদ্য শেষ হওয়া আগস্ট মাসে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে ৪৬০ কোটি ৭০ লাখ (৪.৬০ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছেন বাংলাদেশের রফতানিকারকরা। এই অঙ্ক গত বছরের আগস্টের চেয়ে ৩৬ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার বেশি ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ।

সব মিলিয়ে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) পণ্য রফতানি থেকে ৮৫৯ কোটি ১৮ লাখ (৮.৫৯ বিলিয়ন) ডলারের বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছে, যা গত ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ দশমিক ৩১ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ৪ দশমিক ৫২ শতাংশ। এ দুই মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বেড়েছে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে তৈরি পোশাক রফতানি থেকে এসেছে ৭১১ কোটি ২৬ লাখ (৭.১১ বিলিয়ন) ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যের চেয়ে বেশি আয় হয়েছে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ।

ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে ৪৬০ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি করেছেন দেশের রফতানিকারকরা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৩০ কোটি ডলার। গত বছরের আগস্টে রফতানি হয়েছিল ৩৩৮ কোটি ৩১ লাখ ডলারের পণ্য। এ হিসাবেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৬ দশমিক ১৮ শতাংশ।

জুলাই মাসে ৩৯৮ কোটি ৪৮ লাখ ২০ হাজার (প্রায় ৪ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রফতানি করছে বাংলাদেশ। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য রফতানি করে ৫২ দশমিক শূন্য আট বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। আগের অর্থবছরের (২০২০-২১) চেয়ে বেশি আয় হয়েছিল ৩৪ দশমিক৩৮ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৮ বিলিয়ন ডলারের রফতানি আয়ের লক্ষ্য ধরেছে সরকার। এই অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই-আগস্টে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স এসেছে ৪১৩ কোটি ৪০ লাখ (৪.১৩ বিলিয়ন) ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ।

দেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্প-মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ চেম্বারের বর্তমান সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘নানা ধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যেও দুই মাসে সার্বিক রফতানিতে ২৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অবশ্যই একটা ভালো দিক। তৈরি পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি ২৬ শতাংশের বেশি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে এই উল্লম্ফন আমাদের আশান্বিত করেছে। এই সংকটের সময় রেমিট্যান্সের পাশাপাশি রফতানি আয় বাড়াটা খুবই দরকার ছিল। এর মধ্য দিয়ে রিজার্ভ বাড়বে। ডলারের বাজারে যে অস্থিরতা চলছে, সেটাও কেটে যাবে বলে আশা করছি।’

আগামী দিনগুলোতেও এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে— আশার কথা শুনিয়ে দেশের অন্যতম শীর্ষ পোশাক উৎপাদন ও রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ইভিন্স গ্রুপের কর্ণধার পারভেজ বলেন, ‘এ কথা ঠিক যে, যুদ্ধের কারণে আমাদের পোশাকের প্রধান বাজার ইউরোপ ও আমেরিকায় মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে গেছে। সে কারণে এখন সেখানকার মানুষদের খাদ্যের জন্য বেশি খরচ করতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে তারা পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু অতিপ্রয়োজনীয় কম দামি পোশাক তাদের কিনতেই হবে। আমরা প্রচুর কম দামি পোশাক রফতানি করি। সে কারণে আমার মনে হয় না যে যুদ্ধের কারণে আমাদের রফতানিতে খুব একটা প্রভাব পড়বে।’

নিট পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ-এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম যুদ্ধের কারণে আমাদের রফতানি আয় বেশ কমে যাবে। কিন্তু তা হয়নি; মোটামুটি ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এটাকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি।’

হাতেম বলেন, ‘আশা করছি, যুদ্ধ পরিস্থিতি তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। আমাদের রফতানির ইতিবাচক ধারাও অব্যাহত থাকবে। বলা হচ্ছে, ইউরোপ-আমেরিকায় মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষজন পোশাক কেনা কমিয়ে দেবে। কিন্তু আমরা অতিপ্রয়োজনীয় পোশাক বেশি রফতানি করি। সে কারণে এ ধরনের পোশাক তাদের কিনতেই হবে।’

মূলত পোশাক রফতানির ওপর ভর করেই জুলাই-আগস্ট সময়ে রফতানি আয়ে উল্লম্ফন হয়েছে। ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই দুই মাসে তৈরি পোশাক রফতানি থেকে আয় হয়েছে ৭ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেশি এসেছে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, জুলাই-আগস্ট সময়ে মোট রফতানি আয়ের মধ্যে ৮২ দশমিক ৭৮ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। যার মধ্যে নিট পোশাক থেকে এসেছে ৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০ দশমিক ১৫ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে বেশি এসেছে প্রায় ৮ শতাংশ।

ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ৩ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। লক্ষ্যে চেয়ে বেশি আয় হয়েছে ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। জুলাই-আগস্ট সময়ে পোশাক খাত থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৬ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার।

এদিকে এই ঊর্ধ্বমুখী মনোভাব বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের প্রধান উৎস রফতানি আয় ও রেমিট্যান্সে এই উল্লম্ফনের মধ্য দিয়ে অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরে আসছে বলে জানিয়ছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা। মূলত তৈরি পোশাক রফতানির ওপর ভর করেই গত অর্থবছরের মতো রফতানি আয়ে সুবাতাস বইছে।

রফতানির মতোই ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে রেমিট্যান্স। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে প্রবাসীরা ২ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। গত অর্থবছরের শুধু এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্স ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি এসেছিল। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই ও আগস্টে প্রবাসীদের পাঠানো ৪১৩ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে এসেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৪৫ কোটি ডলার বা ১২ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি।

ইপিবির তথ্য বলছে, আগস্টে ৭১১ কোটি ২৬ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। এতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি আয় হয়েছে।

এছাড়া চামড়াজাত পণ্যে বিগত অর্থবছরের আগস্টের তুলনায় এবার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ, পাটজাত পণ্যে ২২ দশমিক ৬৭ শতাংশ, সিরামিক পণ্যে ১৮ দশমিক ০৬ শতাংশ, প্লাস্টিকে ৬০ দশমিক ০৯ আর স্পেশালাইজড টেক্সটাইল পণ্যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭৩ দশমিক ১৭ শতাংশ।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ