দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি প্রায় ১৬ মাস। নির্বাচনকে ঘিরে এরই মধ্যে রাজনীতিতে ফিরে এসেছে উত্তাপ। গত সাত দিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো জেলায় হামলার ঘটনা ঘটছে। হামলা করা হচ্ছে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধনের মতো মামুলি কর্মসূচিতে। কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। কোথাও আবার একই জায়গা ও একই সময়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ডাকছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। হামলায় দলীয় অফিসের পাশাপাশি নেতাদের বাড়ি-ঘরে ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানও রক্ষা পাচ্ছে না। এতে দলটির আহত শতশত নেতাকর্মী। উল্টো তাদের বিরুদ্ধেও দেয়া হচ্ছে মামলা। বিএনপির কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলার করছে বলে দাবি মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। সবমিলিয়ে তৃণমূলের রাজনীতি হঠাৎ সংঘাত-সংঘর্ষময় হয়ে উঠছে। দলটির নেতারা বলছেন, তৃণমূলে কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকেই সরকার পরিকল্পিতভাবে বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে, হামলা-মামলা করছে। তবে তারা শন্তিপূর্ণভাবেই সভা সমাবেশ করতে চান। এসব হামলা মামলার ঘটনা সরকারের অপরাজনীতি বলেও মনে করে বিএনপি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, নির্বাচন আগ পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত থাকবে। কারণ দুই দলই মাঠের রাজনীতি নিজেদের দখলে রাখতে চাইবে। ফলে হামলা বাড়তে থাকলে খুনের রাজনীতি ফিরে আসবে। তবে এটা দেশের গণতন্ত্রের জন্য সুখকর হবে না। তাই ক্ষমতাসীনদের দেশের গণতন্ত্রের সাথে মিছিল মিটিং বা বিক্ষোভ সমাবেশের মতো শান্তিপূর্ণ বিরোধীদের ছাড় দেয়ার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এগুলো আমাদের অপরাজনীতির প্রতিফলন। আমরা যদি গণতন্ত্র দাবি করতে চাই তাহলে আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, নাগরিক অধিকার, ভোটাধিকার থাকতে হবে। যেগুলো সংবিধানে বলা আছে। এসবের প্রতি যদি শ্রদ্ধাশীল আচরণ না হয় তাহলেতো আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বলতে পারি না।
বিএনপির সূত্রমতে, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও ভোলার দুই নেতার হত্যার প্রতিবাদে টানা কর্মসূচি নিয়ে জনগণের দোরগোড়ায় মাঠের প্রধান বিরোদী দল বিএনপি। কোথাও পুলিশের বাধা, আওয়ামী লীগ-বিএনপি পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ডাকায় ১৪৪ ধারা জারি করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারপরও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে হামলা-সংঘর্ষ ঢেকানো যাচ্ছে না। গত সাত দিনে এসব হামলার ঘটনায় আহত হয়েছেন ৭৭৫ জন নেতা-কর্মী। মিথ্যা মামলা করা হয়েছে কয়েক হাজার নেতা-কর্মীর নামে। মোট গ্রেপ্তারের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৬০ জনের অধিক। জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং ভোলায় দুই নেতার হত্যার প্রতিবাদে গত ২২ শে আগস্ট থেকে শুরু হবে তৃণমূল পর্যায়ে কর্মসূচি চলবে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
দলটির নেতাদের দাবি, পরিকল্পিতভাবে সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে অহেতুক বাধা দেয়া হয়, হামলা করা হয়। চলতি মাসের শুরুর দিকে সমসাময়িক ইস্যুতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে বিএনপি। এতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। এছাড়া প্রতিদিনই প্রেসক্লাব এবং দলীয় কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন, সভা, সমাবেশ করছে দলটি। এসব কর্মসূচিতে তেমন কোনো বাধার সম্মুখীন হয়নি তারা। তবে তৃণমূলে কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকেই দলটির কর্মসূচিতে বাধা দেয়া হচ্ছে, হামলা মামলা হচ্ছে।
তারা আরো বলছেন, গণভবন ঘেরাও করতে আসলে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের চা খাওয়াবেন ও কর্মসূচি বাধা দেয়া হবে না, কাউকে গ্রেফতার করা হবে না’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যর পরই মুলত মারমুখী অবস্থানে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী। এটাই আওয়ামী লীগের চরিত্র। তারা কথা বলবে একটা, কাজ করবে আরেকটা। তৃণমূলের হামলা-মামলার মধ্যে তা আবারো প্রমাণিত হলো। নেতাদের দাবি, তৃণমূলের কর্মসূচিতে আমরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। কর্মসূচিতে জনগণের সম্পৃক্ততা দেখে আওয়ামী লীগ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। এই সরকার আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা করছে। তাদের চরিত্র যে সন্ত্রাসী চরিত্র সেটা আরো একবার উদ্ভাসিত হয়েছে।
তবে সরকারের এই হামলা-মামলা আর মানবো না। আমরা এই সরকার এবং পুলিশকে মোকাবিলা করব। কারণ আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আমাদের আর পেছানোর জায়গা নেই।
জানা যায়, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। নির্বাচন প্রতিহত করারও হুমকি দিয়েছে তারা। আন্দোলনের মধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করার নানা ছকও কষছে দলটি। নেতাকর্মীদের মাঠে রেখে নানা ইস্যুতে কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে চাঙা করার পরিকল্পনা রয়েছে দলটি। এরই অংশ তৃণমূল পর্যায়ে নানা কর্মসূচি পালন করছে। এসব কর্মসূচিতে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। গত সাত দিনে যশোর, মুন্সীগঞ্জে, টাঙ্গাইল, ফেনী, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, বাগেরহাট, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, ঠাকুরগাঁও, লক্ষ্মীপুর, ময়মনসিংহ, মাগুরা, গাইবান্ধা, বরিশাল, খুলনা, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, রাজশাহী, নোয়াখালী, ভোলা, নাটোর, কুমিল্লা, নড়াইলের বিভিন্ন উপজেলায় বিক্ষোভ সমাবেশে আওয়ামী লীগ ও পুলিশি হামলার ঘটনা ঘটেছে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সারাদেশের বিভিন্ন কর্মসূচিগুলোতে বিএনপির নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছেন। এছাড়া আমরা যে ইস্যুতে কর্মসূচিগুলো পালন করছি সেখানে সাধারণ জনগণও অংশ নিচ্ছে। এখানেই সরকারের ভয়। এই ভয় থেকেই সকারদলীয় লোকেরা বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার প্রধান বলার পরেও আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হচ্ছে। মামলা দেয়া হচ্ছে। এতে করে বোঝা যায় ওইসব এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর কোনো নিয়ন্ত্রণ নাই।
এবিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সারাদেশে এত দিন ধরে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ত্রাস সৃষ্টি করেছে। তারা এখন একটা নতুন মাত্রা যোগ করেছে, নেতা-কর্মীদের বাসাবাড়িতে হামলা শুরু করেছে। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে, দলীয় কার্যালয়ে ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালাচ্ছে, মিথ্যা মামলা দিচ্ছে ও নেতা-কর্মীদের খুন-জখম করছে। প্রকৃতপক্ষে এই আন্দোলনে সম্পূর্ণভাবে বর্তমান অবৈধ সরকার ভীত হয়ে, সন্ত্রস্ত হয়ে আজকে আবার সেই তাদের দমননীতি চালিয়ে যেতে শুরু করেছে।
নয়াশতাব্দী/জেডআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ