ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুর পর ওই পদে কে আসছেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে তোড়জোড়। এই পদে নতুন কে আসছেন তা নিয়েও সর্বত্র চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। ডেপুটি স্পিকার হওয়ার জন্য এরইমধ্যে অনেকেই যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। চলতি আগস্ট মাসের শেষ দিকে নির্বাচন করা হবে জাতীয় সংসদের নতুন ডেপুটি স্পিকার। ওই সময় জানা যাবে কে হতে যাচ্ছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর ডেপুটি। চমক হিসেবে এই পদে আসতে পারেন এক নারীও। তবে সংসদের অর্ধেকেই সংসদ নেতা ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন।

নতুন ডেপুটি স্পিকার হওয়ার দৌড়ে আলোচনায় রয়েছেন একাধিক সংসদ সদস্য। এরমধ্যে আছেন বর্তমান সংসদের সরকারদলীয় হুইপ। আছেন সাবেক চিফ হুইপ। একাদশ সংসদ গঠনের সময় ডেপুটি স্পিকারের আলোচনায় থাকা সংসদ সদস্যের নামও শোনা যাচ্ছে। তবে যত নামই আলোচনায় থাকুক না কেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকারের শূন্যপদটি পূরণের ক্ষেত্রে স্পিকারের পছন্দ এবং সর্বশেষে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর নির্ভর করবে সবকিছু। আওয়ামী লীগের একাধিক সংসদ সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, ডেপুটি স্পিকার পদে সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ; স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু; আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবেক হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলামের নাম নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তারা আরো জানান, এই চারজনের বাইরেও আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান সংসদের সরকারদলীয় হুইপ ও দিনাজপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম এবং সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ওয়াসিকা আয়শা খান। যদি ওয়াসিকা আয়শা ডেপুটি স্পিকার হিসেবে নির্বাচিত হন তাহলে সংসদে আরেক ইতিহাস সৃষ্টি হবে। কারণ এখন সংসদ নেতা, সংসদ উপনেতা, স্পিকার, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা- সবাই নারী। তবে এ বিষয়ে কেউ কথা বলতে রাজি হননি। সংসদের আগামী অধিবেশনে পদটি পূরণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

জাতীয় সংসদ পরিচালনায় স্পিকারের পর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ ডেপুটি স্পিকার। সঙ্গতকারণেই এই পদ পেতে মুখিয়ে আছেন সরকারদলীয় অনেক সংসদ সদস্য। এক্ষেত্রে আলোচনায় ঘুরেফিরে ওপরের এই ৬ জনের নামই সবার আগে সামনে চলে আসছে। তাদের মধ্যে আলোচনায় সবচেয়ে এগিয়ে নওগাঁ-২ আসনের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার। একাদশ সংসদ গঠনের শুরুতে ডেপুটি স্পিকার হিসেবে তার নাম আলোচনায় ছিল। শেষ পর্যন্ত ডেপুটি স্পিকার হয়েছিলেন ফজলে রাব্বী মিয়া। তাই এবারো তিনবারের এই সংসদ সদস্যেকে নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। সব সংসদ সদস্যের নিকট শহীদুজ্জামান সরকার গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তি। পেশায় আইনজীবী হলেও এখন পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ। জাতীয় সংসদে হুইপের দায়িত্বও পালন করেছেন। তাই ডেপুটি স্পিকার পদে তিনি এলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। একাদশ সংসদ গঠনের গঠনের আগে তিনি ছিলেন সবচেয়ে শক্ত ক্যান্ডিডেট। তাই এবার তার সম্ভাবনাই বেশি বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা।

আলোচনায় আছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম। একাদশ জাতীয় সংসদের কয়েকটি অধিবেশনে তিনি স্পিকারের চেয়ারে বসে তিনি একাধিকবার সংসদ পরিচালনা করেছেন। অধিবেশনে প্যানেল সভাপতি হিসেবে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে তিনি সংসদ পরিচালনা করেছেন। তাই ডেপুটি স্পিকার পদে তারও আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তালিকায় রয়েছেন জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ও মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস শহীদ। এর আগে জাতীয় সংসদের হুইপ, চিফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি সরকারি প্রতিশ্রুতিসংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। অভিজ্ঞ এই পার্লামেন্টারিয়ানের সঙ্গে স্পিকারের বোঝাপড়া ভালো। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী যখন প্রথমবার স্পিকার হিসেবে নির্বাচিত হন তখন সংসদের চিফ হুইপ ছিলেন উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ। তার সঙ্গে কাজ করার পূর্ব অভিজ্ঞতাও রয়েছে। ডেপুটি হিসেবে স্পিকারের পছন্দের তালিকায় তার নাম থাকলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ডেপুটি স্পিকার পদে জোরালো আলোচনায় রয়েছেন বর্ষীয়ান পার্লামেন্টারিয়ান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু। এর আগে গত দশম সংসদে এ কমিটির সদস্য ছিলেন। তার আগে নবম সংসদে তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।

এই চারজনের বাইরে আলোচনায় আছেন বর্তমান সংসদের সরকারদলীয় হুইপ ও দিনাজপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম। তিনি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সবচেয়ে আস্থাভাজন এবং তরুণ রাজনীতিবিদ। যেহেতু স্পিকারের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে তাই সহকর্মী হিসেবে তাকেও দেখা যেতে পারে।

চমক হিসেবে ওয়াসিকা আয়শা দুবার সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীও সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি থাকা অবস্থায় প্রথম স্পিকার নির্বাচিত হয়েছিলেন। বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের ব্যুরো অব উইমেন পার্লামেন্টারিয়ানসের সদস্য এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য।

তবে যত আলোচনাই হোক সব কিছুই নির্ভর করছে সংসদ নেতার ওপর। তিনি যাকে মনোনয়ন দিবেন তার কপালেই জুটবে ডেপুটি স্পিকারের পদ। এর সঙ্গে স্পিকারের পছন্দের বিষয়টি থাকবে।

সংসদ সচিবালয় সূত্রমতে, সংসদের পরবর্তী অধিবেশন বসতে পারে ২৮ আগস্ট। সেদিনই ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করা হবে। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের প্রক্রিয়া হচ্ছে: কোনো একজন সংসদ সদস্য ডেপুটি স্পিকার হিসেবে কারো নাম প্রস্তাব করবেন পরে সেই প্রস্তাব অন্য একজন সংসদ সদস্য সমর্থন করবেন। এরপর স্পিকার প্রস্তাবটি সংসদে কণ্ঠভোটে দেবেন। সংসদ অধিবেশনে উপস্থিত সর্বাধিক সংসদ সদস্যের কণ্ঠভোটে প্রস্তাবটি পাস হবে। এরমধ্য দিয়েই নির্বাচিত হবেন নতুন ডেপুটি স্পিকার। এরপর রাষ্ট্রপতির নিকট তিনি শপথ গ্রহণ করবেন।

ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া টানা ৯ মাস মরণব্যাধি ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে গত ২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এর দুই দিন পর ২৫ জুলাই জাতীয় সংসদ সচিবালয় ফজলে রাব্বি মিয়ার আসনটি শূন্য ঘোষণা করে।

নয়াশতাব্দী/জেডআই