পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের কোম্পানি এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স লভ্যাংশ ঘোষণার পরের দিনই ভয়াবহ শেয়ার কারসাজিতে লিপ্ত হয়েছে। নতুন নির্দেশনায় যে কোনো কোম্পানির শেয়ার দর সর্বোচ্চ ২ শতাংশ কমার সুযোগ থাকলেও এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর গত ১৬ জুন সর্বোচ্চ ৯০ শতাংশ কমে ৩ টাকায় লেনদেন হতে দেখা গেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, কোম্পানিটির কয়েক লাখ শেয়ার ৩ টাকায় লেনদেন হয়েছে। এত কম টাকায় কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেনের বিষয়টি নজরে এসেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)। বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছে বলে জানিয়েছে।
ডিএসইর ওয়েবসাইটে কোম্পানিটির লেনদেনের তথ্য থেকে জানা যায়, গত ১৫ এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের ক্লোজিং দর ছিল ২৯ দশমিক ৯০ টাকায়। বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ার দর ৩১ দশমিক ৪০ টাকায় লেনদেন শুরু হয়। এক পর্যায়ে কোম্পানিটির শেয়ার দর ২৬ দশমিক ৯০ টাকা বা ৯০ শতাংশ কমে ৩ টাকায় লেনদেন হয়েছে। তবে দিন শেষে কোম্পানিটির শেয়ার দর ২ দশমিক ২০ টাকা ৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৯০ টাকায়। বর্তমান বাজার দরে ১ কোটি ৩৮ লাখ ৩৪ হাজার ৪৯৮ টাকার শেয়ার ফারইস্ট লাইফ মাত্র ১২ লাখ ৯২ হাজার ৯৪০ টাকায় বিক্রি করে। শেয়ারগুলো ফারইস্ট ইসলামী লাইফের নিজস্ব পোর্টফলিও থেকে ব্যক্তি পোর্টফলিওতে স্থানান্তর হয়েছে। শেয়ার ক্রয় দর ৩০ টাকার বেশি হলেও বিক্রি করেছে ৩ টাকা দরে। ফারইস্ট লাইফ সিকিউরিটিজ বিক্রি করে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের এক নারী গ্রাহকের কাছে। বিমা খাতের এই কোম্পানিটির শেয়ার কারসাজি করে বিপুল পরিমাণ শেয়ার লেনদেন করা হচ্ছে। এসময় কোম্পানিটির ৪ লাখ ৩০ হাজার ৯৮০টি শেয়ার ৩ টাকা দরে লেনদেন হয়েছে। লেনদেন শুরু হওয়ার মাত্র ৩৩ সেকেন্ডের মধ্যে অর্থাৎ ১০টা ৩৩ সেকেন্ডে এসব শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
আরো জানা যায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের আরেক কোম্পানি ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কোড থেকে এসব শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লংকাবংলা সিকিউরিটিজের একজন নারী গ্রাহক এসব শেয়ার ক্রয় করেন। এখন প্রশ্ন হলো এই বিপুল পরিমাণ শেয়ার এত কম দরে একটি কোম্পানির নিজস্ব পোর্টফলিও থেকে ব্যক্তির পোর্টফলিওতে গেল কেন এবং কি উদ্দেশ্যে? ইতিহাসে এই ধরনের কারসাজি আর কখনো দেখা যায়নি। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি বিশেষ সুবিধার জন্য উভয় পক্ষ পরিকল্পিতভাবে এই কারসাজি সংঘটিত করেছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।
জানা যায়, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। শেয়ার কারসাজির বিষয়টি প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সংস্থাটি।
বিএসইসির মুখপাত্র রেজাউল করিম নয়া শতাব্দীকে বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এটি আমরা তদন্ত করে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব।
গত ১৫ জুন ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর হিসাব বছরের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে বীমা খাতের এই কোম্পানিটি। আলোচিত বছরের জন্য কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। লভ্যাংশ ঘোষণার পরের দিনই কোম্পানিটির শেয়ারে এমন ভয়াবহ কারসাজি দেখা গেল, যা দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য খুবই হতাশার বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
৩১ মার্চ, ২০২১ তারিখে সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৬৫ পয়সা। গত বছর একই সময়ে শেয়ার প্রতি ৪৮ পয়সা আয় হয়েছিল। আলোচিত প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি ক্যাশ ফ্লো ছিল ১ টাকা ৩৯ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ৫২ পয়সা ছিল। গত ৩১ মার্চ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য ছিল ১৭ টাকা ৭৪ পয়সা। বীমা খাতের এই কোম্পানিটি ২০২০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। বর্তমানে কোম্পানিটি ‘বি’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করছে।
নয়া শতাব্দী/এমএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ