ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬
পোলট্রি খাতে অতিরিক্ত কর

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা

প্রকাশনার সময়: ০৪ জুন ২০২২, ১১:২২ | আপডেট: ০৪ জুন ২০২২, ১১:২৩

আগামী অর্থবছর থেকে পোলট্রি খাতের করমুক্ত আয়সীমা কমানো হতে পারে। বর্তমানে বার্ষিক আয়ের প্রথম ২০ লাখ টাকার জন্য পোলট্রি খাতের বিনিয়োগকারীদের কোনো কর দিতে হয় না। ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকার (পরের ১০ লাখ টাকা) ওপর ৫ শতাংশ এবং ৩০ লাখ টাকার বেশি হলে ১০ শতাংশ হারে কর বসে; কিন্তু আগামী বাজেটে পোলট্রি খাতের বিনিয়োগকারীদের জন্য কিছুটা দুশ্চিন্তার খবর আসতে পারে। করপোরেট খাতকে যখন করছাড়, কর মওকুফসহ অন্যান্য নীতি সহায়তা দেয়া হচ্ছে, পোলট্রি ও মাছ চাষের উদ্যোক্তাদের কাঁধে তখন ২০২২-২৩ অর্থবছরে অতিরিক্ত করের বোঝা চাপতে চলেছে। প্রথমে মহামারির ধক্কায় লোকসান গুনেছে দেশের পোলট্রি শিল্প। তারপর বেড়েছে উৎপাদন খরচ। এবার মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে নতুন কর ব্যবস্থার ধাক্কা আসছে খাতটির ওপর। আগামী অর্থবছর থেকে পোলট্রি খাতের করমুক্ত আয়ের সীমা অর্ধেক হয়ে ১০ লাখ টাকায় নেমে আসছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রথম ১০ লাখের পর দ্বিতীয় ১০ লাখ টাকা আয়ের ওপর ৫ শতাংশ কর দিতে হবে পোলট্রি খামার মালিকদের। আর ২০ লাখ টাকার বেশি বার্ষিক আয়ের ওপর কর দিতে হবে ১০ শতাংশ। ৩০ লাখ টাকার বেশি আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে, বর্তমানে এ পরিমাণ আয়ের ওপর করের হার ১০ শতাংশ।

আগামী অর্থবছর থেকে মাছ ও পোলট্রি হ্যাচারির পাশাপাশি মাছ চাষ ও পোলট্রি খামারকে একক ট্যাক্স স্ল্যাবের আওতায় আনার পরিকল্পনা করছে সরকার। বর্তমানে মাছ ও পোলট্রি হ্যাচারি এবং মাছ চাষের জন্য একই ধরনের করকাঠামো কার্যকর রয়েছে। কর ফাঁকির সুযোগ বন্ধ করে কর সংগ্রহ বাড়ানোর লক্ষ্যে হাতে নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তারই অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার জন্য সংগ্রামরত খাতটির অবস্থা আরো খারাপ হবে। ফিডের মূল্য ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি মূল্য বৃদ্ধি অবস্থাকে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যাবে আশঙ্কা তাদের। ‘পোলট্রি খামারিরা এখন লোকসান দিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছেন। প্রতি কেজি মুরগির উৎপাদন খরচ বেড়ে ১২২ টাকা হলেও বিক্রি করতে হচ্ছে ১২০ টাকায়। এই পরিস্থিতিতে তাদের ওপর আরো কর আরোপের যে পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে, তা খুবই হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, ‘তাদের অস্তিত্বই যখন ঝুঁকির মধ্যে আছে, তখন সরকার কী করে বাড়তি কর আরোপ করে? ‘ফিড তৈরির কাঁচামালের দাম ৬৫ শতাংশ বাড়লেও আগে থেকেই মহামারির ধাক্কায় জর্জরিত খামারিদের ওপর আমরা এই দামের ২৯ শতাংশের বেশি চাপাতে পারিনি।’ নতুন ট্যাক্স স্ল্যাব তাদের টিকে থাকার লড়াই আরো কঠিন করে তুলবে এবং শিল্পটির প্রবৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করবে। চড়া উৎপাদন খরচের কারণে লোকসান দিয়ে টিকতে না পেরে অনেক পোলট্রি খামারিই এরই মধ্যে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। খাদ্য তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহূত সয়াবিনের আমদানির ওপর নিয়ন্ত্রক শুল্ক আরোপ করা হলে একে বিলাসবহুল পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এতে আরো বাড়বে তাদের ভোগান্তি।

এক বছর আগে মুনাফা করে এখন লোকসান গুনলেও কর কর্মকর্তারা তা মানতে নারাজ বলেও অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা। তারা বলেন, ‘কৃষিভিত্তিক শিল্পের সবাই-ই যেকোনো মুহূর্তে ক্ষতির ঝুঁকিতে আছে, তাদের আগের হিসাবের রেকর্ড যা-ই হোক না কেন। কিন্তু আমরা কর কর্মকর্তাদের এই বিষয়টা মানাতেই পারছি না।’ সয়াবিন আমদানির ওপর ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রক শুল্ক আরোপের ফলে প্রতি কেজি মুরগির উৎপাদন খরচ ৫ টাকা করে বেড়ে যাবে।

গত চার দশকে পোলট্রি শিল্প বিকশিত হয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকার খাতে পরিণত হয়েছে। দেশের মাংসের চাহিদার ৪০ শতাংশেরও বেশি মেটাচ্ছিল খাতটি। করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবের আগে পোলট্রি খাতের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১২-১৫ শতাংশ; কিন্তু মহামারির ধাক্কায় এই খাতের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক অবস্থায় চলে গেছে বলে জানান শিল্পসংশ্লিষ্টরা। মহামারির ধাক্কা থেকে পুনরুদ্ধারের যে চেষ্টা তারা চালিয়ে যাচ্ছেন, তা ব্যাহত হচ্ছে ক্রমবর্ধমান ফিড খরচের জন্য এমনিটই জানান তারা।

নয়াশতাব্দী/জেডআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ