দেখতে হুবহু মেছোবাঘ। প্রথম দেখায় নিশ্চিত মনে হবে এমনটি। কিন্তু না, এটি একটি বিড়াল। সাধারণ না, বিড়ালের মধ্যে সবচেয়ে বিরল। যার বাংলা নাম 'মর্মর বিড়াল।' বিরল এ প্রাণীটির দেখা মেলে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে।
এ বিড়ালের ইংরেজি নাম Marbled cat আর বৈজ্ঞানিক নাম Pardofelis marmorata। এরা ফেলিডি পরিবারের নিভৃতচারী স্তন্যপায়ী প্রাণী। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। সারা বিশ্বে এরা সংকটাপন্ন।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক সিতেশ রঞ্জন দেব জানান, ২০১৪ সালে উপজেলার সীমান্তবর্তী নিরালা খাসিয়া পুঞ্জি থেকে এক খাসিয়া যুবক বিড়ালটি তাদের এখানে নিয়ে আসেন। তখন এটি দু-তিন দিনের বাচ্চা ছিল। তাদের কাছে প্রথমে এটি সোনালি বিড়ালের বাচ্চা মনে হয়েছিল। তারা বাসায় রেখে ড্রপার দিয়ে দুধ খাইয়ে এটাকে বড় করেন। সাত-আট মাস পর প্রাণী গবেষক শরিফ খান তাদের বাসায় বেড়াতে আসেন, তখন তিনি এ বিড়ালের বাচ্চাটি দেখে বলেন এটা কোনও সাধারণ বিড়াল নয়, মর্মর প্রজাতির বিড়াল। বিড়ালটি বড় হলে সেবা ফাউন্ডেশনে নিয়ে রাখা হয়।
বর্তমানে বিড়ালটি ফাউন্ডেশনের একটি খাঁচায় রয়েছে। প্রাণী বিশেষজ্ঞরা জানান, মারবেল বিড়াল আকারে ছোট পোষা বিড়ালের মতো।
এদের দেহ লম্বা, সরু। পা খাটো, দেহের মতো লেজও লম্বা। লোম ঘন নরম। শরীরের রং বাদামি-ধূসর থেকে লালচে-বাদামি, তাতে ফ্যাকাসে বড় বড় ছোপ। মাথা ছোট গোলাকার। মাথায় ও ঘাড়ে কালো রেখা রয়েছে। এরা নিশাচর, বৃক্ষচারী, নিঃসঙ্গ, নিভৃতচারী ও রহস্যময় প্রাণী। এরা সিলেট বিভাগ ও পার্বত্য চট্টগ্রামের চিরসবুজ ও আর্দ্র পাতাঝরা বনে থাকে।
বাংলাদেশ ছাড়াও ভুটান, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, চীন, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাওয়া যায়। ইঁদুর, পাখি, বাদুড়, কাঠবিড়ালি এদের প্রধান খাবার। কখনো কখনো সরীসৃপ, ব্যাঙ ও কীটপতঙ্গ খেয়ে জীবন ধারণ করে। এরা এক থেকে চারটি বাচ্চা দেয়।
২১ থেকে ২২ মাসে বাচ্চারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়। বন্যপ্রাণী গবেষক শরিফ খান বলেন, দেশে এ একটাই মর্মর বিড়াল পাওয়া গিয়েছিল শ্রীমঙ্গলে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত দেশের আর কোথাও এ বিড়াল দেখা যায়নি।
সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক সজল দেব জানান, তাদের মর্মর বিড়ালটি পুরুষ। বংশ বিস্তারের জন্য একটি মাদি সঙ্গী খুঁজেছেন দেশের বিভিন্ন জায়গায়, কিন্তু পাননি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খান বলেন, একসময় সিলেট, ময়মনসিংহ,পার্বত্য চট্টগ্রামের বনে মারবেল ক্যাটের বিচরণ ছিল। এখন এদের দেখা যায় না। শুধু ছবিতেই দেখা যায়। এখন এরা মহাবিপন্ন হয়ে গেছে। দেশে একমাত্র সিতেশ দেবের এখানেই একটি মারবেল ক্যাট আছে। এদের গড় আয়ু ১২ বছর।
নয়া শতাব্দী/এসইউ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ