ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

১৩ দিনে ক্ষতি ৭৫ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশনার সময়: ২০ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:২৭

দ্বাদশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত দেশের রাজনীতি। গত ২৯ অক্টোবর থেকে চলছে বিরোধী দলগুলোর একটানা হরতাল-অবরোধ। গতকাল রোববার পর্যন্ত ছুটির দিন ব্যতীত একটানা ১৩ দিন হরতাল-অবরোধ পালন করছে বিরোধীরা। ফলে শিল্পোৎপাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৭৫ হাজার কোটি টাকার মতো ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। আগুন-ভাঙচুরে আরও ৩০ কোটি টাকার মতো লোকসান হয়েছে। এতে করে নিত্যপণ্যের দাম আরও বাড়বে। সাধারণ মানুষ আরও ভোগান্তিতে পড়বে বলে দাবি বিশ্লেষকদের।

এ অস্থিরতা দীর্ঘমেয়াদে গড়ালে আরও বড় সমস্যায় পড়তে যাচ্ছে অর্থনীতি। এমনিতেই ডলার সংকট, মূল্যস্ফীতিসহ নানা সমস্যায় দেশের অর্থনীতি। এর সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতা দীর্ঘ হলে দেশের অর্থনীতি বড় সংকটে পড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন শিল্পোদ্যোক্তা ও অর্থনীতিবিদরা।

তারা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়লে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য তথা সামগ্রিক অর্থনীতিতে সংকট আরও গভীর হবে। চলমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এমন কর্মসূচি না নেয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, নষ্ট হচ্ছে দেশের সম্পদ। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমদানি-রপ্তানি। সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় আরও বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম। এমন পরিস্থিতিতে আগে থেকেই সংকটে থাকা অর্থনীতি আরও সংকটে পড়ছে। অর্থনৈতিক মন্দায় বিনিয়োগসহ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ব্যাংক-বীমা-পুঁজিবাজারে। একই সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আর্থিক খাতগুলো ছাড়িয়ে শিক্ষাসহ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিভিন্নভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

এছাড়া নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক অস্থিরতায় রাজনীতির আগুনে মানুষের সঙ্গে পুড়ছে অর্থনীতিও। অবরোধ ও হরতালে পরিবহন, পর্যটন, কৃষি, পোশাক ও উৎপাদন শিল্পসহ অন্য খাতগুলোর ক্ষতি দিন দিন বাড়ছে। মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিল্পের উৎপাদনসহ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি। একই সঙ্গে পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় তৈরি পোশাক রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারা পুঁজিহারা হচ্ছেন। রাজনৈতিক এ অস্থিরতা বাড়লে বা দীর্ঘায়িত হলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য তথা সামগ্রিক অর্থনীতিতে সংকট আরও গভীর হবে। ফলে হরতাল-অবরোধের নামে এমন অর্থনৈতিক বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড

বন্ধ করা না হলে এ মন্দা আরও বাড়ার পাশাপাশি সামগ্রিক অর্থনীতির ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া কঠিন হবে বলে মনে করছেন তারা।

বিএনপিসহ বিরোধী দলের ডাকা ২৯ অক্টোবর থেকে গতকাল পর্যন্ত ১৩ দিনের হরতাল-অবরোধে ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্তত ৭৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। এছাড়া যানবাহনে আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষতি হয়েছে আরও অন্তত ৩০ কোটি টাকা। পণ্য পরিবহনের বাড়তি খরচ ও কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ক্ষতি বেশি বলে জানান তারা।

আর ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের শঙ্কা, এ অবস্থা চললে পণ্যমূল্য বৃদ্ধিজনিত কারণে বাড়বে মুদ্রাস্ফীতি। এছাড়া এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে এ ধরনের নৈরাজ্য আরও ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে। এতে আমদানি-রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া সারা দেশে পণ্য সরবরাহের স্বাভাবিক চেইন ভেঙে পড়তে পারে। এতে নতুন করে বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম আরও একধাপ বাড়ে। আর কাঁচামাল সরবরাহের শিডিউল ধরে রাখতে না পারায় শিল্পকারখানার উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা দুষ্কর হয়ে দাঁড়াবে।

জানা গেছে, বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রকোপ কাটিয়ে বাংলাদেশ যখন অর্থনীতিকে চাঙা করার চেষ্টা করছিল তখনই শুরু হয় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, যার কঠিন প্রভাব পড়ে বিশ্ব অর্থনীতির ওপর। এরই মধ্যে ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধ ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এমন অবস্থায় আমদানিমূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়েছে। রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ১৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি মোকাবিলায় সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও কোনোটাই বেশি ফলপ্রসূ হয়নি। আমদানি নিয়ন্ত্রণ করায় জ্বালানি ও নিত্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে বেগ পেতে হচ্ছে।

এছাড়া ডলার সংকটে স্থবির হয়ে পড়ে শিল্পের কাঁচামাল, জ্বালানি আমদানিসহ বৈদেশিক লেনদেন। এলএনজি ও গ্যাসের সংকটে অভ্যন্তরীণ শিল্প উৎপাদন কমতে থাকে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। এই নাভিশ্বাস ওঠা পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে অবরোধ-হরতাল, ভাঙচুর-আগুন অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত।

এ অবস্থায় দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে বড় কাজ উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ডলার সরবরাহ বাড়ানো এবং রিজার্ভের পতন আটকানো। কিন্তু রপ্তানি আয়, প্রবাস আয়, বিদেশি বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদান কমছে। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি এবং মুদ্রা বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় আমদানি ব্যয়, ঋণ পরিশোধ ও বহির্গামী রেমিট্যান্স পরিশোধে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

করোনা মহামারির সময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রণোদনাসহ নানা পদক্ষেপ নিয়ে সরকার সংকট কাটিয়ে অর্থনীতিতে গতি ফেরাতে সক্ষম হয়। কিন্তু এখন রাজনৈতিক অস্থিরতায় বাণিজ্য ও বিনিয়োগে নতুন করে বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এখন অর্থনীতিতে বড় আঘাত লাগলে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এ বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, হরতাল বা অবরোধে অর্থনীতিতে প্রভাব পড়তে বাধ্য। এর কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক সহিংসতা বা অস্থিরতায় পণ্য আমদানি রপ্তানি ব্যাহত হয়। পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যাহত হয়। এর ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি কম হয়। এতে করে নিম্নআয়ের মানুষের জীবনযাত্রার মান কমে যায়। তিনি বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। কেননা অবরোধে সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে যায়। এছাড়া দেশে খেলাপি ঋণ ও ব্যাংকে তারল্য সংকট আরও বাড়বে। পাশাপাশি রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি আয় উদ্বেগজনক হারে কমবে। এতে ডলার সংকট আরও ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছবে। রিজার্ভের পতনে নতুন গতি পাবে, যা সামাল দেয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

সাবেক এ অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এখন এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে একটা সমঝোতা করতে হবে। নইলে সংঘাতময় এই রাজনীতি অর্থনীতিকে বড় অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেবে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, নির্বাচন এলেই এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, যার খেসারত দিতে হয় পুরো দেশকে। এবারও সংঘাত দেখা দিয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এ সংঘাত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। সংঘাত চরম আকার নিলে তার অর্থনৈতিক প্রভাব হবে ব্যাপক। কারণ এবার অন্যান্য সময়ের তুলনায় অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বেশ দুর্বল, বৈশ্বিক অবস্থাও পক্ষে নেই।

তিনি বলেন, গত কয়েক দিন ধরে যেভাবে উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, তা দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। এতে মূল্যস্ফীতির চাপ, ডলার সংকট ও কর্মসংস্থানের সুযোগ আরও সংকুচিত হবে। অর্থনীতির সব খাতেই তৈরি হবে একটা বিরূপ পরিস্থিতি। গত মাসে রপ্তানি কমেছে, আগামীতে আরও কমবে। ফলে নির্বাচনের ব্যাপারে শান্তিপূর্ণ সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এ পরিস্থিতি হয়তো চলতে থাকবে, যার অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিণাম হবে ভয়াবহ। তবে এখন পর্যন্ত রাজনীতিবিদদের মনোভাবে নমনীয়তার লক্ষণ নেই। যে কোনোভাবে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে, সেটা রাজনৈতিক দলগুলোর মাধ্যমেই হতে হবে।

শিল্পোদ্যোক্তারা বলেন, উৎপাদনে ব্যবহূত মূলধনী আমদানি কমে আসার প্রবণতা বেশ উদ্বেগজনক। মূলধনী আমদানি কমে যাওয়া মানে উৎপাদন কমে যাবে। এর ফলে রপ্তানি আরও কমবে। রপ্তানির মাধ্যমে এখন যে পরিমাণ ডলার আসে, তা না আসা মানে রিজার্ভে আরও টানাপোড়েনের পরিস্থিতি তৈরি হওয়া। বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান উৎস রপ্তানি খাত। মাসে গড়ে ৫০০ কোটি ডলার আসে পণ্য রপ্তানি থেকে। অক্টোবরে পণ্য রপ্তানি কমছে আগের অর্থবছরের একই মাসের চেয়ে ১৪ শতাংশ। সেপ্টেম্বরের চেয়ে অক্টোবরে পোশাক রপ্তানি কমেছে ১৩ শতাংশের মতো। মাসটিতে ৩৭৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। গত বছরের একই মাসের চেয়ে যা ৬০ কোটি ডলার কম। গড়ে প্রতি মাসে ৫০০ কোটি ডলারের মতো পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। এ হিসাবে অক্টোবরে ১২৪ কোটি ডলার কম রপ্তানি হয়েছে। এর কারণ হিসেবে নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘাতের শঙ্কা, গত কয়েক দিনের রাজনৈতিক কর্মসূচিকে দায়ী করছেন শিল্পোদ্যোক্তারা।

এদিকে অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি কমছে প্রায় ২০ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে তৈরি পোশাকের বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল আমদানি কম হয়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ। পোশাক উৎপাদনে প্রধান কাঁচামাল তুলা আমদানি কম হয়েছে সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৩৯ শতাংশ। সুতা, কাপড়সহ অন্যান্য কাঁচামালও প্রায় একই হারে কমেছে। পোশাকের বাইরে অন্যান্য কাঁচামালের আমদানি কম হয়েছে ৩৬ শতাংশেরও বেশি। কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়া মানে হচ্ছে, উৎপাদন কমে যাওয়া। উৎপাদন কমে যাওয়া মানে রপ্তানি কমে যাওয়া। দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি বোঝা যায় মূলধনী যন্ত্রের আমদানি চিত্রে।

এছাড়া চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর শেষে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ১১৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আর্থিক হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ ৩৯২ কোটি ৯০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে উদ্বৃত্ত ছিল ৮৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। সর্বশেষ অক্টোবরে রপ্তানি কমেছে প্রায় ১৪ শতাংশ। প্রবাস আয় অক্টোবরে বাড়লেও এর আগের তিন মাসে কমেছে। শিল্পের কাঁচামাল এবং মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে, যা বিনিয়োগে ধীরগতির লক্ষণ। সর্বশেষ শ্রম জরিপ অনুযায়ী কমেছে কর্মসংস্থানও।

হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, অভ্যন্তরীণভাবে আমরা যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের ইমেজ তার চেয়েও বেশি নষ্ট হচ্ছে। কাস্টমাররা যাতায়াত করতে পারছেন না। এখন অর্ডার প্লেসমেন্টের সময়, তারা (কাস্টমার) মনে করেন রাজনীতির এ কর্মসূচি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে তাদের পণ্য পেতে অসুবিধা হতে পারে। ফলে যেটা হবে- সময়মতো পণ্য সরবরাহ করা যাবে না, আর বিদেশি ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। এতে লাভবান হবে আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো। অবরোধের কারণে সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটলে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে। কেউ কেউ সুযোগও নিয়ে থাকে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী দিনে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতিও বাড়তে পারে।

জানা গেছে, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান উৎস রপ্তানি খাত। রপ্তানির মাধ্যমে এখন যে পরিমাণ ডলার আসে, তা না আসা মানে রিজার্ভে টানাপোড়েনের টান আরও বেশি পড়া। এটাও বেশ উদ্বেগজনক। এছাড়াও উৎপাদনে ব্যবহূত মূলধনী আমদানি কমে আসার প্রবণতাও শঙ্কা বাড়াচ্ছে পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের।

এক তথ্য বলছে, মাসে গড়ে ৫০০ কোটি ডলার আসে পণ্য রপ্তানি থেকে। অক্টোবরে পণ্য রপ্তানি কমছে আগের অর্থবছরের একই মাসের চেয়ে ১৪ শতাংশ। সেপ্টেম্বরের চেয়ে অক্টোবরে পোশাক রপ্তানি কমেছে ১৩ শতাংশের মতো। মাসটিতে ৩৭৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। গত বছরের একই মাসের চেয়ে যা ৬০ কোটি ডলার কম। গড়ে প্রতিমাসে ৫০০ কোটি ডলারের মতো পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। এ হিসাবে অক্টোবরে ১২৪ কোটি ডলার কম রপ্তানি হয়েছে। দেশের অর্থনীতির এই মন্দা পরিস্থিতিতে নতুন করে রপ্তানি কমায় রাজনৈতিক কর্মসূচিকেই দায়ী করছেন শিল্পোদ্যোক্তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পোশাক শিল্পের মালিক বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতির অবস্থা খারাপ। দেশের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়েছে। মন্দা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে আমাদের সময় লাগছে। প্রথমে করোনা মহামারি, দ্বিতীয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এর প্রধানত কারণ।

তিনি আরও বলেন, আমাদের রপ্তানি কমে যাচ্ছে। নতুন রপ্তানি আদেশ কম। এর মধ্যে বর্তমান রপ্তানি আদেশের ওপর মূল্যছাড় চেয়েছে কোনো কোনো ক্রেতা। আকাশপথে পণ্য পৌঁছাতেও চাপ দিচ্ছে কিছু ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। সাধারণত সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন করা হয়। আকাশপথে পরিবহন খরচ সমুদ্রপথের চেয়ে অনেক বেশি।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ