ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

টেকসই ঋণে সুখবর

প্রকাশনার সময়: ০৪ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:৩৭ | আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:৫১

দিন দিন জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে সারা বিশ্বে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো। কার্বন নিঃসরণ কমাতে পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে ঝুঁকছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। বাংলাদেশও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক উৎসাহে সবুজ ও টেকসই ঋণ বিতরণ বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যাংকগুলো। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের জুন প্রান্তিকে সবুজ ও টেকসই আর্থিক খাতে ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ বিতরণ বেড়েছে। ফলে এসব খাতে অর্থায়নও বাড়ছে। এখন দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের প্রায় ১৮ শতাংশই টেকসই খাতে। তবে তারল্য সংকটের কারণে আগামীতে এ ঋণ বিতরণ আরও কমতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্যাংকাররা। ব্যাংকাররা বলেন, এ বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। যদিও ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম ধীর হওয়ায় আগামী প্রান্তিকে ঋণ বিতরণ কমে আসবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এ বছরের জুন প্রান্তিকে ৬ হাজার ১৩২ কোটি টাকা তথা ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই প্রতিবেদন মতে, চলতি বছরের এপ্রিল-জুন মাসে এ খাতে ঋণ বিতরণ হয়েছে মোট ৪০ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। গত বছর হয়েছিল ৩৪ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা। আর ২০২৩-এর মার্চ প্রান্তিকের তুলনায় জুন প্রান্তিকে এ দুই খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১১৬ কোটি টাকা।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের এমডি বলেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় শিল্প কারখানাগুলোর মেশিনারিজ আমদানিতে ব্যয় বেড়েছে ওই প্রান্তিকে। এখন দেশে নির্বাচনকালীন বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা ও ডলার সংকটে আমদানি ব্যাপক কমেছে। যা আগামী সময়ে এসব খাতের ঋণের প্রবাহ অনেক কমাবে।

তিনি আরও বলেন, চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্যের অর্ডারও প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে। যার ফলে নতুন করে শিল্প কারখানা ও ক্যাপিট্যাল মেশিনারিজ আমদানি অনেকটা কমে গেছে। সামনের এই খাতে বিনিয়োগ আরও কমবে।

টেকসই ফাইন্যান্স বলতে বোঝায় এমন এলাকা এবং এমন পদ্ধতিতে ব্যবসা পরিচালনা করা যা বাহ্যিক কার্বন নিঃসরণ এবং অভ্যন্তরীণ কার্বন ফুটপ্রিন্ট হ্রাসে সাহায্য করে।

সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ ঘটা ইস্পাত, কাগজ, সিমেন্ট, রাসায়নিক, সার, বিদ্যুৎ, টেক্সটাইল ইত্যাদির মতো শিল্প প্রকল্পে অর্থায়নের অন্যতম প্রধান উৎস ব্যাংকিং এবং এনবিএফআই।

বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সবুজ ও টেকসই আর্থিক খাতে বিনিয়োগ হয়। বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি আগস্টে ৯.৭৫ এ নেমে এসেছে। যা ২২ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। বেসরকারি খাতে ঋণ ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ধারাবাহিকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের ৫ শতাংশ গ্রিন ফাইন্যান্স ও ২০২০ শতাংশ সাসটেইনেবল ফাইন্যান্সিং করার নির্দেশনা রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গ্রিন ফাইন্যান্সিংয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিতরণ করেছে ৩ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা এবং সাসটেইনেবলে হয়েছে ৩৬ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা। যা মোট লক্ষ্যমাত্রার যথাক্রমে ৬.১৬ এবং ১৩.১৬ শতাংশ। ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী বলেন, দেশের অর্থনীতি টেকসই করতে সবুজ অর্থায়ন খাতে বিনিয়োগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বিনিয়োগ ঝুঁকি, সামাজিক ও করপোরেট গভর্নেন্স ঝুঁকি কাটিয়ে উঠতে এ খাতে বিনিয়োগ করা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, যেসব ব্যাংক নিয়ম মেনে এ খাতে অর্থায়ন করবে তারা ভবিষ্যতে ভালো করবে। এ ছাড়া এসব খাতে বিনিয়োগের জন্য কিছু আন্তর্জাতিক মানদণ্ড রয়েছে, সেগুলো অনুসরণ করা হলে আরও অগ্রগতি আসবে।

ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, গত বছর (২০২২ সালে) আমরা মোট অর্থায়নের ২৩ শতাংশ টেকসই অর্থায়নে বিনিয়োগ করেছি। যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে পুরো ব্যাংকিং খাতের বিনিয়োগের গড় ১১ শতাংশ। টেকসই অর্থায়ন ও সবুজ অর্থায়ন— দুই ক্ষেত্রেই আমরা লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছি। পরিবেশবান্ধব অর্থায়নে আমরা আমাদের মোট দীর্ঘমেয়াদি ঋণের প্রায় ৬ শতাংশ বিতরণ করেছি, তার মধ্যে রয়েছে জ্বালানি সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি, পরিবেশবান্ধব শিল্প, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বা এসএমই খাতে আমাদের শক্তিশালী অবস্থানের কারণে আমরা টেকসই অর্থায়নের অন্য ক্ষেত্রগুলোর পাশাপাশি টেকসই কৃষি ও সিএমএসএমই এবং সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল অর্থায়ন করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা বিভিন্ন ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ বিতরণ করেছি। এ তহবিল দেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দারিদ্র্য বিমোচনে ব্যবহূত হয়েছে। চলতি বছর আমরা টেকসই অর্থায়নের সব ক্ষেত্রে ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্য নিয়েছি। ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে আমরা লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করেছি।

পরিবেশবান্ধব প্রকল্পের মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন, বর্জ্য পরিশোধনাগার বা ইটিপি নির্মাণ, পরিবেশবান্ধব ইট উৎপাদন অন্যতম। এ খাতে মোট মেয়াদি ঋণের ৫ শতাংশ ঋণ দেয়ার শর্ত রয়েছে। টেকসই ও সবুজ অর্থায়নে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসাহিত করতে দুই বছর ধরে বিভিন্ন মানদণ্ডে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআই) টেকসই বা সাসটেইনেবল রেটিং বা মান প্রকাশ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ