ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

পিছু হটবে না বিএনপি!

প্রকাশনার সময়: ০১ নভেম্বর ২০২৩, ১৩:৪২

২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংস ঘটনায় কিছুটা নাজুক অবস্থায় পড়েছে বিএনপি। তা সত্ত্বেও দলটি আন্দোলন থেকে পিছু হটবে না। বরং সংকট কাটিয়ে ওঠার করণীয় নিয়ে লন্ডনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেশের নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় চলছে সংলাপ ও পরামর্শ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। ২৮ অক্টোবরের ঘটনার সব তথ্য-উপাত্ত সোমবারই ঢাকাস্থ কূটনীতিকদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়েছে বিএনপি। পাশাপাশি নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙা রাখার জন্য জেলা-উপজেলায় বার্তা পাঠানো হচ্ছে। সবার মনে প্রশ্ন— এখন কোন পথে যাবে বিএনপি?

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটির নীতিনির্ধারক আরেক নেতা বলেন, ‘বিএনপির সামনে এখন দুটি পথ রয়েছে। হয় আত্মসমর্পণ, নয়তো লড়াই করা। তবে আত্মসমর্পণের অর্থ হলো, সরকার একদলীয় নির্বাচনের নামে যা করতে চাইছে, তা মেনে নেয়া। অতএব, লড়াই করা ছাড়া মাঝখানে বিএনপির আর কোনো স্পেস নেই’। জানা গেছে, মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া অবরোধে নামার জন্য বিভিন্ন স্পটে থাকতে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। প্রথম দিনের মতো আজ বুধবার রাজপথে থাকবে দলটির নেতাকর্মীরা। লন্ডন থেকে অবরোধ কর্মসূচি সমন্বয় করছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সাবেক ২০-দলীয় জোটের প্রধান মিত্র জামায়াতে ইসলামীও টানা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। দলটির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা নিশ্চিত করেছেন, কর্মসূচি পালনের জন্য জামায়াতও ৭২ ঘণ্টা মাঠে থাকবে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তারা মাঠে থাকবে। সমমনা দলগুলোর মধ্যে কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন এলডিপি, এবি পার্টি, ১২-দলীয় জোট, লেবার পার্টি, গণফোরামের একাংশ, গণঅধিকার পরিষদের দুই অংশ, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতন্ত্র মঞ্চ এ কর্মসূচিতে সমর্থন জানিয়ে আজও মাঠে থাকবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ‘বিএনপির কর্মসূচি চলছে, কর্মসূচি চলবে। দেখেন না কী হয়’। তার মতে, পিছু হটার কোনো সুযোগ নেই। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিদেশিরা সবকিছু জানে এবং দেখছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তারের পর দলের নেতৃত্বের সংকট নিয়ে গত রোববার থেকেই বিভিন্ন মহলে আলোচনা ওঠে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রশ্ন তুলে বলেন, মির্জা ফখরুল জেলে, অন্য নেতারা পালিয়ে; তাহলে বিএনপির অবরোধের নেতৃত্ব দেবে কে? গত দুদিনের মামলায় বিএনপি কেন্দ্রীয় অধিকাংশ সক্রিয় নেতাকে আসামি করা হয়েছে। বিশেষ করে মহাসমাবেশে যোগ দিয়েছেন বা ভূমিকা আছে, এমন কোনো নেতাকে এ তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়নি। পরিচিত নেতাদের মধ্যে প্রবীণ নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার কয়েক মাস ধরেই অসুস্থ। তাদের আসামি করা হয়নি। এ ছাড়া আগের দু-একটি মামলায় নাম থাকলেও নতুন মামলায় আসামি করা হয়নি ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান এবং সেলিমা রহমানকে। রিজভী আহমেদকে আসামি করা সত্ত্বেও তিনি গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন। তবে বাদবাকি অধিকাংশ নেতাকেই খোঁজ করে পাওয়া যায়নি। অনেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানই নেতৃত্ব দেবেন। তার মতে, আওয়ামী লীগ যখন বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে চিন্তিত, তাহলে বুঝতে হবে সংকটে বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগই আছে।

বিএনপি এখন কী করবে— এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতির মধ্যেই বিএনপি লাগাতার সংগ্রাম করে যাবে। একদফার পতাকা নিয়ে এগিয়ে যাবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কোনো আপস করবে না।

বিএনপির কী করা উচিত— এমন প্রশ্নের উত্তরে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, ‘আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে বিএনপি সংকটে পড়েছে। কিন্তু এ রকম সংকটে বিএনপি আগেও পড়েছিল। সেখান থেকে তারা উঠে এসেছে।’

জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘দেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ সরকারের একতরফা নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই মেনে নেবে না। এবং শেখ হাসিনার দলীয় সরকারের অধীনে দেশে কোনো নির্বাচনও হতে দেবে না। বীর জনতা সব বাধা-প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করেই স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটাবে ইনশাআল্লাহ।’

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানাচ্ছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন নেতা ঢাকাস্থ কূটনীতিকদের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে চিঠি পাঠিয়েছেন। ওই চিঠিতে ২৮ অক্টোবরের ঘটনা বর্ণনা করে পরদিন হরতালের দিনে সংঘটিত ঘটনাও তুলে ধরা হয়। এ ছাড়া প্রচুর পরিমাণ ভিডিও ফুটেজ, স্থিরচিত্র ও তথ্য-উপাত্ত পাঠানো হয় কূটনীতিকদের।

দুই দিনে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের হামলায় মোট চারজন নিহত এবং গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীর সংখ্যা ৬৯০ জন, মিথ্যা মামলার সংখ্যা ৩৬টি এবং তিন হাজারেরও বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে জানানো হয়। গত ৬ দিনে গেপ্তার করা হয়েছে ১৭০০ অধিক নেতাকর্মীকে।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ