ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

হঠাৎ বেড়েছে লোডশেডিং!

প্রকাশনার সময়: ২৯ অক্টোবর ২০২৩, ১৫:৩০

সাধারণত অক্টোবর মাসের এই সময়ে শীতের আবহ চলে আসে। আর তাই এ সময়টাতে তুলনামূলক বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকে। তবুও হঠাৎ করে ঢাকাসহ অনেক অঞ্চল থেকেই বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। বাদ যাচ্ছে না সরকারি ছুটির দিন শুক্রবার, শনিবারেও। চাহিদা যখন ১০ হাজার মেগাওয়াটের নিচে তখনো লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে আজ ২৯ অক্টোবর থেকে সাত দিন রাজধানীর বড় একটি অংশে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হতে পারে বলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)।

উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে সকাল ও সন্ধ্যায় শীতের পোশাক পরতে হচ্ছে। রাজধানী ঢাকাতেও রাতের দিকে আবহাওয়া অনেকটাই শীতল লক্ষণীয়। ভোররাতে ২১ ডিগ্রি তাপমাত্রায় নেমে আসছে। এমন সময় বিদ্যুতের চাহিদা অনেক কমে যায়, যে কারণে লোডশেডিংমুক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। সেই রাতেও বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। রাজধানীর অভিজাত এলাকা খ্যাত ধানমন্ডিতে গত শুক্রবার রাতে দুই থেকে তিন দফায় বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের তথ্য নিশ্চিত করেছেন স্থানীয়রা।

অন্যদিকে সরকারি ছুটির দিনে শিল্পকারখানা বন্ধ থাকায় চাহিদা কমে যায়। এতে করে উৎপাদনে সংকট থাকে না। স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য দিনের তুলনায় সরকারি ছুটির দিনে বিদ্যুৎ সরবরাহ উন্নত থাকে। গ্রাহকের পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারাও থাকেন অনেকটা স্বস্তিতে। কিন্তু গত ২৭ অক্টোবর শুক্রবার রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র বাংলামটর এলাকায় দফায় দফায় বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের শিকার হয়েছেন গ্রাহকরা। দুপুর এবং বিকেলে তিন দফায় লোডশেডিংয়ের তথ্য নিশ্চিত করেছেন শামসুল আলম নামে এ এলাকার একজন বাসিন্দা।

ধানমন্ডি ও বাংলামটর এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)। কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেছেন, বিদ্যুৎ সরবরাহে কোনো ঘাটতি ছিল না। তবে সরকারি ছুটির দিনগুলোতে চাপ কম থাকায় নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ কাজ পরিচালনা করা হয়। সে কারণে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকতে পারে। এজন্য আগেই মাইকিং করে জানিয়ে দেয়া হয়। তবে টেকনিক্যাল কোনো কারণে স্থানীয়ভাবে সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব কেন এমন হলো।

অন্যদিকে মিরপুর মুসলিম বাজার এলাকার সুমন নামের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, শনিবার ভোররাতে বিদ্যুৎ চলে যায়। সকাল ১১টার পরে এসেছে বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ না থাকায় বৈদ্যুতিক মোটর চালাতে পারেননি তারা। যে কারণে পানির সংকট দেখা দেয় তাদের ভবনে। আবার কালশী এলাকার বাসিন্দা মোস্তাফিজ বলেছেন, কিছুদিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ অনেকটা ভালো ছিল। গত ২৭ অক্টোবর শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে হঠাৎ লোডশেডিং শুরু হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টা ছিল লোডশেডিং।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের দৈনিক উৎপাদন ও চাহিদার রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২৭ অক্টোবর শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১০ হাজার ৯৪৩ মেগাওয়াট। আর সকাল ৮টায় চাহিদা নেমে এসেছিল ৮ হাজার ৯৭৬ মেগাওয়াটে। ঠিক দুপুরে চাহিদা ছিল ৯ হাজার ৮৬০ মেগাওয়াট। ওই দিন ২৪ ঘণ্টায় মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে ২৪২ দশমিক ৮৮৪ মিলিয়ন কিলোওয়াট আওয়ার। যা গড় করলে দাঁড়ায় ১০ হাজার ১২০ মেগাওয়াট।

উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সরবরাহ করতে গিয়ে নানা রকম পকেট তৈরি হচ্ছে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে অবশ্য বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, উৎপাদন ১৬ হাজার মেগাওয়াট করতে গেলেই নানা রকম পকেট তৈরি হচ্ছে। আমাদের প্রথম লক্ষ্য ছিল সবার ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া। সেই পরিকল্পনায় সফল হয়েছি। এখন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সাশ্রয়ী মূল্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা। এজন্য সরকার স্মার্ট গ্রিডের দিকে যাচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের জন্য স্মার্ট গ্রিড জরুরি। আমরা ইতোমধ্যেই সেদিকে যাওয়ার কাজ শুরু করেছি।

এদিকে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) এক বিজ্ঞপ্তিতে গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের রামপুরা গ্রিড উপ-কেন্দ্রের সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ট্রান্সফরমার প্রতিস্থাপনের কাজের জন্য ২৯ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত সাত দিন রাজধানীর বড় একটি অংশে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হতে পারে। ডিপিডিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সিস্টেম কন্ট্রোল অ্যান্ড স্ক্যাডা) স্বপন কুমার ভৌমিকের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কিছু এলাকায় লোড সরবরাহ আংশিক কমে যাবে, ফলে ওইসব এলাকায় সাময়িক সময়ের জন্য বিদ্যুৎ বিচ্যুতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।

বিদ্যুৎ বিভ্রাট হতে পারে যেসব এলাকায়: উলন ১৩২/৩৩ কেভি উপ-কেন্দ্রের অধীনে বনশ্রী, মাদারটেক, মগবাজার, তেজগাঁও, মালিবাগ, মহানগর প্রজেক্ট, বাগিচারটেক, ঝিলপাড়, জাহাজবিল্ডিং ও আশপাশের এলাকা। মগবাজার ১৩২/৩৩ কেভি উপ-কেন্দ্রের অধীনে মালিবাগ বাজার, কুনিপাড়া, বড় মগবাজার, দিলু এলাকা রোড, মধুবাগ, নয়াটোলা, পেয়ারাবাগ, ডাক্তার গলি, বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স ও আশপাশের এলাকা। মাদারটেক ১৩২/৩৩ কেভি উপ-কেন্দ্রের অধীনে সিপাহীবাগ, পূর্ব মাদারটেক, নন্দীপাড়া, দক্ষিণ গোড়ান, বৌদ্ধমন্দির, মায়াকানন, মুগদা, ওয়াপদা গলি, মান্ডা ঝিলপাড়, মানিকনগর, কাজিরবাড়ি, আদর্শপাড়া, কদমতলা, দক্ষিণ বনশ্রীর আংশিক, গ্রিন মডেল টাউনের ব্লক-এ এবং আশপাশের এলাকা।

ধানমন্ডি ১৩২/৩৩ কেভি উপ-কেন্দ্রের অধীনে নিউ রমনা, কাকরাইল, কারওয়ান বাজার, গ্রিনরোড, আজিমপুর, বিএসএমএমইউ, পরীবাগ ও আশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট হতে পারে। এ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৩২/৩৩ কেভি উপ-কেন্দ্রের অধীনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সুপ্রিম কোর্ট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও আশপাশের এলাকা। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় গ্রিডের উন্নয়নমূলক কাজের স্বার্থে সম্মানিত বিদ্যুৎ গ্রাহকগণের সাময়িক অসুবিধার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।’

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ