ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ডিপিডিসিতে ‘ভূতের আছর’

প্রকাশনার সময়: ০৬ আগস্ট ২০২৩, ০৭:৩৩

দফায় দফায় পদোন্নতির সাক্ষাৎকার পরীক্ষার সময়সূচির সার্কুলার জারি করেও নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতির পরীক্ষা নিচ্ছে না ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি)।

প্রথম দফায় ১৬ মে, দ্বিতীয় দফায় ২৪ জুলাই এবং তৃতীয় দফায় দ্বিতীয় দফার সময়সূচি বাতিল করে নতুন সময়সূচি ঘোষণা করে ২৫ জুলাই আরও একটি সার্কুলার জারি করে ডিপিডিসি। এভাবে দফায় দফায় পদোন্নতির সাক্ষাৎকার নেয়ার সময়সূচির সার্কুলার জারি করেও রহস্যজনক কারণে তা নিচ্ছে না সংস্থাটি। তাই এ ব্যাপারে অনেকেই বলছেন, ডিপিডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতির পরীক্ষায় যেন ‘ভূতের আছর’ পড়েছে।

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) নির্বাহী পরিচালক, প্রধান প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলী, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এবং সহকারী প্রকৌশলীসহ সংস্থাটির দায়িত্বশীল পদের অধিকাংশই ভারপ্রাপ্ত বা অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চালানো হচ্ছে।

অতিরিক্ত বা ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দিয়ে কার্যক্রম চালানোর সুযোগে সংস্থাটিতে কর্মরত অনেকের কার্যক্রম নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। তবুও সংস্থায় কর্মরত বিশেষ একটি অসাধু চক্র আঁতাত করে কৌশলে পদোন্নতি প্রক্রিয়া এক প্রকার আটকে রেখেছিল। এরই মধ্যে প্রধান প্রকৌশলী পদে ডিপিডিসি গত ১৬ মে একটি সার্কুলার জারি করে পরবর্তীতে পদোন্নতি প্রদান করে।

একই দিনে অর্থাৎ ১৬ মে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতির পরীক্ষা নিতে আরও একটি সার্কুলার জারি করে। এরপর পুনরায় গত ২৪ জুলাই সংস্থাটি নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতির সাক্ষাৎকারের জন্য আবার সার্কুলার জারি করে। কিন্তু এরপরই রহস্যজনক কারণে ২৫ জুলাই অপর এক সার্কুলারের মাধ্যমে দ্বিতীয় দফায় দেয়া সার্কুলারের ঘোষিত সময়সূচি স্থগিত করে ফের নতুন সময়সূচি ঘোষণা করে। পদোন্নতির সাক্ষাৎকারের সময়সূচি এভাবে দফায় দফায় পরিবর্তনে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গুঞ্জন ভেসে বেড়াচ্ছে।

ডিপিডিসির সার্ভিস রুলস ২০১৭-এর সংশ্লিষ্ট বিধির আলোকে এমপ্লয়ি ম্যানেজমেন্ট (অ্যাডমিনিস্ট্রেইশন) হিউম্যান রিসোর্সেসের ডিজিএম নীহার রঞ্জন সরকার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি দিতে ফিডার পদে (উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী) কর্মরত প্রথম সার্কুলারে দুই দফা সাক্ষাৎকারে ২১ জনকে ডাকা হলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় সার্কুলারে ৫০ জনকে পাঁচ দফায় সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়েছে।

প্রথম সার্কুলারে প্রথম দফা ২৩ মে বিকাল ৫টায় ১০ জন এবং দ্বিতীয় দফা ২৪ মে বিকাল ৫টায় ১১ জনের সাক্ষাৎকার নিতে সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়। দ্বিতীয়বার সার্কুলারে ২৫ জুলাই বিকাল সাড়ে ৫টায় সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয় ১০ জন, দ্বিতীয় দফায় ২৬ জুলাই বিকাল সাড়ে ৫টায় ডাকা হয় ১০ জন, তৃতীয় দফায় ২৭ জুলাই বিকাল সাড়ে ৫টায় ডাকা হয় ১০ জন, চতুর্থ দফায় ৩১ জুলাই বিকাল সাড়ে ৫টায় ডাকা হয় ১০ জন, পঞ্চম দফায় ১ আগস্ট বিকাল সাড়ে ৫টায় সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয় ১০ জন।

কিন্তু এই সার্কুলারটি জারির পরের দিনই রহস্যজনক কারণে ফের নতুন সময়সূচি ঘোষণা দিয়ে ২৫ জুলাই আবারও একটি সার্কুলার জারি করে। এই সার্কুলারে সাক্ষাৎকারের জন্য সময়সূচিতে প্রথম দফায় ৩ সেপ্টেম্বর বিকাল সাড়ে ৫টায় সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয় ১০ জন, দ্বিতীয় দফায় ৪ সেপ্টেম্বর বিকাল সাড়ে ৫টায় ডাকা হয় ১০ জন, তৃতীয় দফায় ৫ সেপ্টেম্বর বিকাল সাড়ে ৫টায় ডাকা হয় ১০ জন, চতুর্থ দফায় ১০ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৫টায় ডাকা হয় ১০ জন, পঞ্চম দফায় ১১ সেপ্টেম্বর বিকাল সাড়ে ৫টায় সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয় ১০ জন। যার স্মারক নম্বর: ৮৭.৪০৪.৪০৯.০৩.০১.০০১.২০২৩.৫৩।

অভিযোগ রয়েছে, ডিপিডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি দিতে সাক্ষাৎকারের জন্য এক সার্কুলার জারি করলেও নির্দিষ্ট কতিপয়কে পদোন্নতি দিতে দফায় দফায় সময় ক্ষেপণের এই কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। বর্ধিত করা এ সময়কালের মধ্যে নির্ধারিত ওইসব প্রার্থীর নির্বাহী প্রকৌশলী পদে চাকরির বয়সসীমা পূর্ণ হবে এবং তাদের পদোন্নতি দিতেই এসব টালবাহানা করা হচ্ছে।

এমনকি এ ব্যাপারে ইতোমধ্যেই বিশাল অঙ্কের অর্থ লেনদেন বলে সূত্রের দাবি। সংস্থাটির শূন্য পদগুলোর অধিকাংশেরই ভারপ্রাপ্ত বা অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে সংস্থার কাজ চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। যার ফলে ডিপিডিসির কাজের গতি ও গ্রাহক সেবার মান নিম্নগামী বলে মনে করছেন অনেকেই। পাশাপাশি অনিয়ম-দুর্নীতি ও গ্রাহক হয়রানি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তাদের ধারণা। আর এসব দূরীকরণে ইতোমধ্যেই পদোন্নতি প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

যদিও নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিপিডিসির দায়িত্বশীল এক সূত্রের দাবি বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব এবং সংস্থার পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান ব্যস্ত থাকার কারণে এভাবে দফায় দফায় পদোন্নতির সাক্ষাৎকার পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তন করা হচ্ছে। তবে এমন যুক্তি মানতে অনেকেই নারাজ। তাদের মতে, সচিব দীর্ঘ কয়েক মাসেও সময় দিতে পারছেন না এটা অবিশ্বাস্য।

ডিপিডিসির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও অতিরিক্ত সচিব (অর্থ বিভাগ) মো. মানজারুল মান্নান বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই। সংস্থার চেয়ারম্যান অথবা এমডি এ বিষয়ে জানা থাকতে পারে। হয়তোবা তাদের ব্যস্ততার কারণেও হতে পারে।’ ডিপিডিসির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও সিনিয়র সচিব (বিদ্যুৎ বিভাগ) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি ডিপিডিসির সংশ্লিষ্টদের কাছে জিজ্ঞেস করুন, কেন তারা তারিখ পরিবর্তন করছেন।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ের ফাইলপত্র ডিপিডিসিতে। তাই আমি এ ব্যাপারে জানি না। এপয়েন্ট রিলেটেড সমস্যা কিনা আমি জানি না, ফলে বিষয়টি তাদেরই জিজ্ঞেস করেন।’

বিষয়টি নিয়ে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (এডমিন এন্ড এইচ আর) সোনামনি চাকমার সেলফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন কল রিসিভ করেননি। ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) এএইচএম মহিউদ্দিনের সেলফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ