ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

এক খাতনির্ভর রপ্তানি আয়

প্রকাশনার সময়: ০৩ আগস্ট ২০২৩, ০৬:৫৮ | আপডেট: ০৩ আগস্ট ২০২৩, ০৭:০২

রপ্তানি আয় এখন এক খাতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ধীরে ধীরে যেখানে পোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীলতা কমার কথা— সেখানে উল্টো বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রপ্তানি আয়ে বেড়েছে। তবে সেখানে পোশাক রপ্তানির ওপর নির্ভরতা দেখা গেছে। পোশাকবহির্ভূত পণ্য থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় গত অর্থবছরে ৯.৫২ শতাংশ কমে ৮. ৫২ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। দেশের সামগ্রিক রপ্তানি প্রকৃতপক্ষে ৬.৬৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে ৫৫.৫৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। যা আগের অর্থবছরে ৫২ বিলিয়ন ছিল। বিশ্লেষকরা তৈরি পোশাক খাতের ওপর নির্ভরতা কমানোর ওপর জোর দিচ্ছেন।

বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ১৫.২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৪.৫৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। মূলত পোশাকখাতের চালান বৃদ্ধির কারণে রপ্তানি আয় বেড়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে বাংলাদেশ ৪.৫৯ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের ৩.৯৮ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ১৫.২৬ শতাংশ বেশি।

মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে ৩.৯৫ বিলিয়ন ডলার এসেছে পোশাক খাত হতে। গত বছর জুলাই মাসের ৩.৩৬ বিলিয়ন ডলার আয়ের তুলনায় ১৭.৪৩ শতাংশ বেশি। রপ্তানি আয় ইতিবাচক ছিল শুধু পোশাক খাতে, যা মোট রপ্তানি আয়ে ৮৪.৫৮ শতাংশ বা ৪৬.৯৯ বিলিয়ন ডলার।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে নন-পোশাক আইটেম থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ৯.৫২ শতাংশ কমে ৮.৫৭ বিলিয়ন হয়েছে। যা ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ৯.৪৭ বিলিয়ন ডলার।

সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, জাতীয় রপ্তানিতে পোশাক-পরিচ্ছদ বহির্ভূত খাতের অবদান গত অর্থবছরে ১৫.৪২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যা আগের অর্থবছরে ১৮.১৮ শতাংশ ছিল। পোশাক খাতের অবদান আগের অর্থবছরে ৮১.৮১ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮৪.৫৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

কৃষি, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হিমায়িত ও জীবন্ত মাছ এবং হোম টেক্সটাইল খাত থেকে আয়ের নিম্নমুখী প্রবণতার কারণে নন-আরএমজি আইটেম থেকে রপ্তানি আয় হ্রাস পেয়েছে, যা এই বিভাগে প্রধান অবদানকারী।

গত অর্থবছরে কৃষি পণ্য খাত থেকে রপ্তানি আয় ৮৪৩ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। যা গত বছরের একই সময়ে ১.১৬ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ২৭.৪৭ শতাংশ কম। জাতীয় রপ্তানিতে এই খাতের অবদান ১.৫২ শতাংশ।

পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয় ১৯.১০ শতাংশ কমে ৯১২ মিলিয়ন হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ১.১২ বিলিয়ন ছিল। মোট রপ্তানিতে এই খাতের অবদান ১.৬৪ শতাংশ। হিমায়িত এবং জীবন্ত মাছের খাত ৪২২ মিলিয়ন আয় করেছে, যা গত বছরের একই সময়ে ৫৩৩ মিলিয়নের তুলনায় ২০.৭৬ শতাংশ কম। চিংড়ি রপ্তানি আগের অর্থবছরে ৪০৭ মিলিয়নের তুলনায় ২৬.২৬ শতাংশ কমে ৩০০ মিলিয়ন হয়েছে।

চামড়া, চামড়াজাত পণ্য এবং পাদুকা রপ্তানি ১.৭৩ শতাংশ কমে ১.২২ বিলিয়ন রেকর্ড করেছে। ২০২২ সালে এটি ছিল ১.২৪ মিলিয়ন। মোট রপ্তানিতে এই খাতের অবদান ২.২০ শতাংশ।

চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয়, যা পূর্বে পরিবেশগত সম্মতি সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর কারণে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছিল, বছর-বছরের তুলনায় গত অর্থবছরে ১.৭৪ শতাংশ কমে ১.২২ বিলিয়ন হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে পরিমাণ ছিল ১.২৫ বিলিয়ন।

গত অর্থবছরে মোট আয়ের মধ্যে চামড়ার পাদুকা ৭০৪ মিলিয়ন, চামড়াজাত পণ্য ৩৯৬ মিলিয়ন এবং চূর্ণ চামড়া ১২৩ মিলিয়ন অবদান রেখেছে। চূর্ণ চামড়া এবং চামড়ার পাদুকা আয় গত অর্থবছরে ১৮. ৪৫ শতাংশ এবং ৬.৯৩ শতাংশ কমেছে, যেখানে চামড়া পণ্যের আয় ১৭.৪ শতাংশ বেড়েছে। গত অর্থবছরে হোম টেক্সটাইল ১.০৯ বিলিয়ন আয় করেছে। এ ছাড়া বিশেষায়িত টেক্সটাইল খাত থেকে আয়ও ৯.৫৮ শতাংশ কমে ২৮৪.৬৫ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পোশাকবহির্ভূত খাত থেকে রপ্তানি বাড়ানো বা এক খাতের ওপর নির্ভরশীলতা রাতারাতি কমানো সম্ভব নয়। তবে একটি সুপরিকল্পিত এবং সময়-নির্ধারিত নীতি এক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান দিতে পারে। এটি করতে, নীতিনির্ধারক এবং সেক্টরের লোকদের যৌথভাবে কাজ করতে হবে এবং রপ্তানিমুখী ব্যবসায়ের নতুন পণ্য খুঁজতে হবে।

পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এম. মাসরুর রিয়াজ বলেন, পোশাকবহির্ভূত খাত থেকে রপ্তানি বাড়ানোর একমাত্র উপায় পণ্য বৈচিত্র্যকরণ। আমাদের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে আরএমজি খাত থেকে এবং আপনি যদি আরএমজি সেক্টরের মধ্যে বৈচিত্র্য বিবেচনা করেন তবে রপ্তানি আয় পাঁচটি আইটেমে অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত হয়।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে যারা পোশাক-পরিচ্ছদ বহির্ভূত জিনিসপত্র আমদানি করছেন তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কাঁচামাল আমদানিও কমেছে, যা মন্থর প্রবৃদ্ধির আরেকটি কারণ বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদরা।

তিনি বলেন, এটি ছাড়াও, পোশাকবিহীন আইটেমগুলোতে আমাদের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা নেই। আমাদের বিশ্বব্যাপী ক্রেতাদের আস্থা তৈরি করতে হবে। একটি নতুন খাত গড়ে তোলার জন্য সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশের জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ পরীক্ষার মান অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এর বাইরে, সামাজিক সম্মতি নতুন উপাদান হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল করিম মুন্না বলেন, আরএমজি সেক্টরের ওপর নির্ভরতা কমাতে এবং পোশাকবহির্ভূত সেক্টরে বৃদ্ধির জন্য এই সমস্যাগুলো সমাধানের পরামর্শ দেন। বাংলাদেশে কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্যের সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে। পাটের বৈচিত্র্যময় ব্যবহার আমাদের এখন যা প্রয়োজন। পাট ও পাটজাত দ্রব্যের উৎপাদকরা পণ্যের বহুমুখীকরণ ও গবেষণার অভাবে এখনও সুযোগকে কাজে লাগাতে পারেনি।

নয়াশতাব্দী/এমটি

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ