ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্থাপন বন্ধ, কারণ অদৃশ্য!

প্রকাশনার সময়: ১৭ জুলাই ২০২৩, ০৯:৫৭ | আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৩, ১০:০৯

রাজধানীর শান্তিনগর এলাকার বাসিন্দা তুহিন। তিনি আগে প্রতি মাসে গ্যাসের বিল বাবদ ১০৮০ টাকা পরিশোধ করতেন। কিন্তু গত ডিসেম্বরে তার বাসায় প্রিপেইড গ্যাস মিটার বসানোর পর থেকে এই খরচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে আসে।

তুহিন জানান, ‘(প্রিপেইড মিটার বসানোর কারণে) আমার বাসায় গ্যাসের খরচ প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে।’ মিরপুরের বাসিন্দা আজিমুর রহমান গণি বলেন, ‘আমি একটি ২ বার্নারের চুলার জন্য প্রিপেইড গ্যাস মিটারে ৫০০ টাকা রিচার্জ করে দেড় মাস ব্যবহার করি।’

এভাবে অন্তত ১০ জনের সঙ্গে কথা বলে একই ধরনের উত্তর পাওয়া গেছে। তারা জানান, গ্যাস বিতরণকারী সংস্থা তাদের প্রথাগত বিলিং ব্যবস্থার বদলে প্রিপেইড মিটার চালু করার পর তাদের গ্যাসের জন্য খরচ ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে গেছে।

গ্রাহকের খরচ কমে যাওয়া, গ্যাসের অপচয় রোধসহ অসংখ্য সুবিধা থাকা সত্ত্বেও কচ্ছপ গতিতে এগোচ্ছে প্রিপেইড গ্যাস মিটার বসানোর কাজ। গ্রাহকের খরচ কমে যাওয়া, গ্যাসের অপচয় রোধসহ অসংখ্য সুবিধা থাকা সত্ত্বেও দেশে প্রিপেইড গ্যাস মিটারের পরিমাণ এখনো অনেক কম। তিতাস গ্যাসের আবাসিক গ্রাহকদের নতুন প্রিপেইড মিটার দেয়া এক প্রকার বন্ধ। অদৃশ্য কারণে সংশ্লিষ্টদের প্রিপেইড মিটার বসাতে অনীহা বলে দাবি গ্রাহকদের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রিপেইড মিটারে গ্যাসের খরচ অনেক কমে যায় এবং চুরিও বন্ধ হয়। কিন্তু প্রিপেইড মিটার বসানোর কাজে গতি নেই তিতাসের। কেউ আবার বলেন প্রিপেইড মিটার বসানোর কাজে সংশ্লিষ্টদের চরম অনীহা। তবে পর্যায়ক্রমে সব সংযোগ প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনার কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হারুনুর রশিদ মোল্লাহ বলেন, নতুন করে প্রিপেইড মিটার বসানোর কাজ বন্ধ আপাতত রয়েছে। অর্থায়নের অভাবে মিটার দেয়া হচ্ছে না এবং নতুন আবেদনও নেয়া হচ্ছে না।

প্রায় এক দশক আগে প্রিপেইড মিটার বসানোর উদ্যোগ নেয়া হলেও বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন— পেট্রোবাংলার আওতায় ৬টি প্রতিষ্ঠানে এখন পর্যন্ত মাত্র ৩ লাখের কিছু বেশি মিটার বসানো হয়েছে।

জানা গেছে, ঢাকা মহানগর এলাকার আবাসিক খাতে ইতোমধ্যেই ৩ লাখ ২৮ হাজার ৬০০টি প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপন করেছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। যার সুবিধাও পাচ্ছেন গ্রাহকরা। প্রিপেইড মিটারে খরচ ও গ্যাসের ব্যবহার দুটোই অনেক কম। বিল দিতে যেতে হয় না কোন ব্যাংকে। এজেন্ট দোকানে গিয়ে কার্ড রিচার্জ করতে পারছেন গ্রাহকরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাড়ে ২৮ লাখ গ্রাহকের মধ্যে মাত্র তিন লাখ ২৮ হাজার ৬০০ গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় এনেছে তিতাস গ্যাস কোম্পানি। গ্রাহকের খরচ কমে যাওয়া, গ্যাসের অপচয় রোধসহ অসংখ্য সুবিধা থাকা সত্ত্বেও অদৃশ্য কারণে প্রিপেইড গ্যাস মিটার বসানোয় তেমন আগ্রহ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

প্রিপেইড মিটারবিহীন গ্রাহক মাসে গড়ে ৭০ ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার করেন। অপরদিকে, প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহক মাসে গড়ে মাত্র ৩০ ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার করেন। কিন্তু বিভিন্ন সুবিধা ও বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও প্রিপেইড মিটার বসানোর কাজ খুবই ধীর গতিতে চলছে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের একজন যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, তারা সাধারণ গ্রাহকের জন্য ৮৭ ঘনফুটের বিল তৈরি করেন। কিন্তু প্রিপেইড মিটারের গ্রাহকরা মাসে ৫০ ঘনফুটেরও কম গ্যাস ব্যবহার করে।

জানা যায়, ২০১১ সালে একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্পের মাধ্যমে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি প্রিপেইড মিটার বসানোর কাজ শুরু করে। ২৮ লাখ গ্রাহকের এই প্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৩৩ হাজার মিটার বসিয়েছে। এ প্রকল্পের অর্থায়ন করে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি এবং মিটারগুলো আমদানির জন্য ঠিকাদারদের সঙ্গে টার্ন-কি ভিত্তিক চুক্তি করা হয়।

সংস্থাটি একই সঙ্গে গ্রাহকদের প্রিপেইড কার্ড রিচার্জে সহায়তা করার জন্য ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) সঙ্গেও একটি চুক্তি করেছে। তবে গ্রাহকরা রিচার্জের এই প্রক্রিয়ায় খুশি নন, বরং বিরক্ত। কারণ কার্ড রিচার্জ করার জন্য তাদেরকে এজেন্টের কাছে সশরীরে যেতে হয়। মোবাইল আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যাপের মাধ্যমে প্রিপেইড বিদ্যুতের কার্ড রিচার্জ করা গেলেও গ্যাসের ক্ষেত্রে এই সুবিধা নেই।

তিতাসের একজন কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৪ হাজার টাকা দামের এই মিটারগুলো একটি জাপানি প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করেছে। এ মিটারগুলো ২০ বছর টিকতে পারে। এখন গ্রাহকদের প্রতি মাসে এই মিটার ব্যবহারের জন্য ৬০ টাকা করে ভাড়া দিতে হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘শিগগিরই এই ভাড়া ১০০ টাকা করার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে আমরা মিটারের দাম ১৩ বছরের মধ্যে তুলে আনতে পারি।’

এদিকে ২০২৪ সালের মধ্যে সব আবাসিক গ্রাহককে প্রিপেইড সিস্টেমের আওতায় আনার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিতাস আরও ১২ লাখ মিটার বসানোর জন্য ২টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তবে, উভয় প্রকল্পই যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। যদিও বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বিভিন্ন সময় প্রিপেইড মিটার বসানোর নির্দেশ দিয়েছে।

বিইআরসির চেয়ারম্যান নূরুল আমিন বলেন, ‘২০১৯ সালে একটি পরিপত্রের মাধ্যমে প্রিপেইড মিটার বসানোর নির্দেশনা দেয়া হয়।’ তিনি বলেন, ‘এটি গ্রাহকদের গ্যাসের অপচয় কমাতে উদ্বুদ্ধ করবে এবং তাদের গ্যাসের মাসিক খরচ কমে যাবে।’

বাস্তবায়নে বিলম্বের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, শুরুতে মানুষ মিটার বসানোতে অনাগ্রহী ছিল। এখন তারা মিটার পেতে আগ্রহী। এখন মিটার বসাতে খুব বেশি সময় লাগবে না। এদিকে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ করে। ৫ লাখ ৫০ হাজার গ্রাহকের প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে ৬০ হাজার মিটার বসিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি আরও ১ লাখ মিটার বসানোর জন্য একটি প্রকল্প শুরু করেছে।

এ প্রকল্পের কাজ জুন মাস থেকে শুরু হবে বলে প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানান। জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডও মিটার বসানোর জন্য একটি প্রকল্প চালু করেছে। বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) আওতায় থাকা অপর ৩টি প্রতিষ্ঠান হলো বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড ও সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম জানান, মিটার বসানোর প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহক চাইলে তাকে মিটার কিনে বসানোর সুযোগ দেয়া উচিত। বিইআরসি ২০১৫ সালের ট্যারিফ আইনে প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্যাস মিটার প্রক্রিয়া চালুর নির্দেশ দেয়, কিন্তু তারা সেটি মেনে চলছেন না। এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

শামসুল বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানগুলো আইনের লঙ্ঘন করছেন এবং তাদেরকে জরিমানা অথবা জেল অথবা উভয় ধরনের শাস্তি দেওয়া উচিত। কিন্তু বিইআরসি কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। এই প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের জন্য অপ্রয়োজনীয় জটিলতা তৈরি করছেন যাতে তাদেরকে ঠকানো যায়।

প্রিপেইড মিটারে যে সুবিধা: যে সুপারিশ বিইআরসি থেকে করা হয়েছে তাতে গ্যাসের চুলা ব্যবহারকারীদের জন্য খরচ আবারও বাড়তে যাচ্ছে। প্রিপেইড মিটারে খরচ কতটা কম তার ধারণা পাওয়া গেল কয়েকজন ভোক্তার সঙ্গে কথা বলে।

ঢাকার লালবাগের বাসিন্দা নূপুর ইসলামের বাড়িতে পাঁচটি ফ্ল্যাটে ৭/৮ মাস আগে প্রিপেইড মিটার বসানো হয়েছে। তিনি বলছেন, এর আগে দুই চুলায় তার মাসে খরচ হতো ৯৭৫ টাকা। কিন্তু মিটার বসানোর পর সেই খরচ কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচশ টাকায়। বাংলাদেশে নিত্য পণ্যের পাশাপাশি গ্যাস বিদ্যুতের খরচও বাড়ছে দফায় দফায়।

খরচের ধারণা দিয়ে তিনি বলছিলেন, ‘আমরা গত মাসে মিটারে পাঁচশ টাকা রিচার্জ করেছিলাম। এতে আমার প্রায় পুরো মাস বা ২৫ দিনের মতো চলে গেছে। পাঁচশ টাকার মধ্যেই মিটারের ভাড়া এবং ভ্যাটও আছে। প্রিপেইড মিটার লাগানোর পর গ্যাসের জন্য প্রতি মাসে মোটামুটি এরকমই খরচ হয়।’

তবে এটা অনেকটাই নির্ভর করে ব্যবহারকারীর উপর, বলছিলেন নাসরিন আক্তার নামে ঢাকার আর এক বাসিন্দা। তারা একটি ভবনের নয় ফ্ল্যাটের বাসিন্দা একসঙ্গে প্রিপেইড মিটার বসিয়েছেন।

তিনি বলছেন, ‘আগে যেমন করতাম এখন আর তেমন করি না। যেমন আগে একটা রান্না সারলাম, চুলা জ্বালানো থাকত, হয়তো কিছু একটা আনতে গেলাম বা রান্নাঘরে অন্য কিছু করলাম। অথবা প্রায়ই দেখা যেত চুলা হালকা করে জ্বালিয়ে রেখেও অনেক কিছু করতাম। এখন আর সেটা তো করিই না বরং সবকিছু রেডি করে একবারে চুলা ধরাই, সব রান্না একসঙ্গে করে বের হই। গ্যাসের বিল কত হবে এটা আসলে পুরোটাই আমার ওপর নির্ভর করে।’

তিনি বলছেন, মিটারের জন্য মাসের ৬০ টাকা ভাড়া ও ভ্যাটসহ তার খরচ হয় ৬০০ টাকার মতো। রিচার্জ করা টাকা শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই তিতাস গ্যাসের বুথে গিয়ে আবার টাকা ভরে নেন তিনি। চুলা জ্বলতে থাকলে মিটারে পয়সা বাড়বে এই ধারণাটির কারণেই তিনি গ্যাস ব্যবহারে সাশ্রয়ী হয়েছেন।

তার ভবনে নয়টি মিটার বসাতে খরচ হয়েছে ১৪ হাজার টাকা। বিভিন্ন এলাকায় তিতাস গ্যাসের স্থানীয় কর্মীরাই বাড়ি বাড়ি গিয়ে এক সময় প্রিপেইড মিটার বসানোর তাগাদা দিয়েছেন। কাগজপত্র পূরণ, মিটারের দাম ও বসানোর খরচ নিয়ে সব কাজগুলো তারা নিজেরাই করে দিয়েছেন।

মিটারের জন্য গ্রাহকের কাছ থেকে কোন অর্থ নেয়া হয় না। মিটারটি স্থাপনে যদি ভবনের গ্যাস সঞ্চালনে কোন ধরনের পরিবর্তন আনতে হয় সেটির খরচ দেন গ্রাহক। শুরুতে অনেকেই আগ্রহী হননি। কিন্তু এখন এসব সুবিধার কারণে ঢাকার আরও অনেক বাসিন্দা গ্যাসের প্রিপেইড মিটারে আগ্রহী। সেটা দেয়া হচ্ছে না উল্টো চুলা প্রতি খরচ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

ক্যাবের যেসব অভিযোগ: তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ২০২০-২১ সালের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে আবাসিক পর্যায়ে গ্রাহক রয়েছে সাড়ে ২৮ লাখের মতো। দুই হাজার এগারো সালে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে প্রিপেইড মিটার বসানোর কাজ শুরু করে রাষ্ট্রীয় কোম্পানিটি। সে সময় অল্পকিছু মিটার বসানো হয়েছিল। দুই হাজার সতের সালে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি’র অর্থায়নে প্রিপেইড মিটার বসানোর কাজ শুরু হয়। দুই হাজার উনিশ সালে বিইআরসি সব গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটার বসানোর নির্দেশনা দেয়। কিন্তু এখন চলমান কোন প্রকল্প নেই তাই বন্ধ রয়েছে মিটার বসানো।

ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেছেন, তাদের মিটার বসানোর ক্ষেত্রে গড়িমসি দেখা যাচ্ছে। তিতাস গ্যাসের পক্ষ থেকে বলছে তাদের প্রিপেইড মিটারে বিনিয়োগ করার মতো পর্যাপ্ত অর্থ নেই, বসানোর জন্য জনবলের সংকট। এই কারণে তাদের ধীরগতি হচ্ছে। কিন্তু এ ধরনের ব্যাখ্যা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, গ্যাস বিতরণকারী কোম্পানিগুলো নিজেরাই প্রিপেইড মিটার কিনে লাগিয়ে দেবে পলিসিতে এমন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

ভোক্তা নিজে মার্কেট থেকে কিনতে পারবে না। বিতরণ কোম্পানিগুলো মিটারের ব্যবসায় থাকতে চায় কিন্তু আবার মিটার যেহেতু গ্যাস চুরি ঠেকায় সেজন্য এখন তারা নিরুৎসাহিত। দু্-হাজার এগার সালে শুরু হওয়ার পর এক দশক পার হয়ে গেছে, অর্থায়নে আগ্রহী রয়েছে বেশ কটি সংস্থা, সব গ্রাহককে প্রিপেইড মিটার দিতে বিইআরসি থেকে পরিপত্র জারি হয়েছে এবং বারবার তাগাদাও দেয়া হয়েছে কিন্তু তারপরও মিটার বসাতে এত দেরি কেন লাগছে কেন এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ড. শামসুল আলম।

গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর জন্য মিটারের চাইতে চুলা প্রতি অর্থ পরিশোধ বেশি লাভজনক। কোম্পানিগুলোর তরফ থেকে প্রিপেইড মিটার কার্যক্রমে ঢিলেমির এটিও একটি কারণ বলে মনে করছেন তিনি।

এদিকে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনের কোম্পানির প্রিপেইড মিটার প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ সালেহ জানিয়েছেন, জাইকার দেয়া অর্থে একটি প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত ৩ লাখ কুড়ি হাজার মিটার বসানো হয়েছে। সামনে এক লাখ মিটার বসানোর জন্য একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘প্রায়শই গ্রাহকরা আমাদের কাছে আসছেন কিন্তু আমরা আপাতত আবেদন অফিসিয়ালি আর নিচ্ছি না। কারণ নতুন প্রকল্প কবে চালু হবে সেটা এখনো ঠিক হয়নি।’

মিটার বসানোর ব্যাপারে কোনো ধরনের গড়িমসির বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দিক থেকে কোনো রিলাকট্যান্স (অনীহা) নেই বরং আমরা আরও মিটার বসানোর জন্য প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছি। আরও ৮০ হাজার মিটার বসবে জাইকার প্রকল্পের বাকি টাকা পেলে’

আমরা সার্ভে করে দেখেছি। মিটার লাগানোর পর প্রথম দুই মাস আমরা পোস্ট পেইড মোডে রেখেছি। তখনকার গ্যাস ব্যবহার এবং মিটার চালু হওয়ার পর গ্যাস ব্যবহারে অনেক পার্থক্য। গ্রাহক নিজেই তাদের ব্যবহার অনেক কমিয়ে আনে। তারা ইচ্ছে মতো গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখে না। গ্যাস অন্তত সাশ্রয় হচ্ছে বলে জানান মোহাম্মদ সালেহ।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ