ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রশাসনে নির্বাচনি ‘পদোন্নতি’

প্রকাশনার সময়: ১৩ মে ২০২৩, ১০:২৮

যুগ্ম সচিব পর্যায়ের ১১৩ জন কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গতকাল শুক্রবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘এসব কর্মকর্তাকে সরকারের অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি প্রদানপূর্বক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) নিয়োগ করা হলো।’

দ্বিতীয় আর একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত যুগ্মসচিব পর্যায়ের আরেকজন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে অতিরিক্ত সচিব করা হয়েছে। তবে এটিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘নির্বাচনি পদোন্নতি’ হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্রগুলো জানায়, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রশাসন ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত কর্মকর্তাদের বসাতে প্রতিটি পদের বিপরীতে একাধিক বিকল্প তালিকা তৈরি হচ্ছে। নির্বাচনকালীন সরকারের প্রশাসনে নানা রদবদল হলেও প্রত্যাশিত কর্মকর্তারাই যাতে এসব পদে থাকেন, এমন পরিকল্পনা থেকেই এটি করা হচ্ছে।

আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ ও শক্তিশালী প্রশাসন গড়ে তোলার অংশ হিসেবে বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সচিব পদেও আসতে পারে পরিবর্তন। এমনকি প্রশাসনের শীর্ষ পদেও পরিবর্তন ঘটতে পারে। অতীতে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে যারা কাজকর্মে দক্ষতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, এমন কয়েক কর্মকর্তাকে ডাম্পিং পোস্টে পদায়ন করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকার চায়, নির্বাচনকালীন সরকারে আজ্ঞাবহ কর্মকর্তারাই গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকুক। কয়েকদিনের মধ্যে আরও বেশ কিছু পদে বড় ধরনের রদবদল হতে পারে বলেও জানা গেছে। এ রদবদলের ক্ষেত্রে সরকার সমর্থক কর্মকর্তাদের দেয়া হতে পারে বেশি গুরুত্বপূর্ণ পোস্টিং।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবারের নির্বাচনের বৈতরণী আগের সব নির্বাচনের মতো সহজেই পার করতে পারবে না সরকার। এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশে কূটনৈতিকদের অতি উৎসাহী মনোভাবের কারণে তা খানিকটা স্পষ্ট।

বিশেষ করে পশ্চিম দেশগুলোর অতি উৎসাহী মনোভাব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্ররাও এবারের নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখছেন, গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মনে করছেন বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু রাষ্ট্র ভারত-রাশিয়াও। এরই মধ্যে ঢাকা-মস্কোর দূতাবাসের পাল্টাপাল্টি টুইটও এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা দিচ্ছে।

যদিও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি বলেছেন, ‘নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের পক্ষ থেকে কোনো চাপ নেই। মাঠের সবচেয়ে সক্রিয় দল বিএনপির দাবি-দাওয়া নিয়ে বিদেশিরা কিছু বলেনি বলেও জানিয়েছেন তিনি। বিএনপি সে দাবি উপেক্ষা করে বিভিন্ন দূতাবাসে লবিং-তদবির শুরু করছেন অনেক আগে থেকেই। যদিও দলটি বলছে তারা দলীয় সরকারে অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। আবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও সংবিধান থেকে সরতে নারাজ। তাই নির্বাচন কীভাবে সেটা সময়েই বলে দেবে।

এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা পেতে অপেক্ষা করার কোনো বিকল্প নাই। তবে শেষ মূহুর্তে বিদেশিরা যদি কোনো চাপ প্রয়োগ করে বা সরকারে কোনো ছাড় দিতে হয় সেসময় অত্যন্ত গুরুত্ব হয়ে উঠবে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তাই সেই প্রস্তুতি হিসেবেই আওয়ামী লীগ আগে থেকেই প্রশাসনকে গুছিয়ে রাখছেন বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও নির্বাচনের আগে প্রশাসনে রদবদল নতুন কিছু নয়। অতীতেও নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রশাসন পুনর্বিন্যস্ত হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকার কৌশলগত দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে। প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে নানা ধরনের ফাঁদ পাতার আশঙ্কা রয়েছে।

একদিকে বিরোধীদগুলোর রাজপথের আন্দোলন, অন্যদিকে প্রশাসনের ভেতরের একটি অংশের ষড়যন্ত্র সরকারকে চাপে ফেলতে পারে। এ ধরনের ষড়যন্ত্র যাতে সফল হতে না পারে, সে জন্য সরকার যথেষ্ট সচেতন রয়েছে এবং প্রশাসনের কয়েকটি পর্যায়ে রদবদলের করে চাপমুক্ত হওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ও ইউএনও, ডিসিসহ—সচিব পর্যায়েও রদবদল দেখা গেছে।

নির্বাচন কেন্দ্রিক এ ধরনের পরিবর্তনকে ভালো চোখে দেখছেন না সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি মনে করেন নির্বাচনের আগে এ ধরনের রদবদল সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।

জানতে চাইলে বদিউল আলম মজুমদার নয়া শতাব্দী বলেন, ‘এটি সুষ্ঠ নির্বাচনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। আমাদের প্রশাসন চরমভাবে দলীয়করণ হয়ে গেছে। তারই প্রতিফলন এই পদোন্নতি। আমরা দলীয় সরকারে অধীনে নির্বাচনে আসলে আবার ফিরে এসেছি। এটাই হলো বাস্তবতা।’

তিনি বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনা অতীতেও করা হয়েছে। সেই ধারাবাহিতাই হচ্ছে। প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হচ্ছে। তাদের চাহিদা পূরণ করে দেয়ার মাধ্যমে। এটি আসলে গণতন্ত্রের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না বলেও মনে করেন তিনি।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, কর্মকর্তাদের কাজের আমলনামা তৈরি করা হয়েছে। এতে যারা যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন, তাদের মূল্যায়ন করে আরও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দায়িত্ব পালনকালে সফলতা দেখাতে পারেননি, এমন ব্যক্তিদের কম গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হতে পারে।

অসফলদের জায়গায় পদোন্নতি দিয়ে কয়েকজন দক্ষ কর্মকর্তাকে বসানো হতে পারে। বিস্তারিত তথ্য জানতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর যুগ্মসচিব মেহেদী-উল-সহিদকে ফোন দিলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। বলেন, ‘আই অ্যাম নট রাইট পারসন।’

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ