ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

নগর নিরাপত্তায় সিসিটিভি

প্রকাশনার সময়: ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:১৪

খুন, ছিনতাই, ডাকাতি ও চুরির মতো অপরাধ নিয়ন্ত্রণে উন্নত দেশের আদলে রাজধানীকে ক্লোজ সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার আওতায় আনছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এরই অংশ হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ৫০ হাজার ব্যক্তিগত সিসিটিভি ক্যামেরাকে পুলিশের কেন্দ্রীয় সিস্টেমে যুক্ত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে এলাকাভিত্তিক হাউজিং সোসাইটি, অ্যাপার্টমেন্ট, সমবায়, বাসাবাড়ি এবং ব্যবসায়িকদের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো আপগ্রেড করার জন্য অনুরোধ করা শুরু হয়েছে।

ওই ক্যামেরাগুলোতে লাইভ ফিড সরবরাহসহ ফেস ডিটেকশন, স্বয়ংক্রিয় অ্যালার্ম সিস্টেম এবং গাড়ির নম্বর প্লেট ট্রেসিংয়ের মতো ১১ ধরনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে কাজ করবে। একই সঙ্গে দ্রুত সেবা দিতে জাতীয় জরুরি নম্বর ৯৯৯-এর সঙ্গে এ প্রযুক্তি ট্যাগ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে।

জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, বেসরকারি সিসিটিভিগুলোর আপগ্রেড কোনো সরকারি প্রকল্পের অধীনে করা হচ্ছে না। আমরা এটি সম্পূর্ণভাবে জনসমর্থন নিয়ে করছি। আমরা থানার মাধ্যমে সিসিটিভি মালিকদের কাছে তাদের ক্যামেরা আপগ্রেড করার জন্য অনুরোধ করেছি। তারা তাদের ক্যামেরার গুণমান উন্নত করতে যদি তারা সম্মত হয়, তাহলে এ ক্যামেরাগুলোকে একটি কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্কিং সিস্টেমের অধীনে আনা হবে। এটি থেকে পুলিশ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে অনেক সহায়তা পাবে। একই সঙ্গে দ্রুত সেবা দিতে জাতীয় জরুরি নম্বর ৯৯৯-এর সঙ্গে এ প্রযুক্তি ট্যাগ করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এ প্রকল্পের নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। কারণ এটি একটি স্বেচ্ছাসেবী জনসমর্থিত প্রকল্প।

তিনি জানান, ডিএমপির কেন্দ্রীয় মনিটরিং সিস্টেমে এখন ঢাকা শহরের ২২১ পয়েন্টে প্রায় ৬৮০টি সিসিটিভি রয়েছে। এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৯৯টি স্থানে ৬২৫টি সিসিটিভি রয়েছে। সেগুলোও ডিএমপির কেন্দ্রীয় সিস্টেমে যুক্ত হবে।

জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নানা ধরনের অপরাধ বেড়ে গেছে। যদিও পুলিশ এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নিরালসভাবে কাজ করছে। অনেক সময় কিছু ঘটনার রহস্য উদঘাটনে বেগও পেতে হচ্ছে। এ কারণে পুরো ডিএমপিকে একটি সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়। সেখানে দেখা গেছে, প্রায় সব বাসাবাড়িতেই এখন সিসি ক্যামেরা বসানো রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন আবাসিক এলাকাও এখন সিসি ক্যামেরার অধীনে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ওইসব ক্যামেরাগুলোকে কাজে লাগাতে চায় ডিএমপি।

ডিএমপি সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই বছরে রাজধানীতে ছিনতাইয়ের ঘটনা দ্বিগুণ হয়েছে। ছিনতাই ছাড়াও গতবছরে ১৭৩টি হত্যা মামলা, ২৭টি ডাকাতি মামলা, ৭১৩টি চুরির মামলা এবং ১৭২টি পর্নোগ্রাফির মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়া ১৬০৩৫টি মাদক মামলাও দায়ের করা হয়েছে। আর এসব অপরাধীদের শনাক্ত করতে গিয়ে অনেক সময় বেগ পেতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। কখনো কখনো অপরাধীদের খুঁজে বের করাই প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

এক্ষেত্রে অপরাধী শনাক্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সিসিটিভি। অপরাধের ভিডিও চিত্র ধারণ করা থাকে বলে প্রমাণ করাও সহজ হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য। তাই খুন, ডাকাতি, চুরির মতো অপরাধ মোকাবিলায় পুরো রাজধানীকে ক্লোজ সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার নজরদারির আওতায় আনতে কাজ করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এসব পরিকল্পনার আওতায় ৫০ হাজার ব্যক্তিগত সিসিটিভি ক্যামেরাকে পুলিশের কেন্দ্রীয় সিস্টেমে যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে ডিএমপি।

এ বিষয়ে গুলশান সোসাইটির মহাসচিব ব্যারিস্টার সারওয়াত সিরাজ বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে সিসিটিভি মনিটরিং করার পর থেকে গুলশান এলাকায় ছিনতাইয়ের মতো ছোটখাটো অপরাধের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে এসেছে। ক্যামেরাগুলো অপরাধ সমাধানেও অনেক সাহায্য করছে। কোনো ধরনের অঘটনের পর ভুক্তভোগী আমাদের সহায়তা চাইলে আমরা তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল স্থান শনাক্ত করে পুলিশকে অবহিত করা হয়। এতে ভুক্তভোগী যেমন উপকার পায় তেমনি পুলিশও দ্রুত অপরাধীকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে পারে।

জানা গেছে, ডিএমপির পক্ষ থেকে রাজধানীকে সুরক্ষিত করতে আরও বিভিন্ন আবাসিক এলাকার কর্ণধারদের সিসিটিভি বসানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এ ধরনের প্রযুক্তি ২০২১ সালে যুক্তরাজ্যের মতো দেশে সফল পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর স্থাপন করা হয়েছে এবং তাতে ওইসব দেশগুলো ব্যাপক সফলতা পেয়েছে বলে ডিএমপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।

এ কারণে ওই প্রযুক্তি দেশেও বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি পাশের দেশ ভারতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে এ ধরনের সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনে দিল্লি পুলিশকে আরও ফৌজদারি মামলা সমাধান করতে সাহায্য করেছে বলেও জানানো হচ্ছে। পুলিশের এমন অনুরোধে সাড়া দিচ্ছেন নগরবাসী।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, পরিবর্তনশীল অপরাধ নজরদারি মোকাবিলায় নতুন প্রযুক্তি এবং পদ্ধতির প্রয়োজন। অপরাধ করে রাজধানী থেকে পালিয়ে যাওয়া অপরাধীদের শনাক্ত করতেও সিসিটিভি নেটওয়ার্ক সাহায্য করবে।

ঢাকা মহানগরীর ১৪টি প্রবেশ ও বহির্গমন পয়েন্টে ডিএমপি ইতোমধ্যে সিসিটিভি স্থাপন করেছে। এছাড়া ডিএমপির কেন্দ্রীয় মনিটরিং সিস্টেমে এখন ঢাকা শহরের ২২১টি পয়েন্টে প্রায় ৬৮০টি সিসিটিভি রয়েছে। এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৯৯টি স্থানে ৬২৫টি সিসিটিভি রয়েছে। ওই ক্যামেরাগুলোও আপডেট করার কাজ দ্রুতই শুরু করা হবে।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ