ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

কাদের না নানক চমক

প্রকাশনার সময়: ২৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:৩১

রাত পোহালেই ২২তম জাতীয় কাউন্সিল শুরু ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পদ্মা সেতুর ওপরে নৌকার আদলে তৈরি ৮০ ফুট বাই ৪৪ ফুটের মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে এ কাউন্সিল। কাউন্সিলের পর এক বছরেরও কম সময়ের ব্যবধানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

এ কারণে কাউন্সিলের মাধ্যমে আসা নতুন নেতৃত্বকেই পাড়ি দিতে হবে নির্বাচনি বৈতরণী। দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখে বিরোধী শক্তির চাপ সামলে দায়িত্ব পালন করতে হবে নেতাদের। এসব দিক বিবেচনায় এবার অনেকটাই নির্বাচনি নেতৃত্ব আসতে চলেছে আওয়ামী লীগে। যদিও দলের সভাপতি পদে আসবে না কোনো পরিবর্তন।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও যে দলের সভাপতি নির্বাচিত হচ্ছেন, তা নিয়ে কারও সংশয় নেই। তাই বরাবরের মতো সাধারণ সম্পাদক পদ ঘিরেই যত আলোচনা। যদিও একটি সূত্র বলছে, সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে নানা আলোচনা হলেও এবারও ওবায়দুল কাদেরের ওপরই ভরসা রাখবে আওয়ামী লীগ।

এটি সত্য হলে— টানা তৃতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। তবে চমক হিসেবে সাধারণ সম্পাদক পদে চলে আসতে পারেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক।

জানা গেছে, এবারের সম্মেলন সামনে রেখে দলের বেশ কয়েক নেতা সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে আগ্রহী ছিলেন। তবে নিজেদের প্রার্থিতা নিয়ে কেউই প্রকাশ্যে কোনো কথা বলেননি। এ বিষয়ে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ওপরই আস্থা রাখছেন পদপ্রত্যাশীরা।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ বলেন, দলের কাউন্সিলররা নেতৃত্ব নির্বাচন করেন। তারা দলীয় সভাপতিকে দায়িত্ব দেন নেতা নির্বাচন করার। সেই পবিত্র দায়িত্ব পালনে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।

সম্মেলন ও নেতৃত্ব নির্বাচন সম্পর্কে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, দলের নাড়িনক্ষত্র জননেত্রী শেখ হাসিনা সবচেয়ে ভালো জানেন। চার দশক ধরে তিনি দলের সভাপতি। তার সুযোগ্য নেতৃত্বেই দল চারবার ক্ষমতায়। তিনি ভালো জানেন, কাকে দায়িত্ব দিলে দল সুসংগঠিত থাকবে। তিনি যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনীত করবেন। সারা দেশের নেতাকর্মীরা তার সিদ্ধান্তই মেনে নেবে।

জানা যায়, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তৃতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক হতে আগ্রহী। আর এ কারণেই তাকে এখন অনেক বেশি ব্যস্ত এবং লাইমলাইটে দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন বিষয়ে তিনি বিরোধী দলের কঠোর সমালোচনা করছেন এবং বিভিন্ন ইস্যুতে তাকে বক্তব্য রাখতেও দেখা যাচ্ছে। কিন্তু বিএনপির সমালোচনা বা অন্যান্য বিষয় নিয়ে তিনি যত মুখর দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তিনি ততটাই নীরব।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, বিভিন্ন জেলায় কমিটিগুলো সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে হয়েছে এবং সাংগঠনিক সম্পাদকরা সরাসরি আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই দলের বিভিন্ন স্থানীয় পর্যায়ের কমিটিগুলো করেছেন। অনেক ক্ষেত্রেই ওবায়দুল কাদের এসব ব্যাপারে জানেন না।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক বেশি লাইমলাইটে এসেছেন। কাদের যেমন নিজেকে গণমাধ্যমের সামনে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় উপস্থাপন করছেন, বিএনপির কঠোর সমালোচনা করছেন, জাহাঙ্গীর কবির নানক ঠিক তেমনি দলের সাংগঠনিক বিষয়ে মনোনিবেশ করছেন। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন যে, এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক দলের সভাপতির আস্থাভাজন ব্যক্তি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জাহাঙ্গীর কবির নানকের ওপরেই আওয়ামী লীগ সভাপতি আস্থা রেখেছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা হচ্ছে জেলা পরিষদ আইন। এই আইনটি যখন সংশোধন করা হয় তখন এখানে প্রশাসক নিয়োগের কথা বলা হয়েছিল এবং প্রশাসক নিয়োগে আমলাদের বসানোরও একটি পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

কিন্তু জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে এখানে আমলাদের না বসিয়ে যারা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন তাদের প্রশাসক নিয়োগ করলে রাজনৈতিক কোন্দল এবং সংকট কমে যাবে। প্রধানমন্ত্রী তার এই প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন।

সাম্প্রতিক অতীতে আওয়ামী লীগ সভাপতির দেয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ অ্যাসাইনমেন্ট জাহাঙ্গীর কবির নানক অত্যন্ত নিষ্ঠা এবং দক্ষতার সঙ্গে পালন করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন, সিলেটের হযরত শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট নিরসন। আর এই দায়িত্বগুলো পালন করে তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতির আস্থা অর্জন করেছেন বলেই অনেকে মনে করেন। তৃণমূল থেকে ধাপে ধাপে উঠে আসা জাহাঙ্গীর কবির নানক একজন ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাও বটে।

গত নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি কিন্তু মনোনয়ন না পাওয়াটাই তার জন্য শাপে-বর হয়েছে। এরপর থেকেই তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতির আস্থাভাজন ঘনিষ্ঠ নেতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। দলের তৃণমূল পর্যন্ত সাংগঠনিক খোঁজ-খবর তিনি রাখেন, স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে এবং রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক দক্ষতার সমন্বয় রয়েছে তার মধ্যে। এ জন্যই এবার দলের নেতাকর্মীদের প্রথম পছন্দ জাহাঙ্গীর কবির নানক।

তবে আওয়ামী লীগের সমস্যা হলো— খুব কম ক্ষেত্রেই জনপ্রিয় নেতারা সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন। কাজেই শেষ পর্যন্ত নানক-কাদেরের লড়াইয়ে কে জিতবেন, সেটি যেমন প্রশ্ন আবার এই দুইজনের বাইরে তৃতীয় কেউ যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হবেন না সেটিও নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেন না। কারণ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদটি সব সময় একটি চমকের নাম।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ