ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সড়কেই পুড়ছে ময়লা!

প্রকাশনার সময়: ২৯ অক্টোবর ২০২২, ০৯:২০

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় সড়কে পোড়ানো হচ্ছে বর্জ্য। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বিভিন্ন সড়ক থেকে বর্জ্য একত্রে করে তা সড়কেই পুড়িয়ে ফেলছে। এর ফলে বর্জ্য পোড়ার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। বিষাক্ত হচ্ছে চারপাশের পরিবেশ!

প্রতিদিন সকাল কিংবা রাতে সড়ক ও আশপাশের ময়লা ঝাড়ু দিয়ে একত্রে করে তা সড়কেই পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) ময়লা নিতে অনীহা ও কষ্ট কমানোর সহজ সমাধান হিসেবেই এ কাজটি করে চলেছে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।

ইউসুফ নামে এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী বলেন, ময়লা পোড়ানো হয় মূলত ঝামেলা কমাতেই। যে পরিমাণ ময়লা বা প্লাস্টিক মানুষ রাস্তায় ফেলেন, তার চেয়ে বেশি ফেলে আশপাশের দোকানিরা। তাই শর্টকাট পথ-সড়কের ময়লা সড়কেই পোড়ানো হয়।

তিনি বলেন, যদিও বর্জ্য পোড়ানোর ফলে ধোঁয়ার সৃষ্টিতে পথচারীরা বিরক্ত হন। কেউ কেউ আমাদের ওপর বিরক্ত হয়। আমাদেরই বা কী করার আছে? আগেও পোড়াতাম, এখনও পোড়াই।

পর্যবেক্ষণ বলছে, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকার হাজারীবাগ, নবাবগঞ্জ, লালবাগ, আজিমপুর, কারওয়ানবাজার, রামপুরা, মেরাদিয়া বাজারসহ আরও বেশ কিছু অংশে নিয়মিত পোড়ানো হয় সড়কের বর্জ্য। গবেষণা বলছে, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে অন্তত ৭০টি খোলা জায়গায় নিয়মিত বর্জ্য পোড়ানো হচ্ছে। বর্জ্য পোড়ানোর এই কালো ধোঁয়া আশপাশের অন্তত ১-২ কিলোমিটার পরিবেশ দূষিত করছে।

রামপুরার বাসিন্দা মো. ইকবাল হোসেন। প্রতিদিন টিভি ভবনের সামনে দিয়ে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারে যান। তার গন্তব্যে যাওয়া সময় মেরাদিয়া বাজারের একটু আগে অর্থাৎ রামপুরা থেকে মেরাদিয়া বাজারের অর্ধেক মাঝপথে বর্জ্য পোড়ানোর কারণে প্রায়ই তার গন্ধ অনুভব করতে হয়।

তিনি বলেন, আমার অফিস ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারে হওয়ায় এই পথ দিয়ে প্রায়ই যাতায়াত করতে হয়। এর মধ্যে অর্ধেক পথে মাঝেমধ্যেই সড়কে পাশে বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলে। ফলে দুর্গন্ধ অনুভব করেই যাতায়াত করতে হয়। অথচ এখানে ময়লা রাখার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা থাকলেও সেখানে ময়লা রাখছে না অনেকেই। সড়কেই ময়লা পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে।

আজিমপুরে জান্নাত নামে এক পথচারী বলেন, আগুনের স্তূপ থেকে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। মাস্ক পরে ধুলোবালি থেকে বাঁচা যায়, কিন্তু এ ধোঁয়া থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই? কোথাও কোথাও তো নিঃশ্বাসও নেয়া যায় না। একদিকে ধুলোবালি, অন্যদিকে ধোঁয়া। যেন এদের দেখার বা বলার কেউ নেই। বিষয়টি নিয়ে অনেকেই অসহায় হলেও প্রতিকার নেই।

বায়ুদূষণে বিশ্বে দূষিত শহরের তালিকা মাঝেমধ্যে ঢাকার অবস্থান প্রথমে আসে। এর অন্যতম কারণ হলো- রাজধানীর পরিবেশ দূষিত। তবে পরিবেশ দূষিত হওয়ার পিছে নগরীর যেখানে সেখানে বর্জ্য পোড়ানো অনেকাংশে দায়ী। গবেষণাগুলোতে দেখা যায়, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকার সড়কে বর্জ্য পোড়ানোর কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের অন্তত এক থেকে দুই কিলোমিটার পরিবেশ বিষাক্ত হচ্ছে। বায়ুদূষণ নির্মূলে দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো নানা অভিযোগ, উদ্বেগ প্রকাশ করলেও এর দৃশ্যমান কোনো সুফল মেলেনি রাজধানীর নির্মল বাতাসে। বরং উন্নতির চেয়ে অবনতিই বেশি হয়েছে। তারা বলছেন, বায়ুদূষণের শীর্ষে ঢাকা শহর। সর্বত্র এখন বর্জ্য পোড়ানো বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অকটেনসহ বিপজ্জনক জ্বালানির ব্যবহার করা গাড়ি থাকে সড়কে।

বর্জ্য পোড়ানোর ফলে যে কোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। সেই সঙ্গে অন্যান্য ক্ষতি তো আছেই। অগ্নিঝুঁকি তৈরির পাশাপাশি, মানুষ নানা রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি থাকে। সেই সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্তদের দেখভালে ঘাটতিকেই দায়ী করছেন তারা। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সচেতন করার পাশাপাশি এর ক্ষতি প্রসঙ্গে জানানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।

জানতে চাইলে বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে নিম্নস্তর বা খারাপ পদ্ধতি হলো পোড়ানো। অনেকেই অসচেতনতার কারণেই এটি করে থাকেন। যা রাজধানীর সড়কে করা হচ্ছে। রাজধানীর ছাড়াও বিভাগীয় শহরেও এমন বর্জ্য পোড়ানোর রীতি রয়েছে।

তিনি বলেন, বর্জ্য পোড়ানোর ফলে যে নিজেদেরই ক্ষতি তা জানাতে হবে, জানতে হবে। একই সঙ্গে এটি একটি অপরাধ তাও অনুধাবন করতে হবে। এছাড়াও এভাবে আগুন দিয়ে প্লাস্টিক বা পাতা পোড়ানোয় এক ধরনের বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। যাতে বায়ুদূষণ হয়। এই বায়ুদূষণ বনের গাছ-পালা, কীটপতঙ্গসহ মানুষের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বাড়ায়। এসব সার্বিক বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে খেয়াল রাখতে হবে।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ