জলবায়ু ঝুঁকি নিরসন নিয়ে ছায়া সংস বিতর্ক প্রতিযোগীতা আয়োজন করেছে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। শুক্রবার (১২ নভেম্বর) বিকালে তেজগাঁওস্থ এফডিসিতে এ বিতর্ক প্রতিযোগীতা আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাহবুবা নাসরীন। প্রধান অথিথির বক্তেব্যে অধ্যাপক মাহবুবা নাসরীন বলেন, ‘উন্নত বিশ্ব কার্বন নিঃসরণের মাধ্যমে জলবায়ু ঝুঁকি তৈরি করলেও ঝুঁকি নিরসনে প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করছেন না। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার উদ্যোগের প্রতি বিশ্ব নেতৃবৃন্দ সম্মত হতে ব্যার্থ হলে জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনের সফলতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এছাড়া প্যারিস চুক্তি অনুযায়ি প্রতিশ্রুত অর্থ ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোতে দিতে হবে। তবে জলবায়ুর ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার আলোকে জলবায়ু ঝুঁকি নিরসন কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশ নেগোসিয়েশন প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রাপ্ত অর্থ ব্যায়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি। এজন্য প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকারসহ স্থানীয় জনগোষ্ঠিকে সম্পৃক্ত করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি'র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘জলবায়ু চুক্তির খসড়া দেখে মনে হচ্ছে এতে অনেক ফাঁক রয়েছে। জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্ব নেতারা নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে সেসব পালন করছে না। কপ-২৬ এর এই সম্মেলনকে রাজনীতিবিদ ও এনজিও কর্মীদের ২সপ্তাহের একটি উৎসব হিসেবে মনে হচ্ছে। এই সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তেনে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার অনেক কিছু পাশ কাটানো হয়েছে। মনে হয়েছে জলবায়ু ঝুঁকি হ্রাসের নামে এই সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের নেতা-কর্মকর্তারা উৎসব করতে গ্লাসগোতে যোগ দিয়েছে। গরীব দেশগুলো কিভাবে জলবায়ু সংকট মোকাবেলা করবে, অর্থের যোগান কে দেবে, পরিবেশ ক্ষতির জন্য বেশি দায়ি দেশগুলোর করনীয় কী, এর কোন স্পষ্ট দিক নির্দেশনা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এবারের জলবায়ু সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কূটনৈতিক বিচক্ষনতায় বিশেষ সফলতা দেখিয়েছেন। বিবিসির জরিপে কপ-২৬ এর প্রভাবশালী ৫জন নেতার মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা তারা উল্লেখ করেছে। যা আমাদের জন্য উৎসাহব্যাঞ্জক।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষার জন্য বাংলাদেশ ১২ বিলিয়ন ডলারের ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বাতিল করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই ছায়া সংসদ সে সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। একইসাথে জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে ৪দফা দাবি তুলেছেন তার প্রতিও আমরা পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি।
এসময় বাংলাদেশকে জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির পক্ষ থেকে নিম্নের ১০ দফা সুপারিশ করেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
১. আগামী দশ বছরের জন্য Loss and Damage Fund চালু করা। ২. বাংলাদেশে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য নিশ্চিত করা। ৩. জলবায়ু তহবিলের টাকা ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। ৪. গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ডের প্রকল্প দাখিল প্রক্রিয়া সহজীকরণ করা। ৫. ন্যাশনাল এডাপটেশন পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে তা অংশীজনদের অবহিত করা। ৬. জলবায়ু ঝুঁকি নিরসন সংক্রান্ত গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে সহায়তা প্রদান করা। ৭. প্যারিস এগ্রিমেন্ট বাস্তবায়নের জন্য সমন্বিত কসূচী গ্রহণ। ৮. জলবায়ু ঝুঁকি নিরসন কার্যক্রমে বেসরকারী খাতকে সম্পৃক্ত করা। ৯. সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য টেকসই, সবুজ ও প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান অর্জনে জ্ঞান, গবেষণা, সক্ষমতা তৈরি এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর বাড়ানোর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ১০. জলবায়ু ঝুঁকি হ্রাসে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপকে আরো বেশি উৎসাহিত করা।
প্রতিযোগিতায় সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটিকে পরাজিত করে ও স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, ড. এস এস মোর্শেদ, ড. দিলারা জাহিদ, সাংবাদিক শাহরিয়ার অনিবার্ন ও সাংবাদিক অন্তরা বিশ্বাস। (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি)
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ