বায়ু দূষণে দীর্ঘদিন ধরে আক্রান্ত রাজধানী ঢাকা। প্রায়ই বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর তালিকায় ঢাকা শীর্ষে চলে আসে। এছাড়াও প্রথম থেকে পঞ্চম স্থানে অবস্থান। দূষণ রোধে সরকার বিভিন্ন সময় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও পুরোপুরি রোধ করতে সক্ষম হয়নি।
অবস্থা এমনও দেখা গেছে যে, এক মাসেও ঢাকায় নির্মল বাতাস নেই! বছরের অর্ধেকের বেশি (প্রায় ৫৭ শতাংশ) সময় এই শহরে দূষণের মাত্রা চরম পর্যায়ে থাকে। দূষণ রোধে দৃশ্যমান সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সড়কে পানি ছিটালেও তেমন সুফল মিলছে না।
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) গবেষণায় দেখা গেছে, পানি ছিটানোর পরও অস্বাস্থ্যকর থেকে যাচ্ছে ঢাকার বায়ু।
বায়ুদূষণ রোধ করতে ২০২০ সালে ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। নির্দেশনায় ঢাকার সড়কগুলোতে পানি ছিটানোর কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি নির্ধারিত কিছু স্থানে পানি ছিটাচ্ছে। এতে রাজধানীর বড় অংশের মানুষ বায়ুদূষণ থেকে রেহাই পাচ্ছে না।ঢাকার সড়কে পানি ছিটানো হয়—এমন ১২টি স্থানে ক্যাপসের গবেষক দল ফেব্রুয়ারির ১৩ থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত জরিপ পরিচালনা করে। এর মধ্যে আটটি জায়গা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি)। স্থানগুলো হচ্ছে মিরপুর- ১, মিরপুর- ২, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, খামারবাড়ি মোড়, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ (আড়ং), জাহাঙ্গীর গেট ও বিজয় সরণি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন চারটি স্থান হলো বেইলি রোড, কাকরাইল মোড়, বাংলামোটর ও শাহবাগ।
জরিপে দেখা গেছে, পানি ছিটানোর আগে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ক্ষুদ্র বস্তুকণার (পিএম ১০) উপস্থিতি ছিল ১৫৯ মাইক্রোগ্রাম এবং পানি ছিটানোর পর হয়েছে ১০৬ মাইক্রোগ্রাম। অর্থাৎ ৩৪ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে পানি ছিটানোর আগে অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণার (পিএম ২.৫) পরিমাণ ছিল ১১১ মাইক্রোগ্রাম, আর পরে হয়েছে ৭৪ মাইক্রোগ্রাম। এতে যদিও ৩৩ শতাংশ দূষণ কমেছে; তবে বায়ুমান সূচকের উন্নতি হয়নি। পানি ছিটানোর আগে বাতাস যেমন অস্বাস্থ্যকর ছিল, পরেও একই অবস্থায় রয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, বায়ুদূষণের উপাদান অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা মানবদেহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এর মাত্রা ১২-এর নিচে হলে তা ক্ষতিকর নয় বলে বিবেচনা করা হয়। ৫৫ থেকে ১৫০ মাত্রাকে অস্বাস্থ্যকর এবং ২৫০-এর বেশি মাত্রাকে বিপজ্জনক বলা হয়।
জরিপ ও গবেষণার তথ্যমতে, পানি ছিটানোর ১০ মিনিটের মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ কার্যকারিতা দেখা গেছে। প্রায় প্রতিটি স্থানেই এক ঘণ্টা পর থেকে রাস্তাঘাট শুকাতে শুরু করে এবং বায়ুদূষণও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। আর দেড় ঘণ্টা পর দূষণ পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরে যায়।
জানতে চাইলে গবেষক দলের প্রধান ও ক্যাপসের পরিচালক অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, পানিবাহী ট্রাক কনটেইনার শুধু সড়কের একটি লেন ভেজাতে সক্ষম। অথচ ঢাকা শহরের বেশির ভাগ সড়ক দুই লেনবিশিষ্ট। অপরদিকে সড়কে পানি ছিটানো হলেও ফুটপাত শুকনো থেকে যায়। ফলে নাগরিকদের পথ চলতে হয় দূষিত বাতাসের মধ্যেই। তাই বায়ুদূষণ রোধ করার জন্য সড়কের উভয় পাশে একই সময়ে পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত। দীর্ঘ সময় বায়ুদূষণ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ফায়ার হাইড্রেন বসিয়ে নির্ধারিত সময় পর পর পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
নয়াশতাব্দী/এমডি/জেডএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ