ঢাকার মঞ্চে অন্যতম নাট্য সংগঠন বটতলার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অভিনেতা, নির্দেশক মোহাম্মাদ আলী হায়দারের পঞ্চাশতম জন্মদিন এবং দলের নন্দিত প্রযোজনা খনা নাটকের পঞ্চাশতম মঞ্চায়ন উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সংগঠনের কর্মীরা।
জানা গেছে, আগামী ২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে এই আয়োজন চলবে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত । প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, অভিনেতা এবং নাট্য নির্দেশকের ৫০তম জন্মবার্ষিকী এবং দলের অন্যতম প্রযোজনা খনা নাটকের ৫০তম মঞ্চায়ন উপলক্ষে নাট্যকার সামিনা লুৎফা নিত্রাসহ বটতলার সদস্যরা বেশ উচ্ছ্বসিত। বটতলার তিনদিনের আয়োজন প্রসঙ্গে নাট্যকার অভিনেত্রী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা নিত্রা বলেন ‘মোহাম্মাদ আলী হায়দার এক হুল্লুড়ে মানুষ। সারা দিন আড্ডা, গান আবার আড্ডা দিতে পারলে যার জীবনে আর কিচ্ছু চায় না, তার জন্মদিনের আয়োজনে একটু হুল্লোড় না করলে হয়, বলেন? খনা, দ্য ট্রায়াল অফ মাল্লাম ইলিয়া, জতুগৃহ, ক্রাচের কর্নেল, যমুনা, টেইল অফ টু ফ্রেন্ডস, মধুশিকারীর মতো সিরিয়াস সব নাটক নির্দেশনা দিয়েছে বলে হায়দার একটা সিরিয়াস মানুষ তা কিন্তু না। তিনি আবার একটু লাজুকও। সারা বছর অনেক পরিকল্পনা করেও সেসব করতে পারলাম না কারণ উনি এত আয়োজনে খুবই বিব্রত। অগত্যা যা করতে পারা যাচ্ছে তাহলো ‘পঞ্চাশে হায়দার: বটতলা’র উদযাপন-২০২২।
নিত্রা জানান আগামীকাল ২ ডিসেম্বর বিকাল ৩টা-৩০মি. বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে ‘বটতলা’র আলাপ মোহাম্মদ আলী হায়দার: সৃজনভাবনা ও প্রয়োগ’ শীর্ষক আলোচনা, ৩ ডিসেম্বর রাত ১১-৫৯ মিনিটে বটতলার পারফর্মেন্স স্পেস পেজে অনলাইনে তথ্যচিত্র অবমুক্তকরণ’ এবং আগামী ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭-৩০ মিনিটে শিল্পকলা একডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মোহাম্মদ আলী হায়দার নির্দেশিত খনা নাটকের প্রদর্শনী ও আনন্দ আড্ডার আয়োজন করা হয়েছে। তিনদিনের আয়োজনে আমাদের দর্শক, বন্ধু ও শুভাকাঙ্খীসহ সবাইকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ’।
প্রসঙ্গত, সামিনা লুৎফা নিত্রা রচিত এবং মোহাম্মদ আলী হায়দার নির্দেশিত বটতলার ‘খনা’ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন সামিনা লুৎফা নিত্রা, ইমরান খান মুন্না, কাজী রোকসানা রুমা, ইভান রিয়াজ, তৌফিক হাসান, শেউতি শাগুফতা, মিজানুর রহমান, সুমিত তেওয়ারি রানা, ম. সাঈদ, পঙ্কজ মজুমদার, হামিদুল ইসলাম হিল্লোল, হুমায়ূন আজম রেওয়াজ, নাফিউল ইসলাম, হাফিজা আক্তার ঝুমা। ‘খনা’ নাটকে সুর ও সংগীতে আছেন শারমিন ইতি, হুমায়ূন আজম রেওয়াজ, শেউতি শাগুফতা, লোচন পলাশ। ‘খনা’ নাটকের মঞ্চ ও আলোক পরিকল্পনা আবু আউদ আশরাফী, সুর ও সংগীত পরিকল্পনা ব্রাত্য আমিন, শারমিন ইতি ও জিয়াউল আবেদীন রাখাল, পোশাক পরিকল্পনা তাহমিনা সুলতানা মৌ ও তৌফিক হাসান ভূঁইয়া, কোরিওগ্রাফি মোহাম্মদ রাফি ও নাসির উদ্দিন নাদিম, প্রপস হুমায়রা আখতার এবং পোস্টার তৌহিন হাসান।
খনা কাহিনিতে দেখা যায় এক বিদুষী খনা যার অন্য নাম লীলাবতী। তার গল্পটা অনেক পুরনো, কিংবদন্তির ঘেরাটোপে বন্দি। তবে যতটুকু জানা যায় তাতে বোধ হয় যে তিনি এক বিদুষী জ্যোতিষী, স্বামী মিহিরও একই বৃত্তিধারী। শ্বশুর যশস্বী জ্যোতিষী বরাহ মিহির। পুত্রজায়ার যশ, খ্যাতি ও বিদ্যার প্রভাব দর্শনে বরাহের হীনমন্যতা ও ঈর্ষা। শ্বশুরের নির্দেশে লীলাবতীর জিহ্বা কর্তন ও তার খনা হয়ে ওঠার গল্প পেরিয়েছে প্রজন্মের সীমানা। খনার বচনের মাঝে টিকে থাকা শত বছরের আগের জল, মাটি, ফসল আর মানুষের গন্ধ মাখা জ্ঞান আর সত্যটুকু কি সত্যি লীলাবতীর? নাকি এ সত্য-তথ্য সবই এ ভূ-খন্ডের বৃষ্টি, পলি, আর জল হাওয়ার সঙ্গে মিশে থাকা যুগান্তরের সামষ্টিক জ্ঞানের সংকলন? লীলাবতী শুধুই কি একজন নারী বলে তার পরিণতি নির্মম, নাকি তিনি নারী হয়ে মিশেছিলেন চাষাভুষোর সনে, সেই তার কাল।
পুরুষতন্ত্র না শ্রেণি কাঠামো, নাকি উভয় দাঁড়ায় লীলাবতীর বিপ্রতীপে। মিহির বা প্রকৃত লোকালয় কারোর পরোয়া না করা জীবন ত্যাগী নেশার ঘোর তাকে নিয়ে যায় দিগন্তের ওপার। খনার সত্য শুধু থেকে যায় কৃষকের মুখে। তবু প্রশ্ন থাকে, খনার সত্যই কি একক সত্য? নাকি আজকে নির্ভুল যা কাল তা হতে পারে অসত্য? শুধু সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর যে মৃত্যুনেশা তার সে নেশা কি এক রোখা জেদ? খনা নিজেই নিজেকে সম্মুখীন প্রশ্ন করেন। এভাবেই এগিয়ে যায় খনা নাটকের কাহিনি।
নয়া শতাব্দী/আরআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ