বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা আর দুদিন বাদেই শুরু হচ্ছে। সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এর উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়েছে। বলা যায় বাংলাদেশের ফুটবল পাগল মানুষ মূলত আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলে বিভক্ত। কাউকে কাউকে আবার জার্মানি, ফ্রান্স, পর্তুগাল, স্পেনের সাপোর্ট করতেও দেখা যায়। দেশের বেশির ভাগ মানুষের মতো শোবিজের তারকারাও দুই শিবিরেই বিভক্ত।
দেশের চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়ক শাকিব তার পছন্দের দল কোনটা তা বলতে চান না। তবে শাকিব খান ২০১৪ সালের বক্তব্যে ব্রাজিল, ২০১৮ সালের বক্তব্যে আর্জেন্টিনা, ২০২১ সালের বক্তব্য আর্জেন্টিনার দিকে। তাহলে ২০২২ সালে শাকিবের বক্তব্য কী? সেটাই এখন দেখার অপেক্ষায় তার ভক্তরা। তবে চিত্রতারকা অপু বিশ্বাস জানিয়েছেন তিনি ব্রাজিল সাপোর্ট করেন। আর তার একমাত্র পুত্র আব্রাহাম খান জয় আর্জেন্টিনা সাপোর্ট করেন।
এদিকে, ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল চলাকালীন বুবলী জানিয়েছিলেন যে দলই ভালো খেলে, সে দলকেই সমর্থন করি। তবে মেসি-নেইমারের খেলাও ভালো লাগে। চিত্রনায়িকা মৌসুমী আর ওমর সানী দুজনেই ব্রাজিলের ভক্ত। শুধু তাই নয়, তাদের দুই সন্তানও ব্রাজিল দলের সমর্থক বলেই জানা যায়।
‘হঠাৎ বৃষ্টি’খ্যাত চিত্রনায়ক ফেরদৌস সব সময় আর্জেন্টিনা দলের সমর্থক। ম্যারাডোনার খেলা দেখেই দলটিকে মনে জায়গা দিয়েছেন। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনয়শিল্পী চঞ্চল চৌধুরী আর্জেন্টিনার কট্টর সমর্থক চঞ্চল। বিশ্বকাপ ফুটবলে ব্রাজিলের কট্টর সমর্থক গায়ক আসিফ আকবর। ব্রাজিল প্রিয় দল হলেও প্রিয় খেলোয়াড় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। কণ্ঠশিল্পী আঁখি আলমগীর সমর্থন করেন ব্রাজিল।
চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক ব্রাজিলের সমর্থক। তবে প্রিয় খেলোয়ারের তালিকায় রয়েছেন মেসি। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর গোল উৎসবও তার পছন্দের। চিত্রনায়ক নিরব আর্জেন্টিনার ভক্ত। তারকা দম্পতি মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ব্রাজিল সমর্থন করলেও তিশা আর্জেন্টিনার ভক্ত।
জনপ্রিয় অভিনেতা জাহিদ হাসান ছোটবেলা থেকেই আর্জেন্টিনা সমর্থন করেন। অন্যদিকে ছোট পর্দার আরেক জনপ্রিয় মুখ অপূর্ব সমর্থন করেন ব্রাজিল। অভিনেতা, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান ছোটবেলা থেকে আর্জেন্টিনার সাপোর্টার। ম্যারাডোনা থেকে মেসি-সবাইকেই তিনি শ্রদ্ধা করেন, ভালোবাসেন; তাদের খেলা ভালো লাগে। এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মোনালিসা ব্রাজিলের সমর্থক।
অভিনেতা সিয়াম আহমেদও ব্রাজিলের সমর্থক। ২০০৬ সাল থেকে নিয়মিত খেলা দেখেন অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিম। তার পছন্দের দল ব্রাজিল। এই তালিকায় আছেন মিশা সওদাগর, সংগীতশিল্পী বাপ্পা মজুমদার, কোনাল, পড়শীসহ আরো অনেকেই। জনপ্রিয় অভিনেত্রী দীপা খন্দকার, সুমাইয়া শিমু, নিপুণ, নাদিয়া আহমেদ, মাহিয়া মাহি, পূজা চেরিসহ আরো অনেকেই আর্জেন্টিনার সমর্থক। তবে অভিনেতা এফ এস নাঈম জার্মানির সমর্থক।
দেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী রাশেদ উদ্দিন আহমেদ তপু ছোটবেলা থেকেই ব্রাজিল সমর্থক। তবে এবারের বিশ্বকাপটা আর্জেন্টিনার হাতে দেখতে চান এই তারকা! এর কারণ দলটির প্রাণভোমরা বিশ্বসেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি।
বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তপু বলেছেন, ‘এবারের কাতার বিশ্বকাপ-২০২২ হতে পারে মেসির শেষ বিশ্বকাপ! মেনে নিতে কষ্ট হয়। জীবনের প্রথম থেকেই আমি ব্রাজিল দলের সমর্থন করে এসেছি। আমার দৃষ্টিতে রোনালদিনহো পৃথিবীর অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। পেলে, ম্যারাডোনা, মেসি, রোনালদোর সঙ্গে রোনালদিনহোর নাম ও উচ্চারিত হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি, যদিও তার খেলোয়াড়ি জীবন খুব দ্রুতই শেষ হয়ে গিয়েছিল।
২০০২ বিশ্বকাপের পর আমি ফুটবল খেলা ওভাবে আর অনুসরণ করতে পারিনি। ভাবতাম আমাদের সময়ের ফুটবলের সর্বোচ্চ সৌন্দর্য দেখা হয়ে গেছে। অনেকের মতোই আমার মনে হয় মেসি জন্মগতভাবে একজন সাবলীল ফুটবলার, আর রোনালদো হচ্ছে কঠোর পরিশ্রমে নিজেকে গড়ে তোলা একজন। তবে একান্ত নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি এবং ভালো লাগার জায়গা থেকে আমার মনে হয় মেসি সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় এবং একজন নিঃস্বার্থ ভালো মানুষও বটে।
মনোমুগ্ধকর ড্রিবলিং, সঠিক সময় সঠিক পাস, নিঃস্বার্থ, ফ্রি কিকে শ্রেষ্ঠত্ব, নির্ভুল পাস, দলের প্রয়োজনে নিজের অবস্থান মানিয়ে নেয়া, এছাড়াও আরও অনেক কারণে। সর্বোপরি প্রতিপক্ষের গতি প্রকৃতি সবার আগেই তার মস্তিষ্ক বুঝতে পারে এবং সেই অনুযায়ী খুব দ্রুত ড্রিবলিংই তাকে অন্যদের থেকে অনন্য করে তুলেছে, আর তার সঙ্গে নির্ভুল পাস ও ফ্রি কিক তো আছেই।
অনেকেই হয়তো ভাবছেন একজন ব্রাজিল সমর্থক হয় কেন আমি মেসির বন্দনায় মত্ত? হ্যাঁ, আমি অবশ্যই ব্রাজিল দলের সমর্থক, তবে আমি তার চেয়েও বড় সমর্থক ফুটবল খেলার। যেই খেলোয়াড়ের খেলা আমার ছোট জীবনে এত সুন্দর কিছু মুহূর্ত উপহার দিয়েছে তাকে অস্বীকার করাটা হবে ভণ্ডামি।
আমি মনে প্রাণে চাই মেসি তার জীবনে একটা বিশ্বকাপ জিতুক, কিন্তু তা অবশ্যই ব্রাজিলকে না হারিয়ে। আমরা সারাজীবন ব্রাজিল -আর্জেন্টিনার নামে অনেক ঝগড়া, কথা কাটাকাটি দেখেছি, যা কখনোই একটা সীমারেখা অতিক্রম করা উচিত নয়। ভাবুন তো আমরা এখানে যুদ্ধ করছি আর ওইদিকে মাঠে মেসি আর নেইমার গলা জড়িয়ে হাঁটছে!’ সবশেষ তপু লেখেন ‘তবে যুক্তি-তর্ক-ঝগড়া একদম না করলে আবার বিশ্বকাপের আনন্দ থাকবে না। এবার ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার খেলা হলে আমার দেখতে খুব কষ্ট হবে। তবে এটুকু জানি শেষ পর্যন্ত ফুটবলেরই জয় হবে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ