সম্প্রতি ছোট পর্দার বিভিন্ন কন্টেন্ট নিয়ে বিস্তর আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে দেশের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এবং ওয়েব সিরিজ বিস্তারের কারণে দেশের নাট্যাঙ্গন ও অভিনয়শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নাটকের বিষয়বস্তু এবং এর সংলাপ উপস্থাপনার ক্ষেত্রে নানা অভিযোগ অনুযোগ আর সমালোচনা হলেও এর কোনো উন্নতি বা সংশ্লিষ্টদের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। যেন এই শিল্পের প্রতি কারো কোনো দায়বদ্ধতা নেই।
নাটকের বাজেট যেমন কমেছে, তেমনি নাটকের বিষয়বস্তু উপস্থাপনায় শিল্পী এবং কলাকুশলীদের নানাভাবে হেয় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই। বিশেষ করে সম্প্রতি শিল্পকলা একাডেমিতে অভিনয় শিল্পী সংঘ আয়োজিত ‘সাম্প্রতিক কাহিনি ও অভিনয় বাস্তবতা’ এবং গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ মিলনায়তনে ‘ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশি চলচ্চিত্র’ শীর্ষক সেমিনারে এই সব নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়।
বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ মিলনায়তনে ‘ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশি চলচ্চিত্র’ শীর্ষক সেমিনারে অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী বলেন, বিনোদন জগতের নতুন মাধ্যম ওটিটি। এর মাধ্যমে যে কোনো সময়, যে কোনো জায়গা থেকে বিভিন্ন কনটেন্ট উপভোগ করতে পারেন দর্শক। দেশেও সম্প্রতি ওটিটি দারুণ বিস্তার লাভ করেছে। তবে এই মাধ্যমটির জন্য নীতিমালা ও সেন্সরশিপের বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন ‘ওটিটি বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। ভবিষ্যতে ওটিটির মাধ্যমে বাংলাদেশে চলচ্চিত্র নেতৃত্ব দেবে। এখানকার চলচ্চিত্রের সেন্সরশিপের বিষয়টি আলোচনা করা বা পরিষ্কার করা প্রয়োজন।
নির্মাতা রেদওয়ান রনি বলেন, ‘ওটিটির মাধ্যমে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য ওটিটি টিকিয়ে রাখতে হবে। এর নীতিমালা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। গ্লোবাল বিজনেস প্ল্যাটফর্মকে মাথায় রেখে দেশের ওটিটি নীতিমালা তৈরি করা প্রয়োজন। এই নীতিমালা যেন গ্লোবাল পলিসির সঙ্গে যেন সাংঘর্ষিক না হয়।
নির্মাতা রায়হান রাফী বলেন, কোভিডের সময় ওটিটির মাধ্যমে দর্শক তৈরি হয়েছে। বর্তমানে সিনেমা হলে এত দর্শক আসছে, এরা সবাই ওটিটি কন্টেন্ট দেখা মানুষ। ওটিটি ঘিরে নতুন নতুন নির্মাতা তৈরি হচ্ছে। সেন্সরশিপ দিয়ে বা নীতিমালা দিয়ে এটাকে যেন বাধাগ্রস্ত না করা হয়।’
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের প্রভাষক, গবেষক শুভ কর্মকার। স্বাগত আলোচনা করেন বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের পরিচালক ড. মো. মোফাকখারুল ইকবাল। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক মো. নিজামুল কবীর। অন্যদিকে শিল্পকলায় ‘সাম্প্রতিক কাহিনি ও অভিনয় বাস্তবতা’ সেমিনারে নির্মাতা ও অভিনেতা তৌকীর আহমেদ টেলিভিশন নাটক ও অভিনয়ের দুর্বলতা, নাটকের বাজেটসহ নানা বিষয় তুলে ধরেন।
অভিনেতা জাহিদ হাসান বলেন, এখন আমরা নাটকের শুটিং করি এক দিনে। কারণ বাজেট কম, সময় কম। এই মানসিকতা আমাদের নাটক ও টেলিভিশন শিল্পকে শেষ করে দিয়েছে। এতদিন ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির মতো এমন পরিস্থিতিতে কখনো পড়িনি। অভিনয়ের পাশাপাশি আমরা অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী লেখালেখির বিষয়ে কাজ করি। সেক্ষেত্রে গল্প এবং সংলাপে বেশ কিছু ঘাটতি থাকে। যার জন্য অভিনয় এবং গল্প ঠিকঠাক কাজ করে না। এছাড়া এখন রাতে স্ক্রিপ্ট দিয়ে বলে সকালে শুটিং, সেটাও আবার এক দিনেই শেষ হবে, তাহলে আমরা নিজেদের কী আর উপস্থাপন করব!
অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী বলেন, আমাদের মুখের মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে গেছে। আর পিঠের মেরুদণ্ডের কথা বাদই দিলাম। আমরা আসলে যা কিছু বলি তা করতে পারি না। তাই মনে হয়, বলে নয়, করে দেখাতে হবে। তা না হলে টেলিভিশন নাটক ও ছোট পর্দার শিল্পীরা ধ্বংস হয়ে যাবে। যেদিন থেকে টেলিভিশন নাটক কন্ট্রাক্টে চলে গেছে, সেদিন থেকেই এই ইন্ডাস্ট্রি শেষ হয়ে গেছে। মাছের দামের মতো দামাদামি করে এখন নাটক নির্মাণ করা হয়। এর কারণও আছে অনেক, যেগুলো আমরা জানি কিন্তু বলার সাহস রাখি না। তাই আমাদের নিজেদের আরও শক্ত হতে হবে।
তারিন জাহান বলেন, এখন সবকিছুই ভিউয়ের ওপর নির্ধারণ করা হয়। আর সবচেয়ে বড় শিল্পী এখন ভিউয়াররা। তারা দেখলেই নাটক হিট হয়। যার ফলে টেলিভিশন কোম্পানিগুলো ভিউয়ারদের কথা মাথায় রেখে শিল্পী ও গল্প নির্ধারণ করেন। তাই আমি মনে করি এখন শিল্পীদের থেকেও বড় শিল্পী ইউটিউব-ফেসবুকের দর্শকরা।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ