ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আলোচনায় পাঁচ চলচ্চিত্র নির্মাতা

প্রকাশনার সময়: ৩০ অক্টোবর ২০২২, ১১:৩৬

বলা হচ্ছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে সম্প্রতি সুবাতাস বইছে। বৈচিত্র্যময় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিসম্পন্ন সেন্সরবোর্ড কর্তৃপক্ষের চৌকাঠ মাড়িয়ে বিগত প্রায় এক বছর ধরে প্রতি সপ্তাহেই একাধিক চলচ্চিত্র মুক্তি পাচ্ছে। মুক্তিপ্রাপ্ত এসব চলচ্চিত্রের বেশিরভাগই দর্শকরা লুফে নিয়েছেন। ফলে শিল্পীদের পাশাপাশি আলোচনায় এসেছেন চলচ্চিত্র নির্মাতারা। সম্প্রতি আলোচিত বিভিন্ন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন রায়হান রাফী, মেজবাউর রহমান সুমন, মাহমুদ দিদার, মোস্তাফিজুর রহমান মানিক এবং সাজ্জাদ খান-

রায়হান রাফী : সময়ের সবচেয়ে আলোচিত নির্মাতা। ‘পোড়ামন-২, ‘দহন’, ‘পরাণ’ এবং সর্বশেষ ‘দামাল’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করে দারুণভাবে প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। মাঝে ‘জানোয়ার’ নামে একটি ওয়েব সিরিজ নির্মাণ করেও বেশ আলোচনায় ছিলেন রায়হান রাফী। ব্যক্তিগত জীবনে তরুণ এই নির্মাতা একজন হাফেজও। তারপরেও চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। তার নির্মিত প্রায় প্রতিটি চলচ্চিত্র দারুণভাবে ব্যবসা সফল হয়েছে। তার নির্মাণশৈলী এমন এক পর্যায়ে নিয়ে গেছেন যে তার নাম শুনেই দর্শকরা হলে যাচ্ছেন এবং চলচ্চিত্র উপভোগ করে তার প্রশংসা করছেন। তার হাত ধরে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

মেজবাউর রহমান সুমন : ছোট পর্দার নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমন। অসংখ্য নাটক টেলিফিল্ম ও বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণ করে দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন সুমন। তবে তিনি সবচেয়ে বড় চমক দিয়েছেন ‘হাওয়া’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করে। চলচ্চিত্রটি এতটাই সফল যে দেশের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক রাজ্য এবং ইউরোপের কানাডাসহ বেশ কয়েকটি দেশে চলচ্চিত্রটি প্রবাসীসহ বিভিন্ন ভাষাভাষি মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবে চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্যে শালিক পাখিকে খাচায় আটকে রাখা এবং আর একটি দৃশ্যে সেই শালিখকে রান্না করে খাওয়ার দৃশ্য দেখানোর অভিযোগে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। অবশ্য পরে সে মামলা থেকে তাকে রেহাই দেয়া হয়। সর্বশেষ ভারতের পশ্চিবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতায় বাংলাদেশি চলচ্চিত্র উৎসবে ‘হাওয়া’ চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনের পর ব্যাপক প্রশংসা পায়।

মাহমুদ দিদার : ছোট পর্দার আরেক মেধাবী এবং আলোচিত নির্মাতা মাহমুদ দিদার। ২০১১ সাল থেকে শুরু করে অসংখ্য নাটক টেলিফিল্ম নির্মাণের অভিজ্ঞতায় ২০১৯ সালে বিশাল আয়োজনে নির্মাণ করেন ‘বিউটি সার্কাস’ নামে একটি ব্যয়বহুল চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্রে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সার্কাসের সঙ্গে জড়িত মানুষের জীবন সংগ্রাম তুলে ধরা হয়। চলচ্চিত্রটি নির্মাণের শুরু থেকেই আলোচনায় ছিল। এর অন্যতম অভিনেত্রী জয়া আহসান ছাড়াও আলোচনায় ছিলেন নির্মাতা মাহমুদ দিদার। চলচ্চিত্রটি এবছর মুক্তি পাওয়ার পর ব্যাপক আলোচনায় আসে। সেই সঙ্গে প্রশংসার জোয়ারে ভাসেন এর নির্মাতা মাহমুদ দিদার। ‘বিউটি সার্কাস’ এর সাফল্যের ধারাবাহিকতায় গুণী এই নির্মাতার কাছে আরও ভালো ভালো চলচ্চিত্র আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মোস্তাফিজুর রহমান মানিক : প্রতিভাবান তরুণ নির্মাতা মোস্তাফিজুর রহমান মানিক। ২০০৫ সালে শাবনুরকে নিয়ে ‘দুই নয়নের আলো’ নামে প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন। চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী শাবনুরসহ মোট তিনটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পায়। এরপর একে একে ২০০৯ সালে ‘মন ছুঁয়েছে মন’, ২০১১ সালে ‘মা আমার চোখের মনি’, ২০১৩ সালে ‘কিছু আশা কিছু ভালোবাসা’, ২০১৫ সালে ‘চুপি চুপি প্রেম’ এবং ২০১৮ সালে ‘জান্নাত’ নামের চলচ্চিত্রগুলো নির্মাণ করেন। সর্বশেষ ‘জান্নাত’ চলচ্চিত্রটিও শ্রেষ্ঠ পরিচালকসহ অন্তত পাঁচটি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায়। কিন্তু এর পর আর ঠিক সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি মানিক। তবে আশার কথা চলতি বছর মানিক পরিচালিত দু’দুটি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ‘আশির্বাদ’ এবং অন্যটি ‘যাও পাখি বলো তারে’। দুটি চলচ্চিত্রই এভারেজ ব্যবসা করেছে। এই দুই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন মোস্তাফিজুর রহমান মানিক। নির্মাণাধীন ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা’সহ আরও একাধিক চলচ্চিত্র।

সাজ্জাদ খান : বেশ কিছু টিভি নাটক নির্মাণ করে পরিচিতি পেয়েছেন তরুণ নির্মাতা সাজ্জাদ খান। তবে কয়েক বছর আগে ‘জিহাদ’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের ঘোষণা দেন তিনি। তবে তার আগে ‘সাহস’ নামে ধর্ষণবিরোধী একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করে চরম সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে আলোচনায় আসেন। যদিও অতিরিক্ত পরিমাণ অশ্লীল সংলাপ থাকার অভিযোগে চলচ্চিত্রটি সেন্সরবোর্ড আটকে দেয়। যদিও বোর্ডের এ অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন সাজ্জাদ খান। সম্প্রতি সাংবাদিক ও নাট্যকার অপূর্ণ রুবেলের গল্প ও চিত্রনাট্যে তার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন সাজ্জাদ খান। ‘কাঠ গোলাপ’ নামের এই চলচ্চিত্রটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। আলোচনা সমালোচনা আগাম ইঙ্গিত দিচ্ছে ‘কাঠ গোলাপ’ ভালো একটি কাজ হতে যাচ্ছে। সাজ্জাদ খানের মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্র আরও সমৃদ্ধ হবে এটা প্রত্যাশা চলচ্চিত্র দর্শক ও শুভানুধ্যায়ীদের।

এছাড়া ৩৫০টির বেশি নাটক আর ডজনখানেকেরও বেশি বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাতা তপু খান ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’ নামের একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন। চলচ্চিত্রটি আগামী নভেম্বর মাসে মুক্তি পাবে বলে জানিয়েছেন তপু খান। শাকিব খান বুবলির বিচ্ছেদ গুঞ্জনের মধ্যে সোনারগাঁ হোটেলে কড়া নিরাপত্তায় চলচ্চিত্রের একটি গানের শুটিং করে আলোচনায় ছিলেন তপু খান। এছাড়া সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘বসন্ত বিকেল’ চলচ্চিত্রের ব্যতিক্রমী প্রচারণায় আলোচনায় রয়েছেন এর নির্মাতা রফিক সিকদার। চলচ্চিত্রটি দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।

নয়া শতাব্দী /আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ