মুক্তিযুদ্ধের সময় অস্ত্র হাতে নিয়ে রণাঙ্গনে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। দেশকে পরাধীনতার কবল থেকে মুক্ত করে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন গোটা জাতিকে। রণাঙ্গনে যোদ্ধারা যেভাবে ভূমিকা রেখেছিলেন, তৎকালীন ফুটবলাররাও নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন জাতিকে মুক্তির স্বাদ এনে দিতে। গঠন করেছিলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল। ফুটবল খেলে অর্থ সংগ্রহ করে সেই অর্থ তুলে দেন মুক্তিবাহিনীর হাতে। যার কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অবদানও এদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে৷
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের গল্পের ছায়া অবলম্বনে রায়হান রাফী নির্মাণ করেছেন ভিন্নধারার চলচ্চিত্র 'দামাল'। ছবিটি মুক্তি উপলক্ষে এই ছবি ও এর নির্মাতা রায়হান রাফিকে নিয়ে নিজের ফেসবুক আইডিতে এক দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ফারুকীর সেই স্ট্যাটাসই হুবহু তুলে ধরা হলো নয়া শতাব্দীর পাঠকদের জন্য...
ছেলেটা মাদরাসায় পড়ছে, ভালো ইংরেজি বলে না, আমাদের হাই-সোসাইটির সদস্য না, বা ওর ছবিতে একটা র ব্যাপার থাকে, সেই জন্যে ওকে নিয়ে সুশীল সমাজ খুব একটা টগবগায় না। কিন্তু ওর প্রথম শর্ট ফিল্ম দেখার পরেই আমার মনে হইছিলো ও অডিও-ভিজুয়াল ল্যাংগুয়েজটা বোঝে। এমন না যে, সে একটা ফিনিশড প্রোডাক্ট। বা আদৌ কেউ কি ফিনিশড প্রোডাক্ট হয়? আমরা প্রত্যেকেই তো দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শিখতে শিখতে যাই।
বলছিলাম রায়হান রাফির কথা। আর এতো কথা মনে পড়লো ওর দামাল দেখে। আমরা যখন ফিল্ম বানাইতে শুরু করি, তখন আমাদের চাওয়া ছিলো আমরা অঁতর ফিল্ম বানাবো কিন্তু সেটা দর্শকের কাছেও পৌঁছবে। থার্ড পারসন সিঙুলার আর টেলিভিশন ছবি দুইটা নিয়ে বড় দর্শকের কাছে পৌঁছানো গেছিলো। শনিবার বিকেল সম্ভবত আরো বেশী দর্শকের কাছে পৌঁছাবে বলে আমার বিশ্বাস। কিন্তু আমরা এটাও জানতাম অঁতর সিনেমার আগানোর সাথে হাতে হাত ধরাধরি করে আছে “মূলধারা”র আগানোর ব্যাপারটা! মূলধারা লিখে কোটেশনের মধ্যে ফেললাম কেনো আমি নিজেকে মূলধারাও মনে করি! সে আলোচনা আরেকদিন হবে। তো এই যে আমাদের মান্ধাতার “মেনস্ট্রিম” এটা স্মার্ট হওয়ার জন্য ছিলো আমাদের অপেক্ষা। মনপুরা বা আয়নাবাজি বা এরকম আরো কিছু ছবি স্মার্ট মূলধারার ভালো উদাহরন।
দামাল স্মার্ট মূলধারার মধ্যে একটা বড় উদাহরন হয়ে থাকলো। দামালের স্ট্রাকচার লিনিয়ার কোনো সহজ স্ট্রাকচার না। আবার একই সাথে দামাল অ্যাবসলিউটলি অরিজিনাল কিছু নিয়ে ডিল করে নাই। এই ধরনের ছবি যদি আপনাকে এনগেজ করতে হয় তাহলে ছবিটার স্ক্রিপটিং, ফিল্মিং, এডিটিং, মিউজিক স্কিলফুলি করতে হয়। রায়হান রাফি ও তার টিম এই কাজটা সফলভাবে করতে পারছে। তার মানে কি দামালে কোনো ডাউনসাইড নাই? নিশ্চয়ই আছে। কোথায় থাকে না? সেই ডাউনসাইড আমার বলারও প্রয়োজন নাই। সেটা রাফি নিজ দায়িত্বেই বুঝে পরের ছবিতে খেয়াল রাখবে। আমার শুধু বলা প্রয়োজন, গুড জব, রাফি। কিপ ইট আপ। সামনে আরো ভালো কাজ দেখার অপেক্ষায়। কোন ছবি কখন কেনো ব্যবসাসফল হয় বলা মুশকিল। মাঝে মধ্যে এটা নিয়ে বিস্মিতও হই। কিন্তু দামাল ব্যবসাসফল হবে আশা করি। এটা হলে আমাদের সিনেমার জন্য একটা দারুন খবর হবে।
বিঃদ্রঃ এই দামাল ঝড়ের মধ্যে আমি আরেকটা ছোট কাজ দেখছি। নাজমুল নবীনের চরকি ফ্লিক “আড়াল”! কাজটা অন্য রকম। আমার ভালো লাগছে। প্রিতম হাসান খুব ভালো অভিনয় করছে। সামনে নবীনের কাজ দেখতে অপেক্ষা করবো।
নয়াশতাব্দী/এমএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ