পরিবারের অমতেই শুরু সংগীত চর্চা। গান নিয়ে বাবার সাথে মান অভিমান, তারপর সংগীতের নেশায় ঘর ছেড়ে অনিশ্চিত গন্তব্যে পা বাড়ানো। বাড়ি থেকে পালিয়ে চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিংয়ে গিয়ে থাকতে শুরু করা সেদিনের সেই 'বাবার অবাধ্য' ডানপিটে ছেলেটাই আজকের জেমস।
উপমহাদেশের প্রখ্যাত রকস্টার জেমসের পুরো নাম মাহফুজ আনাম জেমস। দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নগর বাউল জেমস নামেই তার অধিক পরিচিতি। আজ তার ৫৮তম জন্মদিন। জাতীয় পুরস্কারজয়ী এই কিংবদন্তি শিল্পীর জন্মদিনে দৈনিক নয়া শতাব্দী পরিবারের পক্ষ থেকে রইল হৃদয় উজাড় করা শুভেচ্ছা।
আজিজ বোর্ডিংয়ে থাকাকালীন ‘ফিলিংস’ নামের ব্যান্ড থেকে শুরু। তারপর জীবনের বাক বদলের হাজারো গল্পকে পেছনে ফেলে, নগর বাউলের দরাজ কণ্ঠের সম্মোহনী সুরে পৃথিবী মাতিয়ে রক সংগীতের ভুবনে আজকের এই রাজকীয় বিচরণ। তার মাতাল করা কণ্ঠের উন্মাদনায় কখনো বেজে উঠেছে দ্রোহের সুর, কখনো বা ঝংকৃত হয়েছে বঞ্চিত শ্রমিকের বিপ্লবী জীবন, সেলাই দিদিমনিদের জীবন সংগ্রাম, কত রাত বাবাকে না দেখার আক্ষেপ। তার গিটারের মোহময়তায় ঘরে ফিরেছে কতশত বখাটের দল। দুষ্ট ছেলেরা বেঁধেছে জোট। আকাশের তারায় মাকে খুঁজে ফিরেছে মা হারা অগণিত মানুষ।
তার দরাজ কণ্ঠের জাদুতে ভাসানী, সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু ও জিয়াউর রহমানরা আজও যেন বিচরণ করেন মহামানবের মতো। তার সুরের মুর্ছনায় বহু নাম না জানা প্রেমিক কিংবা বিরহে কাতর প্রেমিকারা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসে বুকফাটা আর্তনাদে গেয়ে উঠেছে, ‘আমি তারায় তারায় রটিয়ে দেবো তুমি আমার’।
গল্পের হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালার বাঁশির সুরে নয়, বাস্তবের যে কিংবদন্তির গিটারের মুর্ছনায় মগ্ন হয়েছে অগণিত ভক্তকূল -সেই মাহফুজ আনাম জেমস জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯৬৪ সালের আজকের এই দিনে। নওগাঁ জেলায় তার জন্ম হলেও বেড়ে উঠেছেন বন্দর নগরী চট্টগ্রামে।
মাত্র ১৬ বছর বয়সে ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘ফিলিংস’। তিনি ছিলেন সেই ব্যান্ডের প্রধান গিটারিস্ট ও ভোকালিস্ট। এরপর ১৯৮৭ সালে তার প্রথম অ্যালবাম ‘স্টেশন রোড’ প্রকাশ পায়। অ্যালবামটি সেসময় তেমন একটা সাড়া ফেলেনি। তবে পরের বছর ১৯৮৮ সালে রিলিজ হওয়া ‘অনন্যা’ দিয়ে সুপারহিট হয়ে যান জেমস। এরপর শুধুই দুর্বার এগিয়ে যাবার গল্প।
১৯৯০ সালে ‘জেল থেকে বলছি, ৯৬-এ ‘নগর বাউল, ৯৮-এ ‘লেইস ফিতা লেইস, ৯৯-এ ‘কালেকশন অফ ফিলিংস’ অ্যালবামগুলো প্রকাশ পায় ‘ফিলিংস’ ব্যান্ড থেকে।
এছাড়াও নগর বাউল থেকে ‘দুষ্টু ছেলের দল’ অথবা ‘বিজলি’ কিংবা একক অ্যালবাম ‘অনন্যা’, ‘পালাবি কোথায়’, ‘দুঃখিনী দুঃখ করোনা’, ‘ঠিক আছে বন্ধু’, ‘আমি তোমাদেরই লোক’, ‘জনতা এক্সপ্রেস’, ‘তুফান’, ‘কাল যমুনা অ্যালবামগুলো একের পর এক অগণিত শ্রোতাদের হৃদয় জয় করে নিতে থাকে।
শুধু দেশেই নয়, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আর্ন্তজাতিক পরিমণ্ডলেও ব্যাপক জনপ্রিয় নগরবাউল ব্যান্ডের এই রকস্টার। নব্বই দশক থেকে কলকাতার একটি প্রজন্মও বেড়ে উঠেছে তার গানকে অনুসরণ করে।
বাংলার পাশাপাশি হিন্দি গানে কণ্ঠ দিয়েও জয় করেছেন লাখো শ্রোতার হৃদয়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘ভিগি ভিগি’, ‘চল চলে’, ‘আলবিদা’, ‘রিস্তে’, ‘বেবাসি’।
এছাড়া সিনেমায় প্লেব্যাক করেও দারুণ সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তবে বর্তমানে অনেকটা নিরবে নিভৃতে দিন কাটে এই কিংবদন্তি শিল্পীর। বছরে কয়েকটি স্টেজ শো'র মধ্যেই এখন সীমাবদ্ধ তার গানের ভুবন।
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ