ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

১০ রূপে চঞ্চল

প্রকাশনার সময়: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২১:১০

দর্শকপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। ছোট পর্দা এরপর বড় পর্দায় অভিনয় দিয়ে নিজের জাত চিনিয়েছেন এই অভিনেতা। সম্প্র্রতি যুক্ত হয়েছেন ওটিটির মাধ্যমে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু ওটিটিতে আজ করে আবারো আলোচনায় চলে এসেছেন তিনি।

পাবনার ছেলে চঞ্চল পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায়। ১৯৯৬ সালে আরণ্যক নাট্যদলের সঙ্গে কাজ করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার অভিনয় জীবন। ২০১০ সালে মনপুরা চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ক্যারিয়ারের নানা সময় নানা মাত্রিক অভিনয় করে দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। শুধু দেশেই নয় দেশের বাইরেও তাকে নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী ও নির্মাতারা। চঞ্চল চৌধুরীর ক্যারিয়ারে আলোচিত কিছু চরিত্র নিয়ে আজকের এই আয়োজন:

জাপান ডাক্তার (সাকিন সারিসুরি)

বৃন্দাবন দাশের লেখা একটা অসাধারণ চরিত্র। পুরা নাটকে একটা চোরের গ্রামের গল্প দেখানো হয়েছে। এই গ্রামে বাইরে থেকে একজনই যায়, সেটা হলো জাপান ডাক্তার। জাপান ডাক্তার সংলাপ বলার সময় চোখ মুখের রগ ফুলিয়ে তোলে। এই রকম ফুলিয়ে শুটিং করতে গিয়ে একটা-দুইটা সিন করার পরই খুব ব্যথা করত। আর সাইকেল চালাতে গিয়ে কোনো না কোনো কারণে এক্সিডেন্ট করতাম। শরীরের কোথাও না কোথাও কেটে যেত। প্রতি লটেই এই কষ্টটা করতে হতো আমাকে। কিন্তু সিরিয়ালটা দর্শক খুব উপভোগ করত বলে কষ্ট মনে হতো না।

সোনাই (মনপুরা)

মনপুরা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের অনেক আগে পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিমের বেশ কয়েকটা নাটকে অভিনয় করেছি। নাটকের শুটিং করতে গিয়ে আড্ডায় প্রায়ই ‘ধরো বন্ধু আমার কেহ নাই’ গানটা গাইতাম। তখনো মনপুরার প্ল্যানিং হয়নি। ওই সময়ই সেলিম ভাইকে বলেছিলাম, ভাই আপনি কখনো সিনেমা করলে আমাকে গানটা গাইতে দিয়েন। তারপর বেশ কিছু দিন পরে সেলিম ভাই আমাকে একদিন ফোন করলেন, ‘ওই গানটা না, তোকেসহ সিনেমায় নিচ্ছি। প্রস্তুতি নে।’ প্রস্তুতি হিসেবে আমাকে ওজন কমাতে হলো। প্রায় ১০ কেজি ওজন কমিয়ে সোনাই হয়েছিলাম। তখন ৩৫ মিলিমিটারে শুটিং হতো। রিল যেন নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হতো আমাদের সবাইকে। তাই প্রচুর মহড়া করে তবেই শুটিং শুরু করি।

কালুয়া (মনের মানুষ)

মনপুরা তো সুপারহিট হলো। ওই সময় গৌতম ঘোষ বাংলাদেশে এলেন। আমি তখন মঞ্চে নিয়মিত অভিনয় করি। তিনি ও প্রযোজক হাবিব খান মিলে একদিন আমার অভিনীত রাঢ়াং নাটকটি দেখলেন। তিনি আমাকে ফোন করে গুলশান ক্লাবে গৌতম ঘোষের সঙ্গে দেখা করতে বললেন। দেখা করতে গেলে বললেন, ‘লালন কে নিয়ে একটা ছবি করছি। তোমার জন্য একটা চরিত্র রেখেছি। ক্যারেক্টার ব্রিফ শুনে রাজি হয়ে গেলাম। উনি আমাকে চুল দাড়ি কাটতে মানা করে দিয়েছিলেন। প্রথম দিন শুটিং করেছি শিলিগুড়ির একটা জঙ্গলে। তাও প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। এটাও একটা অন্য রকম অভিজ্ঞতা আমার জন্য। উনি আমাকে প্রথম দিন থেকেই বাবু বলে ডাকতেন।’

সোলায়মান (টেলিভিশন)

ফারুকী ভাইয়ের ‘স্বপ্ন যাবে বাড়ি’ শিরোনামের বিজ্ঞাপন করার পর থেকেই ভালো সম্পর্ক। তো উনি টেলিভিশন সিনেমার স্ক্রিপ্ট আমাকে দিয়ে বললেন, ‘এখানে দুইটা চরিত্র আছে একটা আপনি করবেন আরেকটা মোশাররফ করিম। আপনি পড়ে সিদ্ধান্ত নেন কোনটা করবেন? আমি সোলায়মান করতে চাইলাম। উনিও নাকি এটাই ভেবেছিলেন। সোলায়মান করার জন্য মোটা হতে হবে। কারণ সিনেমায় আমার বাবা-মা বেশ স্বাস্থ্যবান। তাই শুটিংয়ের প্রায় মাসখানেক আগে থেকে তিনবেলা ভাত ও ঘুমিয়ে কাটানো শুরু করলাম। শুটিংয়ে যাওয়ার আগে প্রায় ১০ কেজি ওজন বেড়ে গেল।’

আয়না (আয়নাবাজি)

অমিতাভ একদিন ফোন করে বলল, ‘চঞ্চল ভাই আপনি একদিন আমার অফিসে আসেন। একটা সিনেমা নিয়ে আলাপ করব।’ যাওয়ার পরে মুখে মুখে গল্পটা বললেন। আমি গল্প শুনে ও গুনে দেখলাম আমাকে ছয়টা চরিত্রে অভিনয় করতে হবে।

আমি বললাম, এতদিন তো একটা ছবিতে একটা চরিত্রে অভিনয় করেছি। ছয়টা তো করিনি। কীভাবে করব? অমিতাভ অভয় দিয়ে বলল, সমস্যা নেই, আমি প্রতিটি চরিত্রের আলাদা আলাদা ডিজাইন করেছি। আলাদা করে শুটিং করব। এই সিনেমার জন্য আমার আবার ওজন কমাতে হবে। শুরু হলো ডায়েটিং। ফুড চার্ট অনুযায়ী খেতাম। সকালে জিমের ইনস্ট্রাকটর এক থেকে দেড় ঘণ্টা বাসায় এসে জিম করাত। তার পর ওজন কমিয়ে শরীর ঠিক করে তবে শুটিং করেছি।

মিসির আলী (দেবী)

মিসির আলী আমার জন্য কঠিন চরিত্র ছিল। নাটকে অনেকেই এই চরিত্র করেছেন। কিন্তু সিনেমায় মিসির আলী কেউ করেনি। এরই মধ্যে আমি আয়নবাজিতে ছয়টি চরিত্র করে ফেলেছি। নতুন আর কি করব? পরিচালক ও প্রযোজকের সঙ্গে অনেক বার বসলাম। মাথার উইগ ও গোঁফ লাগানো হলো। কিন্তু দেখে মনে হয় নকল। আমাদের লাগবে কাঁচাপাকা চুল। পরে একজনের মাধ্যমে গুলশানে একটা সেলুনের খোঁজ পাওয়া গেল। সেখানে গিয়ে সমাধান হলো।

তকদীর (তকদীর)

কোভিডের সময় নিকেতনে মাঝেমধ্যে বসতাম। তানিম নূর একদিন আমাকে বলল, আমার এডি ছিল সৈয়দ শাওকী। ওরা একটা গল্প ভেবেছে আপনাকে নিয়ে। কিন্তু সাহস পাচ্ছে না। আমাকে ছোট্ট করে গল্পটা বলল। আমি শুনে বললাম, যোগাযোগ করতে বল। তারপর যেটা হলো- প্রথম দিন কারওয়ান বাজার রাত তিনটায় শুটিং করতে গিয়ে দেখি ফ্রিজার ভ্যান ম্যানুয়ালি চালাতে হবে। কিন্তু আমি তো অটো গাড়ি চালাই। ম্যানুয়ালি তো চালাতে পারি না। সেদিন শুটিং ক্যানসেল করা হলো। ফ্রিজার ভ্যানচালককে নিয়ে গেলাম বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রের পেছনের মাঠে। সেখানে প্র্যাকটিস করে পরদিন শুটিং করলাম।

সোহরাব কোম্পানি (বলি)

সোহরাব রুস্তমের গল্পকে মূল রেখে বলির গল্পটা বলা হয়েছে। আমার চরিত্রটা ছিল সোহরাব কোম্পানি। একটা দ্বীপের দখলদারিত্ব নিয়ে গল্প। যে চরিত্রের জন্য মাথার চুল কেটে ফেলতে হয়েছিল। একটা চোখ অল্প বন্ধ রাখতে হয়। সব সময় চুরুট খায়। এটা একটা অন্যরকম চরিত্র।

চান মাঝি (হাওয়া)

এটার ক্যারেক্টারাইজেশন আমি আর সুমন মিলে করেছিলাম। কারণ, আমি তো অনেক চরিত্র করেছি। নতুন কি করা যায়? ও কিছু মাঝিদের রেফারেন্স দেখাল। কাঁচাপাকা চুল-দাড়ি দিয়ে একটা রেফারেন্স আনা হলো। কিন্তু সমস্যা হলো রেফারেন্স অনুযায়ী আমার তো অত দাড়ি নেই। অল্প দাড়ি। এত ছোট চুল ও দাড়ি মেকআপে দেয়া যায় না। তাই আসল চুল দাড়িই সেরকম করার চেষ্টা করা হলো। এ ছাড়া শুরুতে মেকআপ করতে হতো ভোর রাত থেকে।

মাঝিদের যে তামাটে রং সেটা আনতে হতো পুরো শরীরে। শুটিং শুরু করার কয়েক দিন পর অবশ্য মেকআপ লাগে নাই। রোদে পুড়ে আমাদের সবার তামাটে বর্ণ হয়ে গিয়েছিলো। আর চান মাঝি অনেক দিন ধরে পান খায়। এ কারণে তার দাঁত তরমুজের বিচির মতো হয়ে গিয়েছে। এটা করার জন্য প্রতিদিন ২০-২৫টি করে পান খেতাম। শুটিংয়ের শেষদিকে দাঁত একেবারে কালো হয়ে গিয়েছিল। এ ছাড়া শুটিংয়ে জোরে কথা বলতে বলতে গলাটা বসে গিয়েছিল। সেভাবেই ডায়লগ দিয়েছিলাম। ডাবিংয়ে এসে দেখলাম গলাটা তো ঠিক হয়েছে। কিন্তু বসা গলাটাই রাখতে চাই। তাই প্রতিদিন ডাবিংয়ে এসে আধঘণ্টা চিৎকার-চেচামেচি করতাম। গলাটা বসে যেত। তারপর ডাবিং দিতাম।

কয়েদি (কারাগার)

এই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য শাওকী আমাকে বলতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল। পুরো সিজনে তো ডায়লগ নেই। আমি জেনে বললাম, সমস্যা কি, সারাজীবন তো ডায়লগ দিয়েই অভিনয় করলাম। এবার একটু ডায়লগ ছাড়াই করে দেখি। কিন্তু সমস্যা হলো সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে। এটা খুব কঠিন। এ জন্য সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের টিচার আমাদের তিন মাস শিখেয়েছেন। কখনো তিনি আমার বাসায় আসতেন কখনো আমি তার বাসায় যেতাম। পুরো শুটিংয়ে তিনি ছিলেন। তবে কষ্টকর দিক হলো জেলখানায় শুটিং করা। যদিও আমি আগেও করেছি। কিন্তু এবার বেশ কষ্ট হয়েছে।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ