ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আসলে হিট কোন ছবি

প্রকাশনার সময়: ১৯ জুলাই ২০২২, ১০:২৩

ঈদুল আজহায় মুক্তি পেয়েছে তিনটি ছবি। এগুলো হলো ‘দিন দ্য ডে’, ‘পরাণ’ ও ‘সাইকো’। ঈদের প্রথম সপ্তাহ শেষে ছবি তিনটি এখনো প্রেক্ষাগৃহে চলছে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে সুপারডুপার হিটের হিসাব-নিকাশ।

প্রেক্ষাগৃহে ফিরতে শুরু করেছে দর্শক। তারকারাও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সিনেমা দেখায়। প্রথম সপ্তাহে ‘পরাণ’ সিনেমাটির দর্শক প্রতিক্রিয়া ছিল বেশ ভালো। তবে এই সময়ে পিছিয়ে নেই অন্য দুটি সিনেমাও। এমনটাই মন্তব্য করেছেন মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র তিনটির অভিনয়শিল্পীরা। এমনকি এই ছবিগুলো নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়িও থেমে নেই। প্রত্যেকেই দাবি করছেন নিজেদের সিনেমা ‘হিট’!

এবারের ঈদে বিগ বাজেটে নির্মিত সিনেমা ‘দিন দ্য ডে’। পরিচালনা করেছেন ইরানি নির্মাতা মুর্তজা অতাশজমজম। শুটিং হয়েছে বাংলাদেশ, ইরান, তুরস্ক ও আফগানিস্তানে। এ সিনেমায় অনন্ত জলিল ছাড়াও তার স্ত্রীও চিত্রনায়িকা বর্ষাসহ আরো অনেকে অভিনয় করেছেন। অনন্ত জলিল জানিয়েছেন, এ সিনেমা নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১০০ কোটি টাকার বেশি।

ঈদের দ্বিতীয় সপ্তাহেও ১০৭টি প্রেক্ষাগৃহে চলছে ‘দিন দ্য ডে’। এ প্রসঙ্গে অনন্ত বলেন, ‘সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি চাঙ্গা করতে বিগ বাজেটে ‘দিন দ্য ডে’ নির্মাণ করেছি। এত বড় বাজেটের বাজার নেই আমাদের। তবুও আমি ঝুঁকি নিয়েছি। এ ধরনের ছবি বেশি হলে দর্শক ও বাজার দুটোই বাড়বে। যার প্রমাণ আমরা পাচ্ছি দর্শক সাড়ায়। আশা করছি ঈদের প্রথম সপ্তাহের মতো দ্বিতীয় সপ্তাহেও খুব ভালো যাবে ‘দিন দ্য ডে’। এখন পর্যন্ত দর্শক ও হল মালিকদের রেসপন্স খুবই ইতিবাচক।’

এছাড়া তারকাদের অনেকে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন ‘দিন দ্য ডে’ সিনেমাটি নিয়ে। চলচ্চিত্র পরিচালক-অভিনেতা কাজী হায়াৎ বলেছেন, ‘সিনেমা যে দেখার একটি বিষয়, সুন্দর লাগলে দর্শকরা বসে দেখে। ‘দিন দ্য ডে’ সিনেমা দেখে আজ সেটার প্রমাণ পেলাম। আমি একজন দর্শক হিসেবে ২২ বছর পর হলে বসে সিনেমা দেখলাম। এই ছবিটি ১০০ কোটি কি ২০০ কোটি সেটা দেখার বিষয় না। তবে এই সিনেমায় অনেক টাকা খরচ করা হয়েছে। সে খরচটা অহেতুক মনে হয়নি। যে টাকা খরচ করা হয়েছে সেটা অযৌক্তিক মনে হয়নি। আমার মনে হয়, এই ধরনের সিনেমা মুক্তি পেলে বাংলা সিনেমার সুদিন ফিরবে। এটি দেখার সময় আমি একটুও বিরক্ত বোধ করিনি। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো সিনেমা যখন শেষ তখন কিন্তু একটি গান ছিল। সেই গানটি ছিল দুই ভাষার গান। এটি সুন্দর একটি সিনেমা।’

সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন ‘রং নাম্বার’খ্যাত অভিনেত্রী ইপশিতা শবনম শ্রাবন্তী। তিনি ঈদে মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘দিন দ্য ডে’ দেখেছেন হলে গিয়ে। একটি সিনেপ্লেক্সে গিয়ে অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী চাঁদনীসহ আরো কয়েকজন মিলে সিনেমাটি দেখেছেন শ্রাবন্তী। ছবি দেখার অভিজ্ঞতা তিনি তার ফেসবুকে পোস্ট করে জানিয়েছেন। শ্রাবন্তী লিখেছেন, ‘আজকে আমার সুখের দিন, আমরা ‘দিন দ্য ডে’ দেখছি’।’

এমনকি প্রথম সপ্তাহ শেষ না হতেই বেড়েছে ঈদের সিনেমার প্রদর্শনী-সংখ্যা। বিশেষ করে হল মালিকদের আগ্রহ দেখা গেছে ‘পরাণ’ নিয়ে। ঈদের চতুর্থ দিন থেকেই বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্স ছবিটির প্রদর্শনী সংখ্যা বাড়িয়েছে। বর্তমানে ১২টি করে শো চলছে সেখানে। যমুনা ফিউচার পার্কের ব্লকবাস্টার সিনেমাসে মাত্র একটি শো ছিল এ ছবিটির। এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে চারটিতে। লায়ন সিনেমাসে যোগ হয়েছে নতুন চারটি শো। সব মিলিয়ে এই সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি। ঢাকার পর এবার সারাদেশের জেলা শহরের হলের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন ‘পরাণ’ পরিচালক রায়হান রাফি। প্রথম সপ্তাহের শোতেই ছবিটির বিনিয়োগ উঠে আসবে বলে আশাবাদী তিনি। সিনেমাটি সম্পর্কে তার ভাষ্য, ‘ঈদের সিনেমা ভাঙা সপ্তাহে মুক্তি পেলে (শুক্রবার ছাড়া অন্যদিন) পরের সপ্তাহকে প্রথম সপ্তাহ ধরা হয়। চাহিদা থাকা সত্ত্বেও আগাম চুক্তি থাকায় হল সংখ্যা তেমন বাড়াতে পারছি না। ‘পরাণ’ পরিবার নিয়ে দেখার মতো ছবি। এই ছবি দেখতে দর্শকদের যে জোয়ার, সেটা আমাদের আশাবাদী করেছে।’

এর আগে ‘দিন দ্য ডে’ সিনেমাটিরও প্রদর্শনী-সংখ্যা বেড়েছে বলে জানা যায়। দর্শকদের কথা বিবেচনা করে গত শুক্রবার থেকে এ ছবির শো বাড়িয়ে দিয়েছে সনি সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ। খবরটি নিশ্চিত করে সনি সিনেমা হলের কর্ণধার মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘গত তিন দিন ধরে ‘দিন দ্য ডে’ সিনেমার সব টিকেট অগ্রিম বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। তাই আমরা শোয়ের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছি শুক্রবার থেকে। এখন সবাই টিকিট পাবেন।’

এছাড়া ঈদে মুক্তি পাওয়া আরেক ছবি ‘সাইকো’। এটির পরিচালক অনন্য মামুন। ছবিতে জুটি বেঁধেছেন জিয়াউল রোশান ও পূজা চেরি। ‘সাইকো’র নায়ক রোশান দাবি করেন, তার ছবি ঢাকার বাইরে হিট! জানিয়েছেন, অন্য দুই ছবির তুলনায় ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি দর্শক ‘সাইকো’ দেখছে।

রোশান বলেন, ‘শেরপুর ও দেওয়ানগঞ্জের দুটি সিনেমা হলে গিয়েছিলাম। নিজে উপলব্ধি করেছি দর্শকরা খুব আনন্দ করে সাইকো দেখছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘প্রেক্ষাগৃহ দর্শক পরিপূর্ণ। ‘সাইকো’ সিনেমার প্রতি দর্শকের যে আগ্রহ, সেটা দেখে ভালো লাগছে। ঈদে দর্শক অ্যাকশন ঘরানার ভালো গল্পের ছবি দেখতে চায়। আর ঈদের সিনেমা মানেই ‘মাসালা’। সাইকো সেই ধরনের সিনেমা। এতে নাচ, গান, অ্যাকশন সবই আছে। দর্শক সিনেমাটি পছন্দ করেছেন বলেই দ্বিতীয় সপ্তাহে হলের সংখ্যা বেড়েছে। চাপাবাজিতে একদমই বিশ্বাস করি না। যতটুকু দেখেছি তাতেই বোঝা যায়, ঢাকার বাইরে সিনেমাটি সুপার ডুপার হিট।’

অনেকে অবশ্য ছবি তিনটির শিল্পী-কলাকুশলীদের এমন মন্তব্যে গোলকধাঁধায় পড়েছেন। তারা বলছেন, ‘ছোট্ট একটা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি আমাদের। মারামারি আর কামড়াকামড়ি না করে যে যার ফিল্মে মনোনিবেশ করি। আমারটা খুব ভালো আর অন্যসব খারাপ এই মানসিকতা দিন শেষে সবার ক্ষতিই করবে, তাছাড়া আর কিছু না। সবাই এক হলেই ইন্ডাস্ট্রি বাঁচবে নয়তো অনেক কিছুর মতো বাকি যতটুকু আছে সব যাবে।’

নয়া শতাব্দী/ এডি

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ