ঈদুল ফিতরে মুক্তি পাওয়া সিনেমার মধ্যে ‘শান’ ও ‘গলুই’ আলোচনায় এসেছে খুব। অন্য সময়ের তুলনায় এ দুটি সিনেমায় দর্শক পেয়েছেন প্রেক্ষাগৃহের মালিকরা। আর সেই ধারবাহিকতা ধরে রাখতে চলতি মাসে মুক্তির পাইপলাইনে ৬টি সিনেমা। এরই মধ্যে গত ৩ জুন মুক্তি পেয়েছে নির্মাতা অঞ্জন আইচের প্রথম সিনেমা ‘আগামীকাল’। এতে অভিনয় করেছেন মামনুন ইমন, জাকিয়া বারী মম, সূচনা আজাদ, শতাব্দী ওয়াদুদ, টুটুল চৌধুরী, আশীষ খন্দকার, সাবেরী আলম, মাসুম বাসার, ফারুক আহমেদ, তারিক স্বপন ও ইকবাল হোসেন প্রমুখ। সারাদেশের ৩০টি প্রেক্ষাগৃহে চলছে সিনেমাটি।
তবে ‘আগামীকাল’ নিয়ে দর্শকদের মাঝে আগ্রহ কম। সরেজমিনে এমন চিত্রই দেখা যায় রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্স এবং আনন্দ সিনেমা হল ঘুরে। গল্প ভালো হলেও সিনেমাটি দর্শক টানতে পারছে না বলে মন্তব্য প্রেক্ষাগৃহ কর্তৃপক্ষের। প্রেম-প্রতারণার গল্পে নির্মিত ‘আগামীকাল’। যেখানে রূপা (জাকিয়া বারী মম) বারবার প্রতারণার শিকার হন। ছোটবেলায় বাবা-মাকে হারিয়ে তিনি বেড়ে উঠেন খালার বাসায়। কিন্তু এক পর্যায়ে খালাতো বোন অবন্তির (সূচনা আজাদ) ঈর্ষা কিংবা প্রতিহিংসার শিকার হন রূপা। আর তাদের মধ্যে এই বিরোধ মূলত শাফায়েতকে (মামনুন ইমন) ঘিরে। শাফায়েত প্রেম করেন রূপার সঙ্গে। এদিকে অবন্তিও পছন্দ করেন শাফায়াতকে। গল্পনির্ভর এ ছবিতে উঠে এসেছে মনস্তাত্ত্বিক জটিলতার মতো বিষয়ও। সিনেমায় সাইকিয়াট্রিস্ট চরিত্রে অভিনয় করেছেন শতাব্দী ওয়াদুদ। কেন্দ্রীয় চরিত্রের সম্পর্কগুলো একটা সময় হয়ে উঠে দ্বন্দ্বময়। এভাবেই এগিয়ে যায় সিনেমাটির গল্প।
গত মঙ্গলবার আনন্দ সিনেমা হলে ‘আগামীকাল’ দেখতে গিয়ে বিপাকে পড়েন দর্শক। জানা যায়, সিনেমা শুরু হওয়ার ১ মিনিট পরেই সিনেমা হলে যান্ত্রিক গোলযোগের শুরু। বন্ধ হয়ে যায় স্ক্রিন। সম্পূর্ণ অন্ধকার। ছবি দেখতে পারছেন না দর্শক, শুধু সংলাপ শোনা যাচ্ছে। তারপর হল ম্যানেজারের তত্ত্বাবধানে প্রায় ২০ মিনিট পর স্ক্রিন ঠিক করা হয়। তখন ২০ মিনিট টেনে দেয়া হয় ছবিটি। পরে আবারো বন্ধ হয়ে যায় স্ক্রিন। সিনেমা শুরুর পর এভাবে কেটে যায় প্রায় ৪০ মিনিট। সিনেমা হলে তখন দর্শক সংখ্যা ৬। ক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা। হল ম্যানেজারের কাছে বারবার প্রথম থেকে ছবিটি চালু করার দাবি জানান দর্শকরা। কিন্তু না, বরং আধা ঘণ্টা টেনে দিয়েই সিনেমাটি চালু করে কর্তৃপক্ষ। গত মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে রাত ৯টার শো চলাকালে। দর্শকরা বলেন, ‘দেশে ছবির দশা যেমন, সিনেমা হলের দশাও তেমন।’
দর্শকদের সঙ্গে শতাব্দীর শোবিজের কথা হলে তারা আরো বলেন, ‘টাকা দিয়ে টিকিট কেটে সিনেমা দেখতে এসেছি। হলের সমস্যার কারণে এক ঘণ্টা পর সিনেমাটি চালু হয়েছে। বারবার ম্যানেজারকে সিনেমাটি প্রথম থেকে শুরু করতে বলা হলেও তারা ৩০ মিনিট টেনে দিয়ে চালু করেন। এমন হলে তো আর হলেই আসা যাবে না। টাকা দিয়ে কি অর্ধেক সিনেমা দেখব?’
আনন্দ সিনেমা হলের ম্যানেজার মঞ্জুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন স্ক্রিন লাগিয়েছি। যে কারণে এ ধরনের সমস্যা হয়েছে।’
দেশের চলচ্চিত্র এমনিতেই মন্দা সময় পার করছে। এরই মাঝে সিনেমা হলের সার্বিক ব্যবস্থাপনা যদি এমন হয়, তাহলে কি হবে? চলচ্চিত্রে সুদিন ফেরার যে কথা বলা হয়, তা কি ফিরবে? এ পরিস্থিতিতে একটি প্রেক্ষাগৃহের পরিবেশের ওপর নির্ভর করছে দর্শকের হলমুখী হওয়ার। শুধু সিনেমা ভালো হলেই কি হবে? প্রেক্ষাগৃহের পরিবেশ যদি অনুন্নত থাকে তবে দর্শক টাকা দিয়ে সিনেমা দেখতে যাবেন কেন?
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ