ঈদ উপলক্ষে সব সময়ই নাটকের নির্মাণ অন্য সময়ের তুলনায় বেশি থাকে। এবারো এর ব্যতিক্রম ছিল না। গত দু’বছর করোনা মহামারির কারণে নাটকের সংখ্যা কম থাকলেও এ বছর আবারো পুরনো রূপ ফিরে পেয়েছে নাট্যাঙ্গন। এবারের ঈদুল ফিতরে টেলিভিশনে প্রচার হয়েছে কয়েকশ নাটক। টেলিভিশন ছাড়াও ইউটিউব চ্যানেল কিংবা ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও ছিল নাটকের বন্যা! অন্যদিকে, টেলিভিশন চ্যানেলের নাটকগুলোও পরবর্তীতে প্রচার হয়েছে ইউটিউবে। বিজ্ঞাপন যন্ত্রণা আর ব্যস্ততার কারণে এবারো টিভিপর্দার বহু দর্শকের চোখ ছিল ইউটিউব কিংবা বিভিন্ন অ্যাপে।
ঈদে প্রচার হওয়া কিছু নাটক আলোচিত কিংবা প্রশংসিত হলেও গুণগত মানে খুব একটা পরিবর্তন ছিল না। কমেডি ধাঁচের নাটকের প্রচার ছিল সবচেয়ে বেশি। চটুল সংলাপে ভরপুর ছিল অধিকাংশ নাটক। কয়েক বছর ধরেই নাটকের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন দর্শকরা। কয়েকজন দর্শকের সঙ্গে শতাব্দীর শোবিজের কথা হলে তারা জানিয়েছে, নাটকের গল্পে বৈচিত্র্য কম। দেখে হয়তো আনন্দ পাওয়া যায়, বিনোদিত হয় দর্শক; কিন্তু দিন শেষে ভালো নাটকের সংখ্যা কমছে। মানুষ এখনো যেমন নব্বই দশকের বিভিন্ন নাটকের কথা মনে রেখেছে, এখনকার নাটকে সেই গল্প বা গুণ নেই।
গল্প কিংবা অভিনয়ই মূলত নাটক-সিনেমার প্রাণ। এই হিসেবে এবার কিছু নাটক বাদে অন্যগুলো হয়তো কালের পরিক্রমায় মনেই থাকবে না দর্শকের! এবার ঈদে যেসব নাটক আলোচনায় ছিল, সেগুলোর মধ্যে ‘সাদা প্রাইভেট’, ‘সুরভী’, ‘মেয়েদের শুক্রবার’, ‘চম্পা হাউজ’, নিঃশব্দের আলো, ‘কিডন্যাপ’, ‘আমার কেরানি বাবা’, ‘ব্যাচেলর রমজান’, ‘ভুলোনা আমায়’, ‘হাঙ্গর’ প্রভৃতি অন্যতম। নাট্যপ্রেমীরা মনে করেন, এবার ঈদে কমেডি বা ভাঁড়ামিপূর্ণ নাটক বেশি দেখছে দর্শক। কিন্তু গল্পনির্ভর, সুঅভিনীত ও সুনির্মিত নাটক কথিত ভিউয়ের দৌড়ে পিছিয়ে ছিল।
নাটকের মান পড়তির পেছনে বেশকিছু কারণকে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের ভাষ্য, ‘সব নাটক যে গুণগত দিক থেকে ভালো হবে এমনটা কখনো হয় না। শতাধিক নাটকের মধ্যে বেশকিছু নাটক হয়তো দর্শকের ভালো লেগেছে। আর এই ভালো লাগার পেছনে রয়েছে নাটকের গল্প আর নির্মাণ শৈলী। এখন ভালো গল্পে নাটক নির্মাণ করতে গেলে বাজেট একটু বেশি লাগে। অভিনয়শিল্পীরাও এখন আর স্বল্প বাজেটে কাজ করতে চান না। তাই নাটকের মান বাড়াতে গেলে গল্প ও বাজেট প্রয়োজন।’
নাটকের মান নিয়ে অনেক দিন ধরেই অসন্তোষ অভিনেত্রী তানিয়া আহমেদ। এক সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ সময়ের নাটকের গল্প দেখলে কাজ করার ইচ্ছা জাগে না। আগে প্রত্যেক নাটকে দর্শক একটা মেসেজ পেত। এখন নাটকের গল্পের শুরু এবং শেষে কী হয় কিছু বোঝা যায় না।’ তিনি আরো বলেন, ‘নায়ক-নায়িকা নির্ভর নাটকে তো প্রেম-ভালোবাসার বাইরে দর্শক নতুন কিছু দেখে না। নাটকে আমাদের একটা ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসা প্রয়োজন। এ নিয়ে নির্মাতাদের ভাবতে হবে। এর জন্য নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পী সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
এদিকে, টেলিভিশনের জন্য যখন নাটক বানানো হতো তখন বাজেট কম ছিল। এরপর স্পন্সর প্রজেক্ট এলে একটু বাড়ল। এখন ইউটিউব ও ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আসায় তুলনামূলক ভালো বাজেট দেয়া হচ্ছে। কিন্তু একটি ভালো প্রডাকশন বানানোর জন্য যে বাজেট দরকার, তা এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে নাটক থেকে আয়ের সূত্র নানা জায়গা থেকে হলেও সেই অনুপাতে নির্মাতারা সম্মানী পাচ্ছেন না। নির্মাতা এস এ হক অলিক বলেন, ‘নাটকের বাজেট একেক সময় একেক রকম হয়ে থাকে। সময়ের প্রেক্ষাপটে বাজেট নির্ধারণ হয়ে থাকে। তবে আমার মতে, একটি নাটক নির্মাণে বাজেট কখনই বেঁধে দেয়া উচিত নয়। ভালো কাজের জন্য ভালো বাজেটই রাখা উচিত। আর এখন ডিজিটাল মাধ্যমেও আয় করা সম্ভব। তাই বাজেট কোনো সমস্যা হওয়ার কারণ নেই। তারপরও অনেকেই কম বাজেটে নাটক করছেন। মানও তেমন ভালো হচ্ছে না। এসব নিয়ে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে।’
নয়া শতাব্দী/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ