চলচ্চিত্র জগতে বিশ্বব্যাপি প্রভাব হলিউডের। তারকা মাত্রই স্বপ্ন থাকে যুক্তরাষ্ট্রের এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে হলিউড সিনেমায় অভিনয় করেছেন নায়লা আজাদ নূপুর। আশির দশকে দেশের বিনোদন অঙ্গনে এই অভিনেত্রীর ছিল নজর কাড়া উপস্থিতি। ১৯৯৮ সালে রবিন পোদ্দার পরিচালিত ‘স্টর্ম ইন দ্য আফটারনুন’ ছবিতে অভিনয় করেন নায়লা আজাদ নূপুর। বর্তমানে এই অভিনেত্রীর মতো কেন্দ্রীয় চরিত্রে আর কারো দেখা না পেলেও হলিউডে কাজ করেছেন বা করছেন বেশ ক’জন বাংলাদেশি। কেউ পরিচালনায়, কেউ ভিএফএক্স, কেউ সম্পাদনায়; আবার কেউ প্রোডাকশনে। ইতোমধ্যে হলিউডে আসন পাকাপোক্ত করেছেন নাফিস বিন জাফর, ওয়াহিদ ইবনে রেজা, আফসারা আলভী, প্রীতম আহমেদ ও রাফায়েল আহসান। এছাড়া শিগগিরই হলিউডে কাজদ্ধ করতে যাচ্ছেন নুহাশ হুমায়ূন।
‘স্টর্ম ইন দ্য আফটারনুন’ সিনেমায় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংঘাতের পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে ধরা পড়া চার ব্যক্তির জীবন-কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। এই সিনেমার চারটি কেন্দ্রীয় চরিত্রের একটিতে অভিনয় করেছেন নায়লা আজাদ নূপুর। ২০০৯ সালে ‘ক্রসিং ওভার’ সিনেমায় অভিনয় করার মাধ্যমে হলিউডে পরিচিতি পান তিনি। ওয়েন ক্র্যামার পরিচালিত এই সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় হলিউড তারকা হ্যারিসন ফোর্ড। আমেরিকায় সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে নির্মিত হয় এটি। এছাড়াও ‘ক্রসিং ওভার’ সিনেমায় যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসে বসবাসরত বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের জীবনযুদ্ধ তুলে ধরা হয়। সিনেমাটিতে একটি বাংলাদেশি পরিবারের কাহিনীও দেখানো হয়। নায়লা আজাদ নূপুর এই বাংলাদেশি পরিবারটির মা রোকেয়া জাহাঙ্গীরের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ‘ক্রসিং ওভার’ সিনেমাটিতে বেশ কিছু বাংলা সংলাপও রয়েছে। সিনেমার পাশাপাশি নায়লা আজাদ নূপুর হলিউডের দুটি টিভি সিরিজে অভিনয় করেছেন। ফক্স টিভির ‘লাই টু মি’ সিরিজে ছোট একটি চরিত্রে দেখা যায় তাকে। নায়লা আজাদ নূপুর স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেও মাঝে মাঝে ছুটিতে দেশে আসতেন এবং ছুটিতে দেশে এসে তিনি বেশ কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। দেশের চলচ্চিত্র জগতেও তার উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। ১৯৮০ সালে ‘ঘুড্ডি’ সিনেমায় অভিনয় করার মাধ্যমে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে নায়লা আজাদ নূপুরের অভিষেক হয়।
প্রথম বাংলাদেশী ব্যক্তি হিসেবে ২০০৭ সালে অস্কার পুরস্কার জেতেন নাফিস বিন জাফর। হলিউডের ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান: অ্যাট ওয়ার্ল্ডস এন্ড’ চলচ্চিত্রে ফ্লুইড অ্যানিমেশনের জন্য সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল বিভাগে ডিজিটাল ডোমেইন নামে ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস ডেভেলপার কোম্পানির হয়ে এ পুরস্কার জেতেন তিনি।
অ্যানিমেশন বিশেষজ্ঞ নাফিসের জন্ম ঢাকায়। ১৯৭৮ সালের ৮ অক্টোবর। তার বাবার নাম জাফর বিন বাশার এবং মায়ের নাম নাফিসা জাফর। তিনি সম্পর্কে বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ও পাপেট নির্মাতা মুস্তফা মনোয়ারের ভাতিজা এবং প্রয়াত কবি ও লেখক গোলাম মোস্তফার নাতি।
হলিউডের ‘স্পাইডারম্যান: নো ওয়ে হোম’ সিনেমার নেপথ্যে যারা কাজ করেছেন তাদের একজন বাংলাদেশের ওয়াহিদ ইবনে রেজা। হলিউডে ভিএফএক্স ও অ্যানিমেশন নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। বিখ্যাত ছবি ‘গার্ডিয়ানস অব দ্য গ্যালাক্সি ভলিউম টু’, ‘ব্যাটম্যান ভার্সেস সুপারম্যান: ডন অব জাস্টিস’ এবং ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা: সিভিল ওয়ার’ ও ‘ডক্টর স্ট্রেঞ্জ’ ছবির ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস টিমে ছিলেন রেজা। একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস বা অস্কারের ৯০তম আসরে ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস বিভাগে অস্কার মনোনয়ন পায় তার কাজ করা ‘গার্ডিয়ানস অব দ্য গ্যালাক্সি ভলিউম-২’ চলচ্চিত্রটি। এর আগেও তার কাজ করা ছবি ‘ডক্টর স্ট্রেইঞ্জ’ অস্কারে মনোনয়ন পেয়েছিল। জনপ্রিয় অ্যানিমেশন ছবি ‘হোটেল ট্রানসিলভানিয়া’র তৃতীয় পর্বে লাইটিং ও কম্পিউটার গ্রাফিক্সেরও কাজ করেছেন রেজা। এখন হলিউডের কয়েকটা প্রজেক্টে কাজ করছেন তিনি।
মিডিয়া আর্টস প্রোডাকশনে লেখাপড়া করা আফসারা আলভী ইন্টার্নি করেছিলেন বিখ্যাত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সনি পিকচার্সে। কাজের শুরুটা এত বড় প্রতিষ্ঠানে হওয়ায় স্বপ্নটাও আকাশসমান বড় হয়ে যায় তার। একে একে কাজ করেছেন ‘ফাদারহুড’ এবং ‘মরবিয়াস’ ছবিতে। এরপর যুক্ত হয়েছেন স্টারওয়ার্সের সিরিজ ‘ওবি ওয়ান কেনবি’তে। এ সিরিজে পোস্ট প্রোডাকশন অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করছেন আলভী।
২০২০ সালের দিকে অভিনয়ে নাম লিখিয়েছেন যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশি গায়ক প্রীতম আহমেদ। তিনি এখন নেটফ্লিক্স, ওয়ার্নার ব্রাদার্স, অ্যামাজন ও সনির মতো আন্তর্জাতিক ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সিনেমা এবং ওয়েব সিরিজে নিয়মিত অভিনয় করছেন। এরইমধ্যে বিশ্ববরেণ্য অভিনেত্রী ক্লেইরি ফয়, এমা স্টোন, এলিজাবেথ ডেভিকি, জেমস বন্ড বা পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ানের স্যার জোনাথন প্রাইস, হ্যারিপটারের ইমেলডা স্টাটান, ডমেনিক ওয়েস্টদের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেছেন প্রীতম।
স্যাম হারগ্রেভ পরিচালিত ‘ঢাকা’ চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন রাফায়েল আহসান। ‘অ্যাভেঞ্জার্স’খ্যাত তারকা ক্রিস হেমসওর্থসহ এ ছবিতে কাজ করেছেন রণদ্বীপ হুদা, ডেভিড হারবার, জো রুশো ও অ্যান্থনি রুশোর মতো শিল্পী ও নির্মাতারা। নেটফ্লিক্সের হয়ে এই টিমে যুক্ত হন বাংলাদেশের রাফায়েল আহসান। ‘ঢাকা’ ছবিতে কোচ হিসেবে ছিলেন তিনি। আবার এ ছবিতে বাংলা সংলাপও তার লেখা।
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ