দীর্ঘদিন ধরেই ঢালিউডে নায়িকা কিংবা কৌতুক অভিনেতার খরা। নেই নতুন মুখ। নায়ক চরিত্রেও চলছে শাকিব খানের একক রাজত্ব। এমন পরিস্থিতিতে ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘শান’ ও ‘বিদ্রোহী’ সিনেমা দুটিতে দেখা যায় ভিলেন চরিত্রে মাতিয়েছেন সেই পুরোনোরাই। মিশা সওদাগর কিংবা ডন।
ঢালিউডের কমার্শিয়াল ছবির ভিলেন কিংবা খল চরিত্রে বর্তমানে এককভাবে রাজত্ব করছেন মিশা সওদাগর। প্রায় এক হাজার ছবিতে অভিনয় করা এই অভিনেতা এখন যেন নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী। অনেক চেষ্টা করেও তার ধারেকাছে আসতে পারছেন না কেউ। যদিও ইন্ডাস্ট্রিতে খল অভিনেতা নেই, এমনটাও নয়। খল চরিত্রে তাসকিন রহমান কিছুটা বাজিমাত করতে পারলেও অন্যদের অভিনয় তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না দর্শকের কাছে। বটবৃক্ষের নিচে যেমন অন্য গাছ বড় হতে পারে না, অন্যসব খল অভিনেতারাও তেমনি। ফলে এখন খল অভিনেতারও একটা সংকট চলছে ঢালিউডে। ১৯৮৬ সালে এফডিসির ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন মিশা সওদাগর। ১৯৯০ সালে প্রথমে ছটকু আহমেদের ‘চেতনা’ ছবিতে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন। এরপর ১৯৯৫ সালে ‘আশা আমার ভালোবাসা’ ছবিতে খল চরিত্রে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন। চরিত্র অনুযায়ী প্রায় সব ধরনের খল অভিনয় করছেন তিনি। কখনো কূটকাচালের সঙ্গে কমেডি, কখনো ব্যক্তিত্বপূর্ণ পদক্ষেপের সঙ্গে মারদাঙ্গা ও হিংস্রতার প্রকাশ, কখনো নিরীহ, গোবেচারার প্রকাশ— যেখানে যে রকম খল হতে হবে সেখানেই মিশা। কিন্তু তার এই দাপট আর কতদিন চলবে? এমন প্রশ্নও অনেকের মনে।
একটা সময় সবাইকেই থামতে হয়। তখন ঢাকাই ছবিতে দর্শক গ্রহণযোগ্য খল হিসেবে হাল ধরবেন কে বা কারা? শিমুল খান, ডিজে সোহেল, শিবা শানু, জিয়া ভিমরুল, টাইগার রবি— তাদেরকে বড়জোর প্রধান খলনায়কের পার্শ্ব খলচরিত্র হওয়ার মতো অভিনয় শিল্পী বলে মনে করেন দর্শক। তাছাড়া নতুনদের কেউ খল অভিনেতা হতেও চাচ্ছেন না। নায়িকাকে পাশে পাবেন বলে সবাই ‘নায়ক’ হতে চান। কিন্তু তারা ভুলে যান, নায়ক-নায়িকা নয়, দর্শকের মনে একজন দক্ষ খল অভিনেতাই গোটা চলচ্চিত্রের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন। একটি সিনেমার ক্লাইমেক্স-অ্যান্টি ক্লাইমেক্সের কেন্দ্রেই থাকেন একজন খল অভিনেতা।
নায়ক-নায়িকা শুধু রোমান্টিকদের জন্য আর খলনায়ক সবার জন্য। প্রথম ঢাকাই সিনেমা ‘মুখ ও মুখোশে’ প্রধান চরিত্রই ছিল খল ইনাম আহমেদ। একটা শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশের মধ্য দিয়ে খল অভিনেতাই একটি সিনেমার সার্থক সমাপ্তি টানেন। অভিনয়ের দিক থেকে খল চরিত্র নায়কের চাইতেও অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। মোট কথা, একটি চলচ্চিত্রে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন একজন দক্ষ খল অভিনেতাই। ঢালিউডের অন্যতম জনপ্রিয় ‘দোস্ত দুশমন’ সিনেমায় খল অভিনেতা জসিম কী রকম একটা ভয়ানক শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশের মধ্য দিয়ে একটি সিনেমার সফল সমাপ্তি টানেন— সে কথা হয়তো অনেক দর্শকই ভুলে যাননি। এরকম অভিনেতা হিসেবে আরো যারা নিজেদের জাত চিনিয়েছেন, তারা হলেন ফতেহ লোহানী, দারাশিকো, খলিল, গোলাম মুস্তাফা, রাজু আহমেদ, এটিএম শামসুজ্জামান, আরিফুল হক, বাবর, আদিল, কায়েস, আহমেদ শরিফ, কেরামত মাওলা, জুবের আলম, রাজিব, রাজ, মেহফুজ, জাম্বু, হুমায়ুন ফরীদি, মিজু আহমেদ, সাদেক বাচ্চু, ডিপজল, ডন, ড্যানি সিডাকসহ আরো অনেকে। নায়কদের মধ্যেও অনেকে খলনায়ক হিসেবে অভিনয় করেন। যেমন- গোলাম মুস্তাফা, খলিল, আলমগীর, ওমর সানী, অমিত হাসান প্রমুখ। চাইলেই কেউ হুট করে খল হতে পারবেন না। আগে তাকে অভিনয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। যেটা গোলাম মুস্তাফা, খলিল, হুমায়ুন ফরিদীর মাঝে দেখা গেছে। ভিলেন হওয়ার আগে তারা অভিনেতা হিসেবেই নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখানে ‘গাইতে গাইতে গায়েন’ হওয়ার মতো ভিলেন হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার সুযোগ কম। নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে দীর্ঘ সময় নেয়া যায়। খলনায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে হলে শুরুতেই বাজিমাত করতে হবে। দক্ষতার অভাবেও খল চরিত্রের সংকট চলছে এখন। অথচ ষাটের শুরু থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত খল চরিত্রের কোনো সংকট ছিল না ঢাকাই সিনেমায়। একই সঙ্গে অনেক খলচরিত্র মিলে একটা বৈচিত্র্যও ছিল।
এখন মিশা ছাড়া উল্লেখযোগ্য খল কোথায়? ডিপজল ছিলেন। অনেকদিন হলো তিনিও খল চরিত্রে নেই। জসিমের মতো চরিত্র বদল করেছেন। তার মানে ঢাকাই সিনেমার খলনায়কের মাঠে বেশ বড়সড় ফাঁকা অবস্থা চলছে। খলনায়কের খোঁজে এখন ঢাকাই সিনেমা। এই সংকট নিরসনের উপায় কী? পরিচালক মালেক আফসারি বলেন, ‘খলনায়কের সংকট কোথায়, ছবিই তো হচ্ছে না। এখন ছবিও নেই, খলনায়কও নেই। সংকট হচ্ছে ফাইন্যান্সারের, প্রডিউসারের।’
বর্তমানে খল অভিনেতা হিসেবেই দেখা যাচ্ছে চিত্রনায়ক হিসেবে পরিচিতি পাওয়া অমিত হাসানকে। ‘বিদ্রোহী’ ছবিতে খল চরিত্রে রয়েছেন তিনি। এক সময়ের এই চিত্রনায়ক বলেন, ‘কারো জন্যই কোনো কিছু থেমে থাকে না। শূন্যস্থান পূরণ হওয়ার মতো অনেক শিল্পী আছেন। এটা ঠিক, আগে একসঙ্গে অনেক খল অভিনেতা ছিলেন। কথায় আছে না, যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ।’
নয়া শতাব্দী/এস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ