ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রডিউসার নামানো নির্মাতা!

প্রকাশনার সময়: ১৯ এপ্রিল ২০২২, ১৬:১৫

একটা সময় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) প্রাঙ্গণ ছিল জমজমাট; সেই অবস্থা এখন আর নেই। চলচ্চিত্রাঙ্গনের জনপ্রিয় মুখদেরও আনাগোনা নেই তেমন। আগের অবস্থা তুলনা করলে অনেক প্রশ্ন উঁকি দেয় মনে। যে এফডিসি ছিল বাংলা চলচ্চিত্রের আঁতুড়ঘর, সেই এফডিসি যেন দিন দিন মরে যাচ্ছে। করোনার কারণে ইন্ডাস্ট্রিতে এমনিতেই কাজ কমে গেছে। ফলে এফডিসি প্রাঙ্গণে গুটিকয়েক চ্যানেলের অনুষ্ঠানের শুটিং আর টিভিসি-ওভিসির শুটিংই চোখে পড়ে এফডিসি ঘুরে এলে। এর মধ্যে রয়েছে চলচ্চিত্র প্রযোজক আর শিল্পীদের বিভিন্ন গ্রুপিং।

রয়েছে সিনেমার নাম ভাঙিয়ে ব্যাংক-ব্যালেন্স বানানোর পাঁয়তারা। এক শ্রেণির পরিচালক রয়েছেন, যারা স্বনামধন্য পরিচালকদের কাজকর্মও ম্লান করে দিচ্ছেন। মূলত তা একটি চক্র, যারা সিনেমা বানানোর জন্য অনুমোদন নেয়; কিন্তু কয়েক দিন শুটিং করেই আটকে যায় সেই সিনেমার কাজ। অনেক সময় সেই সিনেমার খোঁজ-খবরও জানা যায় না, সিনেমাটির কাজ কতদূর বা নির্মিত হওয়া সিনেমাটি আদৌ মুক্তি পাবে কি পাবে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন পরিচালক জানান, বর্তমান এফডিসি আর আগের এফডিসি নেই। এখানে এক শ্রেণির পরিচালক রয়েছেন যাদের মাত্র একটি কিংবা দুটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে; কিন্তু তাদের হাতে রয়েছে আরো বেশকিছু, এগুলো শুধু নামেমাত্র। সিনেমার কাজ সত্যি হয়েছে কি হয়নি, তা তারাও জানেন না। এই চিত্রই এখন বেশি চোখে পড়ে, যাদের কাজ শুধু সিনেমা তৈরির নামে শুধু প্রডিউসার নামানো। আর পকেটে সেই বিগ বাজেটের টাকা ঢুকানো।

সাম্প্রতিক সময়ে এরকম ঘটনা যে হরহামেশাই ঘটছে তা বিভিন্ন পরিচালকের নির্মিত সিনেমার তালিকা দেখেই চোখে পড়ে। এমন অনেক পরিচালক রয়েছেন যারা আজ থেকে আরো এক যুগ একটি কি দুটি সিনেমা মুক্তি দিয়েছে; কিন্তু তাদের হাতে রয়েছে আরো বেশকিছু সিনেমার কাজ। শোনা, কিছু দিনের মধ্যেই সেই সিনেমার কাজ শেষ হবে; কিন্তু এক-দুই বছর পর আর সেই সিনেমার খোঁজ থাকে না। অথচ ঘটা করে এফডিসিতে সেই সিনেমার মহরত হয়েছিল। ঘোষণা করা হয়েছিল ছবির নাম; কিন্তু এক যুগ পার হলেও প্রেক্ষাগৃহে আলোর মুখ দেখেনি আর সিনেমাটি। আর এই সিনেমাগুলো কেন আটকে থাকে, এমন প্রশ্নে অনেক পরিচালকই টেকনিক্যাল সমস্যার দোহাই দেন; কিন্তু বাস্তবে হলো সিনেমার যে বাজেট ছিল তা ওই সিনেমার কাজে ব্যয় না করে অন্যথায় ব্যয় হয়েছে। এছাড়া ইন্ডাস্ট্রিতে সিনেমা নির্মাণ কমে গেলেও দিন দিন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে। আবার জাজ মাল্টিমিডিয়ার মতো অনেক বিগ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হারিয়েও গিয়েছে।

সিনেমা নির্মাণ করতে হলে ভালো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থাকা যেমন জরুরি, তেমন প্রয়োজন রয়েছে সিনেমা বানানোর জন্য উপযুক্ত পরিচালকদের সিনেমায় বাজেট বরাদ্দ দেয়া। নয়তো শুধু সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা আসবে; কিন্তু সেই সিনেমা আর আলোর মুখ দেখবে না। আর এই বিষয়গুলো তদরকি করার মতো প্রতিষ্ঠানও নেই, যেহেতু সিনেমা নির্মাণের বিষয়টি প্রযোজক ও পরিচালক দু’জনের একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। এই সুযোগে এক ধরনের সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে; যারা শুধু প্রযোজকই না, উঠতি অভিনয়শিল্পীদেরও সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ দেয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকেও হাজার বা লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এছাড়া শারীরিক ভোগ-বিলাসের মতো বিষয়ও প্রকাশ্যে চলে আসছে। এ ধরনের বিষয়গুলো এফডিসির অতীতের সুনাম ক্ষণ্ন করছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এসব প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘এ ধরনের কর্মকাণ্ড যে একেবারেই হয় না, তা বলব না। তবে আমরা চাই নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে চলচ্চিত্রের কাজ হোক, প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্র মুক্তি পাক। অহেতুক গুটিকয়েক পরিচালকের জন্য আমরা সবার সুনাম নষ্ট হোক— তা কোনো মতেই চাই না।’ আশি-নব্বই দশকে এফডিসির প্রযোজনায় মুক্তি পেত দেশের সেরা চলচ্চিত্রগুলো।

নির্মাতা আলমগীর কবির, শেখ নিয়ামত আলী, জহির রায়হানদের মতো গুণী পরিচালকদের ছবি নির্মিত হয়েছে এফডিসির প্রযোজনায়। এমনকি এই বিএফডিসি থেকেই সূত্রপাত হতো বিভিন্ন চলচ্চিত্র আন্দোলনের। এখনো অনেক যোগ্য ও মেধাবী নির্মাতা রয়েছেন, যারা বলতে গেলে এফডিসিমুখী হন না। মেধাবী নির্মাতারা এফডিসি বিমুখ হলে স্বাভাবিকভাবেই এ ধরনের চক্র সুযোগ নেবে এবং সেই সুযোগই নিচ্ছে ভণ্ড পরিচালকরা।

নয়া শতাব্দী/এস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ