এবারের ঈদুল আজহায় কালো রঙের পাঞ্জাবি উপহার পেয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী।
আর সেই উপহার পেয়ে আপ্লুত হয়ে অঝোরে কাঁদলেন তিনি।
নিজের ফেসবুক পেজে সে কথা তিনি নিজেই জানিয়েছেন।
ঈদ উপহার পেয়ে এভাবে কেউ কাঁদে? - প্রশ্ন উঠতেই পারে। চঞ্চল জানিয়েছেন, আর সবার চোখে এটি কালো রঙের একটি পাঞ্জাবি হলেও তার কাছে অমূল্য, বিশেষ কিছু। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক আবেগ ও ভালোবাসা এবং বিশেষ এক স্মৃতিও ভেসে উঠেছে হৃদয়ের গহীনে।
পাঞ্জাবিটি চঞ্চলকে উপহার দিয়েছে অভিনয়শিল্পী শাহানাজ খুশির দুই যমজ ছেলে দিব্য ও সৌম্য জ্যোতি।
দিব্য ও সৌম্য দুজনেই চঞ্চল চৌধুরীর চোখের সামনে বেড়ে উঠেছে। তাদের কাছে চঞ্চল পিতৃসমতুল্য। একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পার্টটাইম পড়িয়েই নিজেদের খরচ জোগায় তারা। আর সেই উপার্জন থেকেই চঞ্চল চৌধুরীর জন্য ঈদ উপহার কিনেছে তারা।
এতে নিজের মাকে জড়িয়ে এক সুখময় স্মৃতি মনে পড়ে গেল চঞ্চল চৌধুরীর। সে স্মৃতি রোমন্থনেই কাঁদলেন এ অভিনেতা।
তিনি জানালেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার সময়ে অনেক কষ্ট করে টিউশনির টাকা জমিয়ে মায়ের জন্য সোনার চেইন কিনেছিলেন তিনি। সে উপহার পেয়ে তার মা কতটা খুশি হয়েছিলেন যা মনে পড়লে আজও অঝোরে কাঁদেন। এ কান্না অবশ্য খুশির, আবেগের, ভালোবাসার। মায়ের প্রতি পরম শ্রদ্ধা থেকেই বেরিয়ে আসে তা।
ঘটনার বিবৃতি ফেসবুকে চঞ্চল চৌধুরী লিখেছেন, ‘অধিকাংশ মা–বাবাই সর্বস্ব দিয়ে, সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে সন্তান লালনপালন করেন। সন্তান যেন মানুষের মতো মানুষ হয়ে ওঠে। অবসরজীবনে যেন সন্তানের কাছে একটু আশ্রয় পান। সন্তানের প্রথম উপার্জনের টাকায় কেনা ছোট্ট একটা উপহার স্বর্গীয় সুখ এনে দেয়। কেউ কেউ ভাবছেন, আমার ছেলে শুদ্ধ বোধ হয় প্রথম উপার্জনের টাকায় আমাকে কিছু কিনে দিয়েছে! না, আমার ছেলে শুদ্ধ তো মাত্র ক্লাস ফাইভে। তবে শুদ্ধরই এক বড় ভাই; নাম তার দিব্য জ্যোতি। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র,সেই সাথে নিজেও একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পার্ট টাইম পড়ায়। মাঝে মাঝে অভিনয় করে টেলিভিশন,সিনেমায়,বিজ্ঞাপনে। দিব্য’র একটা জমজ ভাই আছে, নাম তার সৌম্য জ্যোতি। সেও একই কাজ করে। দিব্য সৌম্য’র বাবা নাট্যকার বৃন্দাবন দাস আর মা শাহনাজ খুশী।’
চঞ্চল লিখেছেন, ‘কিছুদিন আগে দিব্য তার উপার্জনের প্রথম টাকায় মাকে শাড়ি,আর বাবাকে মোবাইল ফোন কিনে দিয়েছিল। সৌম্যও তার প্রথম উপার্জনের টাকায় ওর মাকে শাড়ি কিনে দিয়েছিল। যাই হোক,দিব্য এবার ঈদে তার উপার্জনের টাকায় আমাকে একটা পাঞ্জাবি কিনে দিয়েছে। ঈদ উপহার, এটা কোন কথা?আমি আনন্দে কাঁদবো,নাকি কি করব, তখন বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আনন্দটুকু প্রকাশ করতে এখনো আমার চোখটা ভিঁজে উঠছে,আর বুকের ভেতর একটা প্রশান্তি বয়ে যাচ্ছে। এই তো সেদিনের কথা। ছোট্ট ছোট্ট হাত,পা,মুখ নিয়ে কোলে উঠত,আশে পাশে ঘুর ঘুর করতো দিব্য-সৌম্য। দিব্য’র এই উপহার আমার কাছে অনেক অনেক আনন্দের, অনেক ভালোবাসার। দিব্য সৌম্য’র মত হয়তো শুদ্ধও একদিন এমনটাই করবে। আমার মত অনেক বাবা-মা আছেন,যারা কাঙালের মত এই স্বপ্নটাই দেখেন।’
এর পরই স্মৃতিচারণ করেন চঞ্চল চৌধুরী, ‘একটা দিনের কথা খুব মনে পড়ছে। আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র। দিনে দুই-তিনটা টিউশনি করি। আমার মায়ের স্বর্ণের একটা চেইনের খুব শখ ছিল।কিন্তু আমাদের তেমন কোন অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ছিল না। মনে মনে ইচ্ছা ছিল,আমার মায়ের এই শখটা আমি একদিন পূরণ করব। যাই হোক,অনেক কষ্ট করে ,টিউশনির টাকা জমিয়ে, যেদিন মাকে একটা স্বর্নের চেইন কিনে দিয়েছিলাম। আমার মা সেদিন অনেক কেঁদেছিলেন। মায়ের সেই চোখের জল সোনার মতই চিক চিক করছিল। চোখের জলে কত টা আনন্দ লুকিয়ে থাকে,আমি সেদিন দেখেছিলাম।
সকল সন্তানই যেন সকল বাবা মায়ের আশ্রয় হয়ে ওঠে।
সবাইকে ঈদ মুবারক❤️❤️’
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ