ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কী ঘটছে এফডিসিতে!

প্রকাশনার সময়: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০ | আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯:৪৮

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেলেও তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা আছেই! গত ২৮ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে ঘটছে একের পর এক কাণ্ড। নির্বাচনের দিবাগত রাতে ফলাফল ঘোষিত হলে সাধারণ সম্পাদক পদে পুনরায় জয়লাভ করেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান। তবে এই ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী নিপুন। নির্বাচন কমিশনের নামে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলেন তিনি। এই অভিনেত্রীর দাবি— নির্বাচনে টাকা দিয়ে ভোট কিনেছেন বিজয়ী জায়েদ খান। এর আগে ভোট পুনর্গণনার জন্য আপিল করেন নিপুন। তবে এই গণনাতেও জয়ী হন জায়েদ খান। তারপর দিন নির্বাচন-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন করেন কাঞ্চন-নিপুন প্যানেলের সদস্যরা। সেখানে নিপুন দাবি করেন— নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করেছেন জায়েদ খান। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে জয়ী হয়েছেন এই প্রার্থী। পরে আবার প্রমাণাদিসহ আপিল বোর্ডে আবেদন করেন নিপুন। তার আবেদন আমলে নিয়ে নির্বাচনের এক সপ্তাহ পর আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহানের নেতৃত্বে বৈঠকে বসেন আপিল বোর্ডের সদস্যরা। সেখানে জায়েদ খানকে উপস্থিত থাকতে বলা হলেও সেদিন তিনি বৈঠকে আসেননি।

গত ৫ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করে আপিল বোর্ড। নিপুনকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। পরে সোহানুর রহমান সোহান বলেন, ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাদের কাছে জায়েদ খানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এসেছে। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা যথাযথ সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। এই নিয়ে দুইপক্ষকে নিয়েই বৈঠক ডাকা হয়। কিন্তু জায়েদ খান বৈঠকে উপস্থিত হয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার কোনো চেষ্টাও করেননি। সবকিছু বিবেচনা করে জায়েদ খানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ আমাদের কাছে সত্য মনে হয়েছে। সে জন্য তার প্রার্থিতা বাতিল করে নিপুনকে জয়ী ঘোষণা করা হলো।’ সোহানুর রহমান সেদিন জানান, জায়েদ খান ও চুন্নু ছাড়া বাকি সব পদের ফলাফল অপরিবর্তিত থাকবে। চুন্নুর স্থলে কার্যকরী পরিষদের সদস্য পদে থাকছেন নাদির খান।

পরে আপিল বোর্ডের এই সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করেন জায়েদ খান। তার মতে, এই আপিল বোর্ড এরই মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ। জায়েদ বলেন, ‘এই অবৈধ কমিটির ডাকা কোনো মিটিংয়ে আমি অংশগ্রহণ করব না। কারণ নির্বাচনি তফসিলে ২৯ জানুয়ারি বিকেল ৫টার মধ্যে আপিল নিষ্পত্তি করে ৩০ জানুয়ারি চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার কথা উল্লেখ আছে। সে হিসাবে আপিল নিষ্পত্তি হওয়ার পর আপিল বোর্ডের কোনো এখতিয়ার নেই মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়ার। আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান আর মোহাম্মদ হোসেন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার বিরুদ্ধে লেগেছেন।’

এবারের নির্বাচনের দিন শিল্পী সমিতির সদস্যরা ব্যতীত এফডিসিতে থাকা চলচ্চিত্রের অন্য সংগঠনের সদস্যরা প্রবেশ করতে পারেননি। এ নিয়েও পানি কম ঘোলা হয়নি। চলচ্চিত্র সংগঠনগুলোর মতে, এ ধরনের ঘটনা ১৯৮৯ সালে শিল্পী সমিতি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এবারই প্রথম। তবে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ও সাধারণ মানুষ এরই মধ্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন এবারের শিল্পী সমিতি নির্বাচনি কর্মকাণ্ড নিয়ে। একের পর এক ঘটনায় তারা বলছেন, মূলত কী ঘটছে শিল্পী সমিতিতে! এবারের শিল্পী সমিতির ঘটনা তো ইতিহাস!

এরই মধ্যে বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নুজহাত ইয়াসমিনের পদত্যাগ দাবি করেছে চলচ্চিত্রের ১৭ সংগঠন। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা পীরজাদা হারুনের নামেও বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। যদিও তিনি বরাবরই এসব অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করে আসছেন। এমনকি নাটক-চলচ্চিত্র থেকে পীরজাদা হারুনকে আজীবন ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে চলচ্চিত্রের সংগঠনগুলো। তবে সম্প্রতি তিনি অরুণা বিশ্বাসের পরিচালনায় ‘অসম্ভব’ সিনেমার শুটিংয়ে অংশ নেন। পীরজাদা বলেন, ‘কীসের অবাঞ্ছিত, আমি মাত্র শুটিং করে এলাম। আমার মুখে মেকাপ দেয়া আছে। অরুণা বিশ্বাসের পরিচালনায় ‘অসম্ভব’ ছবির শুটিং করেছি। আমি অবাঞ্ছিত হলে শুটিং করতাম কীভাবে?’

তবে ‘সাধারণ সম্পাদক’ পদ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা আদালতে গড়িয়েছে। নির্বাচনে আপিল বোর্ড ঘোষিত সাধারণ সম্পাদক নিপুন আক্তারসহ নব নির্বাচিতরা শপথ গ্রহণের পরই হাইকোর্টে অভিযোগ করেন জায়েদ খান। পরে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে ভোটে জয়ী সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত স্থগিত করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে একটি রুল জারি করে হাইকোর্ট নিপুনের সাধারণ সম্পাদক পদও স্থগিত করেন। উচ্চ আদালতের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে চেম্বার জজের আদালতে যান নিপুন। এরপর সুপ্রিম কোর্ট আজ ১৩ ফেব্রুয়ারি শুনানি না হওয়া পর্যন্ত সমিতির সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে কেউ বসতে পারবে না বলে নির্দেশ দেন।

সম্প্রতি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান কাঞ্চন-নিপুন প্যানেলের সদস্যরা। ওইদিনই সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে নিপুন বসেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে চিত্রনায়ক জায়েদ খান ও চিত্রনায়িকা নিপুন আক্তারের আইনি লড়াইয়ের মাঝেই ঘটেছে আরেক অঘটন। সমিতির কার্যনির্বাহী পদ থেকে পদত্যাগ করেন চিত্রনায়িকা রোজিনা। এবারের নির্বাচনে মিশা-জায়েদ প্যানেল থেকে ১৮৫ ভোট পেয়ে এই পদে বিজয়ী হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে এরই মধ্যে তিনি পদত্যাগ করছেন বলে জানান। নির্বাচনে মিশা-জায়েদ প্যানেল থেকে সহ-সভাপতি পদে জয়ী হওয়া রুবেলও পদত্যাগ করছেন বলে শোনা যাচ্ছে। মূলত কী ঘটছে এফডিসিতে, সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এফডিসির এমন নাটকীয় ঘটনায় বর্ষীয়ান অভিনেতা সোহেল রানার ভাষ্য, ‘ফেসবুকে ছবি-টবি দেখে একটা জিনিস আমার খটকা লেগেছে। এফডিসিতে প্রচুর মানুষ! তাদের অনেককেই আমি চিনতে পারছি না। মনে হচ্ছে, কারওয়ানবাজার এখন এফডিসিতে বসেছে।’

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ